ক্রেতাদের ভিড়, ভালো বিক্রির প্রত্যাশা বিক্রেতাদের

রাজধানীতে গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে জাতীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) পণ্য মেলা। শেরেবাংলা নগরের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ মেলা চলছে। মেলার শুরুতেই শুক্র ও শনিবার থাকায় ক্রেতাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। আর করোনার ধাক্কা কাটিয়ে মেলায় এসএমই উদ্যোক্তারাও জানিয়েছেন তাঁদের সরব উপস্থিতি।

১০ দিনব্যাপী এই মেলা চলবে আগামী ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এ বছর মেলা উদ্বোধন করেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পাঁচটি ক্যাটাগরিতে ছয়জনকে জাতীয় এসএমই উদ্যোক্তা পুরস্কার দেওয়া হয়।

এবারের মেলায় দেশের ৩২৫টি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান ৩৫১টি স্টলে তাদের উৎপাদিত পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রি করছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আছে ফ্যাশনশিল্পের প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া খাদ্য ও কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ পণ্য, হস্ত ও কারুশিল্প, চামড়া ও পাটজাত পণ্য, প্লাস্টিক, ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিকস ও হালকা শিল্পপণ্য ও তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য ও সেবা খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশ নিচ্ছে।

মেলায় ঘুরতে এসেছিলেন সরকারি একটি প্রকল্পের কর্মকর্তা কামাল হোসাইন সৈকত। তিনি বলেন, ‘এসএমই মেলায় দেশীয় উদ্যোক্তাদের তৈরি বিভিন্ন ধরনের পণ্য এক স্থানে পাওয়া যায়, সে জন্য প্রতিবছরই এই মেলায় আসি। এবারেও পছন্দের কিছু পণ্য কিনব মেলা থেকে।’

পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে ঢাকায় বেড়াতে এসেছেন শুভ্রা গুহ। ঢাকার বন্ধুর সঙ্গে তিনিও ঘুরতে আসেন এসএমই মেলায়। প্রথম আলোকে শুভ্রা বলেন, ‘বাংলাদেশে এই প্রথমবার কোনো মেলায় এলাম। অনেকটা আমাদের কলকাতার মতোই যেন সবকিছু, তবে বেশ কিছু ভিন্ন ও নতুন ধরনের পণ্যও দেখতে পেলাম।’

সিলেট থেকে ঢাকায় বেড়াতে এসেছেন একটি বেসরকারি সংস্থার সাবেক কর্মী মো. নজির হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমি ভাতিজি ও বোনের জন্য পোশাক কিনেছি, এখন ভাগনির জন্য একটি জামা কিনব, সেটা খুঁজছি।’

মেলায় অংশ নেওয়া বিক্রেতারাও এবার ভালো বিক্রির আশা করছেন, যদিও তাঁদের চিন্তায় বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটের বিষয়টিও আছে। সারা বুটিক হাউসের স্বত্বাধিকারী এলিনা জাহান বলেন, ‘এ বছর ক্রেতাদের অংশগ্রহণ আগের তুলনায় কিছুটা বেশি। ইতিমধ্যে আমরা স্থানীয় পাইকারি বিক্রেতাদের থেকে বেশ কিছু পণ্যের জন্য ক্রয়াদেশ পেয়েছি।’

তবে মেলায় ক্রেতাদের উপস্থিত থাকলেও তা আশানুরূপ নয় বলে জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন উদ্যোক্তা। এর কারণ হিসাবে তাঁরা বলছেন, বছরের শেষ সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা চলছে। এ কারণে অনেক অভিভাবক তাঁদের সন্তানদের কথা ভেবে মেলায় আসছেন না। আবার অনেক মানুষ অর্থনৈতিক চাপের মধ্যে থাকায় আসছেন না; কিংবা আসলেও কম কিনছেন।

উদ্যোক্তাদের একত্র করতে সারা দেশে বেশ কিছু এলাকাকে ‘ক্লাস্টার’ ধরে সহযোগিতা করে আসছে এসএমই ফাউন্ডেশন। এ রকম বেশ কয়েকটি ক্লাস্টার থেকে উদ্যোক্তারা মেলায় অংশ নিয়েছেন, তাঁদের জন্য এই প্রথম মেলায় আলাদা স্টল রাখা হয়েছে।
মেলায় অংশ নেওয়া ভাকুর্তা গয়না ক্লাস্টারের দুলাল রাজবংশী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এসএমই মেলায় ক্রেতাদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছি। গত শুক্র ও শনিবার আমাদের প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকার গয়না বিক্রি হয়েছে।’

মেলার বিষয়ে এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মো. মাসুদুর রহমান বলেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের তৈরি পণ্যের বৈচিত্র্য ও গুণগত মান ক্রেতা-নীতিনির্ধারকদের সামনে তুলে ধরতে এসএমই মেলার আয়োজন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে উদ্যোক্তারা লোকজ ঐতিহ্য তুলে ধরার সুযোগও পাচ্ছেন। পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের জন্য বিভিন্ন নীতি সহায়তা নিয়ে বেশ কয়েকটি সেমিনারেরও আয়োজন করা হয়েছে।

এসএমই উদ্যোক্তাদের পণ্যের প্রচার ও প্রসারে ২০১২ সাল থেকে জাতীয় এসএমই পণ্য মেলা আয়োজন করছে এসএমই ফাউন্ডেশন। এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ৯টি এসএমই পণ্য মেলায় প্রায় দুই হাজার ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা অংশ নিয়েছেন। জাতীয় পর্যায়ে মেলার পাশাপাশি বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়েও এসএমই পণ্য মেলা আয়োজন করা হয়।