ভারত থেকে পেঁয়াজ ও চিনি আনতে চায় বাংলাদেশ

নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ভারতের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ দুটি পণ্য আমদানির বিষয়ে যোগাযোগ রাখতে বলা হয়েছে।

চিনি ও পেঁয়াজ

দেশে লম্বা সময় ধরেই প্রতি কেজি চিনির দাম ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা। আর বাজারে নতুন পেঁয়াজ উঠলেও এখনো তা ৮৫ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আমদানি করা পেঁয়াজের দাম আরও বেশি। সেই পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ তথ্য সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি)। 

পবিত্র রমজান মাস শুরু হতে আর দেড় মাস বাকি আছে। এ রকম অবস্থায় প্রতিবছর রমজান মাসের আগে বাজারে হয়তো পণ্যের প্রকৃত সরবরাহ-সংকট দেখা দেয়, নয়তো একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়িয়ে দেন। সে জন্য সরকার এবার আগেভাগেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে। বাজারে চিনি ও পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ভারতের সাহায্য চেয়েছে সরকার। 

জানা গেছে, এ ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনে গত রোববার চিঠি পাঠিয়েছে। কারণ, চিনি ও পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে ভারত সরকারের। তারপরও দেশটি থেকে ৫০ হাজার টন চিনি এবং ২০ হাজার টন পেঁয়াজ বাংলাদেশে রপ্তানি করবে বলে দেশটি ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়েছে। 

ভারত থেকে বাংলাদেশে চিনি ও পেঁয়াজ আসবে। নিষেধাজ্ঞা থাকলেও আমাদের জন্য তারা তা শিথিল করছে। আশা করছি, পবিত্র রমজান শুরু হওয়ার অনেক আগেই পণ্য আসবে। ভারতের মন্ত্রী পীযূষ গয়ালের সঙ্গে আলোচনার পর আমরা এ ব্যাপারে আশ্বস্ত হয়েছি। 
আহসানুল ইসলাম, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী। 

ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প, বস্ত্র ও ভোগ্যপণ্য এবং খাদ্য ও গণবিতরণবিষয়ক মন্ত্রী পীযূষ গয়ালের সঙ্গে ২৪ জানুয়ারি বাংলাদেশের বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলামের টেলিফোনে আলাপ হয়। এ সময় আহসানুল ইসলাম ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রীকে ১ লাখ টন চিনি ও ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ সরবরাহের পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানান। তবে বাংলাদেশের বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীকে ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী ৫০ হাজার টন চিনি ও ২০ হাজার টন পেঁয়াজ সরবরাহ নিশ্চিত করতে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন। 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ভারত থেকে চাল, গম, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, চিনি ও মসুর ডাল—সাতটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে বার্ষিক কোটা (নির্ধারিত পরিমাণ) পাওয়ার ব্যাপারে এক বছরের বেশি সময় ধরে আলোচনা চলছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত বাণিজ্যমন্ত্রী পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশের তৎকালীন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি প্রথম নিত্যপণ্যে কোটা চেয়ে প্রস্তাব দেন। 

এরপর বহুবার চিঠি-চালাচালি করে অবশেষে বাংলাদেশ চাল ১৫ লাখ ৫০ হাজার টন, গম ২৬ লাখ টন, চিনি ১০ লাখ টন, পেঁয়াজ ৮ লাখ টন, আদা ৫০ হাজার টন, রসুন ৭০ হাজার টন এবং মসুর ডাল ১ লাখ টনের কোটা চাহিদা পাঠায় ভারতে। কিন্তু বিষয়টি এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। 

নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোস্তাফিজুর রহমানকে পাঠানো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘ভারতের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগের মাধ্যমে আসন্ন রমজান মাস উপলক্ষে চাহিত চিনি ও পেঁয়াজ সরবরাহের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’ 

বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম গত সোমবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভারত থেকে চিনি ও পেঁয়াজ বাংলাদেশে আসবে। নিষেধাজ্ঞা থাকলেও আমাদের জন্য তারা তা শিথিল করছে। আশা করছি পবিত্র রমজান শুরু হওয়ার অনেক আগেই পণ্য আসবে। ভারতের মন্ত্রী পীযূষ গয়ালের সঙ্গে আলোচনার পর আমরা এ ব্যাপারে আশ্বস্ত হয়েছি। রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও নেপালে ২৫ হাজার চিনি রপ্তানি করেছে ভারত, আলোচনার সময় এ উদাহরণের কথা আমি উল্লেখ করেছি।’