দাম কমেনি আলু পেঁয়াজ ডিমের, ক্ষুব্ধ ক্রেতা–বিক্রেতা

সরকারিভাবে আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের দাম বেঁধে দেওয়াকে অনেক ব্যবসায়ী ‘সমস্যার গোড়ায় হাত না দিয়ে আগা ধরে টানাটানি’ বলে অভিহিত করেছেন।

রাজধানীর পলাশী বাজারে গতকাল শনিবার দুপুরে ডিমের দরদাম করছিলেন সোহানুর রহমান। প্রতি ডজন ডিমের দাম ১৫০ টাকা চাওয়া হলে তিনি বিক্রেতাকে বোঝাতে চেষ্টা করেন, সরকার প্রতিটি ডিমের দাম ১২ টাকায় বেঁধে দিয়েছে, তাই তিনি কেন সাড়ে ১২ টাকা দেবেন। বিবাদের মীমাংসা হলো না; বরং সোহানুর রহমানকে ১৫০ টাকা দিয়েই এক ডজন ডিম কিনতে হলো। মন্তব্য জানতে চাইলে বিরক্তি প্রকাশ করে শুধু এটুকু বললেন, ‘বাজারে আসলে মাথা গরম হয়ে যায়।’

বিক্রেতা আবদুল খালেক কেন সরকার নির্ধারিত দামে ডিম বিক্রি করলেন না, সেই ব্যাখ্যা জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল তেজগাঁও ডিমের আড়ত থেকে প্রতি শ ডিম কিনেছি ১ হাজার ১৪০ টাকায়। প্রতি ডিমের পাইকারি দাম পড়েছে ১১ টাকা ৪০ পয়সা। এর সঙ্গে গাড়িভাড়া যোগ হবে। ডিম নষ্ট থাকে, ভেঙে যায়, সেই খরচও ধরতে হবে। দোকানভাড়া, বিদ্যুৎ বিল ও ডিমের প্যাকেজিং খরচও আছে। সব মিলিয়ে প্রতি ডিমে খরচ আসে ১২ টাকার ওপর।’

খামারিদের উৎপাদন খরচ কমানোর ব্যবস্থা না করে এভাবে ডিমের দাম বেঁধে দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণের কোনো মানে হয় না।
মোহাম্মদ আমানত উল্লাহ, সভাপতি, তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতি

আবদুল খালেকের যুক্তি, সরকার যে দাম ঠিক করেছে, সেই দামে ডিম বিক্রি করতে গেলে লোকসান করতে হবে। পাইকারি বাজারে ডিমের দাম কমলে তখন কম রাখা সম্ভব হবে।

সরকার অন্য আরও দুটি পণ্যের দাম বেঁধে দিয়েছে—পেঁয়াজ ও আলু। এ দুটি পণ্যও সরকার নির্ধারিত দামে পাওয়া যাচ্ছে না। গতকাল পলাশী বাজার, নিউমার্কেট কাঁচাবাজার, হাতিরপুল বাজার ও কাঁঠালবাগান বাজার ঘুরে এই চিত্র পাওয়া গেছে। খুচরায় প্রতি কেজি আলুর সরকার নির্ধারিত দাম ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা। কিন্তু বাজারে ৫০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। অর্থাৎ এক কেজি আলুতে অন্তত ১৪ টাকা বেশি দিতে হচ্ছে।

দেশি পেঁয়াজের সরকার নির্ধারিত দাম ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা কেজি। তবে খুচরা বাজারে এখন বিক্রি হচ্ছে ৮৫ থেকে ৯০ টাকা। অর্থাৎ বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে ২০ থেকে ২৫ টাকা বেশি। আর আমদানি করা পেঁয়াজের খুচরা দাম পড়ছে মানভেদে ৬০ থেকে ৭০ টাকা।

পুরান ঢাকার শ্যামবাজারের আমদানিকারক ও পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মো. আবদুল মাজেদ প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের ঘোষণার কিছুটা প্রভাব হয়তো পরে বাজারে পড়বে। তবে পেঁয়াজের দামের এখন যে অবস্থা, তার থেকে খুব বেশি কমবে বলে মনে হয় না।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার পাশাপাশি বাজারে অভিযান হচ্ছে। এতে খুচরা ব্যবসায়ীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। অনেক ব্যবসায়ী এটাকে ‘সমস্যার গোড়ায় হাত না দিয়ে আগা ধরে টানাটানি’ বলে অভিহিত করেছেন। তাঁদের মতে, সরবরাহব্যবস্থার ওপরের দিকে দাম না কমালে খুচরা বাজারে দাম কমানো সম্ভব নয়। প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপের সময় অনেক ক্রেতাও একই সুরে মন্তব্য করেছেন।

তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আমানত উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, খামারিদের উৎপাদন খরচ কমানোর ব্যবস্থা না করে এভাবে ডিমের দাম বেঁধে দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণের কোনো মানে হয় না।

প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, সরকারের বেঁধে দেওয়া ডিমের দাম শুধু কাগজে-কলমে থাকবে; বরং মুরগির খাবারের দাম কমানো ও এক দিন বয়সী মুরগির বাচ্চার বাজার স্থিতিশীল করার পরামর্শ দিয়েছে সংগঠনটি।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে ডিম, আলু ও দেশি পেঁয়াজের দাম বেঁধে দেন। এর আগে কৃষিপণ্যের মূল্য পর্যালোচনা-সংক্রান্ত এক সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সরকারের বেঁধে দেওয়া দাম তদারকিতে গত শুক্রবার থেকে বাজার অভিযানে নামে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সংস্থাটি গত দুই দিনে সারা দেশে অভিযান চালিয়ে ২৩৪টি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করেছে। তবে বাজারে দাম কমার লক্ষণ নেই।