এশিয়ায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা ভালো: বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর

এশিয়ার যেকোনো দেশের তুলনায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা অনেক ভালো বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্বব্যাংকের নবনিযুক্ত বাংলাদেশের প্রধান (কান্ট্রি ডিরেক্টর) আবদুলায়ে সেক। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে আজ মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন আবদুলায়ে সেক। বৈঠকে গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়নি। বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী বা বিশ্বব্যাংকের প্রধান ব্রিফও করেননি। ফলে প্রকৃতপক্ষে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর কী বলেছেন, তা জানা সম্ভব হয়নি।

বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে অর্থ মন্ত্রণালয় একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠায়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে পরিবেশ পুনরুদ্ধার, ঢাকা শহরের চারপাশের নদীগুলোর নাব্যতা নিশ্চিত করা ও ঢাকার সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে ‘বিউটিফিকেশন অব ঢাকা’ বা ‘ঢাকার সৌন্দর্যবর্ধন’ শীর্ষক প্রকল্পের অগ্রগতি আর জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিষয়ে বাংলাদেশের ঝুঁকি ও পদক্ষেপ সম্পর্কে আলোচনা হয়।

বলা হয়, অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠককালে বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানের প্রধান আবদুলায়ে সেক বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রশংসা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশের বিভিন্ন সময়োচিত পদক্ষেপেরও প্রশংসা করেন তিনি।

বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, আবদুলায়ে সেক আরও বলেছেন, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি, দারিদ্র্যহার কমিয়ে আনা, নারীর ক্ষমতায়ন, জলবায়ু অভিযোজনসহ বিভিন্ন দিক থেকে বাংলাদেশ সত্যিকারের বৈশ্বিক চ্যাম্পিয়ন।

তবে অর্থনৈতিক সক্ষমতা কতটা ভালো এবং কীভাবে ভালো, তার ব্যাখ্যা নেই বিজ্ঞপ্তিতে। এদিকে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ নিতে হচ্ছে, যা পাওয়া যাবে আগামী সাড়ে তিন বছর ধরে সাত কিস্তিতে।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বৈঠককালে বিশ্বব্যাংককে বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে অভিহিত করেন এবং বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের অবস্থান দৃশ্যমান করতে আবদুলায়ে সেককে কিছু আইকনিক প্রকল্প গ্রহণের অনুরোধ করেন। বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলা হয়।

আরও বলা হয়, অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বিশ্বব্যাংকের জন্য বাংলাদেশে কাজ করার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ খাত আছে। সংস্থাটি বাংলাদেশের নদীপথ ও নদীকেন্দ্রিক অর্থনীতি নিয়ে কাজ করতে পারে। তা ছাড়া বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম হাতিয়ার যুবশক্তি, তাদের জন্য বিশ্বব্যাংক বিশেষ পদক্ষেপ নিতে পারে।

বিশ্ব অর্থনীতির কঠিন চ্যালেঞ্জের বছরেও বাংলাদেশের জিডিপির আকার অনেক বেড়েছে বলে বিশ্বব্যাংকের এদেশীয় প্রধানকে জানান অর্থমন্ত্রী। অর্থনীতির আকার নিয়ে কানাডার একটি প্রকাশনা সংস্থার তথ্য এবং বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের একটি মন্তব্যও অর্থমন্ত্রী তাঁর কাছে তুলে ধরেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্প্রতি কানাডার অনলাইন প্রকাশনা সংস্থা ভিজ্যুয়াল ক্যাপিটালিস্ট বলেছে, বিশ্বের ৩৫তম অর্থনীতির দেশ এখন বাংলাদেশ। আইএমএফের পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে তারা এ কথা বলেছে। আবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ‘একটি অসাধারণ গল্প’।

বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে ভিজ্যুয়াল ক্যাপিটালিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈশ্বিক জিডিপির তালিকা অনুযায়ী, বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থান ৩৫তম। বলা হয়, বাংলাদেশের জিডিপির আকার ৪৬০ বিলিয়ন ডলার বা ৪৬ হাজার কোটি ডলার। বাংলাদেশের আগে আছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিসর ও অস্ট্রিয়া। তারপর আছে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ভিয়েতনাম।

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরানসহ বিভিন্ন দেশের ১০ জন রাষ্ট্রদূত হোয়াইট হাউসে সম্প্রতি পরিচয়পত্র পেশ করেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দেশটিতে নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূতদের পরিচয়পত্র ব্যক্তিগতভাবে গ্রহণ করেন। এ সময় তিনি গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ‘একটি অসাধারণ গল্প’ হিসেবে উল্লেখ করেন।

জো বাইডেন তখন বলেন, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ, জলবায়ু পরিবর্তন, মানবিক, উদ্বাস্তু, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা, সন্ত্রাস দমন, সমুদ্রসহ অন্যান্য নিরাপত্তা ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এ ছাড়া গত ৫০ বছরে বাংলাদেশ বৃহত্তর কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি থেকে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়েছে।