প্রচণ্ড গরমে বেড়েছে এসি বিক্রি, সহজে মিলছে না বসানোর লোক

এসি
ছবি: প্রথম আলো

কয়েক দিন ধরেই ঢাকাসহ দেশের বড় অংশজুড়ে প্রচণ্ড গরম অনুভূত হচ্ছে। বয়ে যাচ্ছে দাবদাহ। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, ৫৮ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গরম অনুভূত হচ্ছে রাজধানীতে। আর এই প্রচণ্ড গরমে বেড়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ (এসি) যন্ত্রের বিক্রি।

রাজধানীর কাজীপাড়া এলাকার বাসিন্দা ও একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী রফিকুল আমিন গত শুক্রবার একটি দেড় টন ক্ষমতার এসি কিনেছেন। তিনি বলেন, এখন যতটা গরম পড়েছে, তাতে আর স্বাভাবিকভাবে থাকার উপায় নেই। এমনিতে নগদ টাকায় এসি কেনার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু বেশি গরমের কারণে আর অপেক্ষা না করে কিস্তিতেই একটা এসি কিনে ফেলেছি।    

উৎপাদনকারী ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো জানিয়েছে, বছরে সাধারণত ৫ থেকে ৬ লাখ (ইউনিট) এসি বিক্রি হয়। বাসাবাড়িতে এক টন থেকে দুই টন ক্ষমতার এসির চাহিদা বেশি। এর মধ্যে সর্বোচ্চ চাহিদা দেড় টন ক্ষমতার এসির। স্বাভাবিকভাবে গরমের সময় এসি বিক্রি বাড়ে। কিন্তু গত কয়েক দিনের দাবদাহে মানুষ এসি কেনার প্রতি অনেক বেশি ঝুঁকেছেন।

সাধারণত কোনো এলাকার তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে সেখানে মৃদু দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে বলে ধরা হয়। তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে সেখানে মাঝারি দাবদাহ এবং ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠলে তীব্র দাবদাহ চলছে বলে ধরা হয়।

ট্রান্সকম ইলেকট্রনিকসের উত্তরা ১৪ সেক্টরের গাউসুল আজম অ্যাভিনিউ শাখার ব্যবস্থাপক শরীফ সরকার বলেন, ‘অন্য সময়ে গরমকালে আমাদের দৈনিক দুই–তিনটা করে এসি বিক্রি হতো। কিন্তু এক সপ্তাহ ধরে দিনে ১৫–২০টা করে এসি বিক্রি হচ্ছে। গতকাল শনিবার সবচেয়ে বেশি ২৫টি এসি বিক্রি হয়েছে।’  

তবে অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে এসি কিনলেও তা ইনস্টেলেশন বা বসাতে এখন খানিকটা বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে গ্রাহকদের।

ধানমন্ডি এলাকার বাসিন্দা আমজাদ হোসেন বলেন, ‘গতকাল সকালে একটি ব্র্যান্ডের বিক্রয়কেন্দ্র থেকে একটি এসি কিনেছিলাম। আজ দুপুর পর্যন্ত এখনো সেটি ইনস্টল করতে পারিনি। বিক্রয়কেন্দ্র থেকে আমাদের বলা হয়েছে, ‘যে পরিমাণে এসি বিক্রি হয়েছে, তার তুলনায় তাদের টেকনিশিয়ান কম রয়েছে। যেহেতু তারা পর্যায়ক্রমে কাজ করছেন, তাই একটু অপেক্ষা করতে হবে।’ 

দেশে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বা এয়ার কন্ডিশনারের চাহিদা প্রতিবছরই বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে এর উৎপাদন। এসির দাম মধ্যবিত্তের নাগালে আসায় এই যন্ত্রের বাজারও বড় হচ্ছে।

বছর দশেক আগেও দেশের এসির বাজার ছিল উচ্চবিত্তকেন্দ্রিক। কিন্তু এখন পরিস্থিতি পাল্টেছে। এসির চাহিদার প্রায় পুরোটাই দেশে উৎপাদিত হচ্ছে। বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোও বাংলাদেশে এসি উৎপাদনের জন্য কারখানা স্থাপন করেছে।

দেশের সব জায়গায় বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। বিদ্যুৎসাশ্রয়ী প্রযুক্তির ইনভার্টার এসি বাজারে এসেছে। পাশাপাশি কিস্তি সুবিধা থাকায় ক্রেতাদের মধ্যে এসি কেনায় আগ্রহও বাড়ছে।

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এসির বাজারের প্রবৃদ্ধি এখন ১৫ থেকে ২০ শতাংশ, যা ভবিষ্যতে আরও বাড়তে পারে। প্রতিবছর বার্ষিক প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকার এসি বিক্রি হয়। আগামী দুই থেকে তিন বছরে তা ১০ হাজার কোটি টাকা ছাড়াবে বলে প্রত্যাশা।