ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের প্রভাব পড়েনি, এপ্রিল মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বেড়েছে পোশাক রপ্তানি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক কার্যকর হওয়ার পর বাংলাদেশের পণ্য, বিশেষ করে তৈরি পোশাকের রপ্তানি কমে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছিল। তবে গত এপ্রিল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শীর্ষ পাঁচ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধিই সবচেয়ে বেশি। এপ্রিল মাসেও রপ্তানি হয়েছে আগের দুই মাসের চেয়ে বেশি।

এই বাজারে গত জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ৪ মাসে বাংলাদেশ থেকে ২৯৮ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেশি। গত জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ৪ মাসে যথাক্রমে ৮০, ৭০, ৭২ ও ৭৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছেন বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বর্তমানে পাঁচ শীর্ষ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হচ্ছে ভিয়েতনাম, চীন, বাংলাদেশ, ভারত ও ইন্দোনেশিয়া। এই ৫ দেশ থেকেই ৬০ শতাংশ পোশাক আমদানি করে থাকে মার্কিন ব্যবসায়ীরা।

ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলসের (অটেক্সা) হালনাগাদ তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম চার মাসে (জানুয়ারি-এপ্রিল) ২ হাজার ৬২২ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক আমদানি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এই আমদানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেশি।

বাণিজ্যঘাটতি কমাতে যুক্তরাষ্ট্র যেসব দেশ থেকে পণ্য আমদানি করে, সেসব দেশের ওপর গত ২ এপ্রিল ন্যূনতম ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক বা রেসিপ্রোক্যাল ট্যারিফ আরোপ করেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ ছাড়া ৫৭ দেশের ওপর বিভিন্ন হারে বাড়তি পাল্টা শুল্ক বসানো হয়। ৯ এপ্রিল পাল্টা শুল্ক কার্যকরের দিন উল্টো ঘুরে তা তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প; যদিও সব দেশের ওপর ন্যূনতম ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কার্যকর করা হয়। এরপর গত মাসে ট্রাম্পের আরোপ করা পাল্টা শুল্ক স্থগিত করেছেন দেশটির একটি ফেডারেল আদালত।

দীর্ঘদিন তৈরি পোশাক রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীন শীর্ষস্থান দখল করে রাখলেও এখন স্থানটি ভিয়েতনামের দখলে। চলতি বছরের প্রথম ৪ মাসে ৫০৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে দেশটি। এই রপ্তানি গত বছরের প্রথম চার মাসের তুলনায় ১৬ শতাংশ বেশি।

এদিকে চীন গত জানুয়ারি-এপ্রিল সময়ে রপ্তানি করেছে ৪৩৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক। তাদের এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় মাত্র দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি। মূলত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে শুরু হওয়া বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে বাজারটিতে চীনের তৈরি পোশাক রপ্তানি কমছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভারত চতুর্থ শীর্ষ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভারতের রপ্তানি দ্রুত বাড়ছে। চলতি বছরের প্রথম ৪ মাসে ২০০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছেন ভারতের উদ্যোক্তারা। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি।

অন্যদিকে পঞ্চম শীর্ষ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ ইন্দোনেশিয়ার প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ দশমিক ৬১ শতাংশ। চলতি বছরের প্রথম চার মাসে দেশটি ১৬০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে যুক্তরাষ্ট্রে। গত বছরের একই সময়ে তাদের রপ্তানি ছিল ১৩৮ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক।

এখন পর্যন্ত তৈরি পোশাক রপ্তানিতে উচ্চ প্রবৃদ্ধি থাকলেও বাংলাদেশের একাধিক রপ্তানিকারক বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আরোপ করা ন্যূনতম ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্কের প্রভাব বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের ওপর পড়তে শুরু করেছে। অনেক মার্কিন ক্রেতা প্রতিষ্ঠান বাড়তি শুল্কের অর্ধেকটা রপ্তানিকারকদের কাছ থেকে কেটে নিচ্ছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্কের পুরোটা নেওয়ার ঘটনাও আছে।

রপ্তানিকারকেরা আরও বলছেন, পাল্টা শুল্ক কমিয়ে আনতে ভিয়েতনাম, ভারতসহ বিভিন্ন দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আগামী মাসের মধ্যে তারা মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন করে ফেলতে পারে। সেটি হলে তারা এগিয়ে যাবে। কারণ, এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের দর-কষাকষিতে দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই।