পেনশনের চাঁদার বিপরীতেও প্রণোদনা পাবেন প্রবাসীরা

পেনশন
প্রতীকী ছবি

প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ‘প্রবাস’ নামে যে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করা হয়েছে, তাতে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যাবে। চাঁদার বিপরীতে ২ দশমিক ৫ শতাংশ হারে প্রণোদনা মিলবে। তবে প্রণোদনার অর্থ পেনশন হিসাবে জমা হবে না। তা জমা হবে চাঁদাদাতার ব্যাংক হিসাবে। কিংবা চাঁদাদাতা যাঁকে টাকা তোলার অনুমতি দেবেন, তিনিও প্রণোদনার অর্থ তুলতে পারবেন। জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

১৭ আগস্ট সর্বজনীন পেনশন স্কিম উদ্বোধনের দিন যেমন বলা হয়নি, তেমনি তার আগে ১৩ আগস্ট জারি করা সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালায়ও উল্লেখ করা হয়নি যে প্রবাসী বাংলাদেশিরা চাঁদার বিপরীতে প্রণোদনা পাবেন।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ ও জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ গত সোমবার বৈঠক করে প্রবাস স্কিমে প্রণোদনা দেওয়ার নতুন সিদ্ধান্ত নেয়। বৈঠক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সম্মতি চাইলে তিনিও এ ব্যাপারে ইতিবাচক মত দেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে এ তথ্য জানায়।

প্রবাসী আয়ের (রেমিট্যান্স) বিপরীতে বর্তমানে ২ দশমিক ৫ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়া হয়। জানা গেছে, একইভাবে ‘প্রবাস’ নামের পেনশন স্কিমের চাঁদার বিপরীতে প্রণোদনা দেওয়ার আলোচনাও ছিল। কিন্তু সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালা করার আগে হঠাৎ বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তা এ বিষয়ে অর্থ বিভাগকে ভুল বোঝান। তাঁরা জানান, পেনশন স্কিমে চাঁদা দেওয়া মানে বিনিয়োগ এবং এর বিপরীতে প্রবাসী চাঁদাদাতাদের প্রণোদনা দেওয়ার সুযোগ নেই। এরপর বিধিমালায় প্রবাসীদের প্রণোদনা দেওয়ার সুযোগটি আর রাখা হয়নি।

জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা ও সমতা নামক চারটি আলাদা পেনশন স্কিম চালু করার পর থেকে প্রবাস স্কিমেই সাড়া কম পাওয়া যাচ্ছিল। চার স্কিম মিলে শুরুর দিন থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ৮ হাজার ২৩১ জন চাঁদা দিয়েছেন। এর মধ্যে প্রগতি স্কিমে ৪ হাজার ৩৭১, সুরক্ষায় ২ হাজার ৭৪১, সমতায় ৯১০ এবং প্রবাসে ২০৯ জন চাঁদা দিয়েছেন।

কেউ প্রবাসী আয় দেশে পাঠালে ২ দশমিক ৫ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেয় সরকার। পেনশন স্কিমের চাঁদার বিপরীতেও মিলবে এ সুবিধা। এ প্রণোদনা চাঁদাদাতার পেনশন হিসাবে যাবে না।
মো. গোলাম মোস্তফা, সদস্য, জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ।  

প্রবাস স্কিমকে কেন্দ্র করে সরকার যে রেমিট্যান্স আশা করছিল, তা হচ্ছিল না বলে নতুন সিদ্ধান্ত নিতে বৈঠকে বসে পেনশন কর্তৃপক্ষ ও অর্থ বিভাগ। এ বৈঠক থেকে সিদ্ধান্ত আসে বাংলাদেশ ব্যাংকের আগের ব্যাখ্যাটি ভুল ছিল। প্রবাস স্কিমের চাঁদার বিপরীতে প্রণোদনা দেওয়া যাবে এবং এতে আইনি ঝামেলা হবে না।

জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য মো. গোলাম মোস্তফা গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘কেউ প্রবাসী আয় দেশে পাঠালে ২ দশমিক ৫ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেয় সরকার। পেনশন স্কিমের চাঁদার বিপরীতেও মিলবে এ সুবিধা। এ প্রণোদনা চাঁদাদাতার পেনশন হিসাবে যাবে না।’

আরও পড়ুন

দেড় কোটি প্রবাসীর জন্য সুযোগ

বাংলাদেশের কত মানুষ বিদেশে বসবাস করেন, তার হালনাগাদ কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে গত জুলাইয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে জানান, ১৭৬টি দেশে ১ কোটি ৪৯ লাখের অধিক বাংলাদেশি রয়েছেন।

বিধিমালা অনুযায়ী প্রবাস স্কিমেই সবচেয়ে বেশি সুবিধার কথা উল্লেখ রয়েছে। এ স্কিমে মাসিক চাঁদার হার ৫ হাজার, ৭ হাজার ৫০০ ও ১০ হাজার টাকা। সবচেয়ে বেশি পেনশন পাওয়া যাবে কেউ ১৮ বছর বয়স থেকে শুরু করলে। আর সবচেয়ে কম পেনশন মিলবে ৫০ বছর বয়স থেকে চাঁদা দেওয়া শুরু করলে।

আরও পড়ুন

১৮ বছর বয়স থেকে কেউ মাসে ১০ হাজার টাকা করে ৪২ বছর চাঁদা দিলে ৬০ বছর বয়স থেকে মাসে পেনশন মিলবে ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৬৫৫ টাকা করে। একইভাবে ৭ হাজার ৫০০ টাকা করে ৪২ বছর চাঁদার বিপরীতে ২ লাখ ৫৮ হাজার ৪৯১ টাকা এবং ৫ হাজার টাকা করে চাঁদার বিপরীতে ১ লাখ ৭১ হাজার ৩২৭ টাকা করে পেনশন মিলবে।

১০ বছর চাঁদা দিলে ৬০ বছর বয়সে পাঁচ হাজার টাকা মাসিক চাঁদার বিপরীতে ৭ হাজার ৬৫১, ৭ হাজার ৫০০ টাকা চাঁদার বিপরীতে ১১ হাজার ৪৭৭ টাকা এবং ১০ হাজার টাকা চাঁদা দেওয়ার বিপরীতে ১৫ হাজার ৩০২ টাকা করে পেনশন পাওয়া যাবে। চাঁদা দেওয়ার ধরন তিনটি—মাসিক, ত্রৈমাসিক ও বার্ষিক। যেকোনো বৈধ চ্যানেল ব্যবহার করে ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় প্রবাস স্কিমের চাঁদা জমা দিতে হবে।

আরও পড়ুন

বৈধ পথে দেশে প্রবাসী আয় আনতে ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে প্রবাসীদের ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়া শুরু করে সরকার। ২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে এ হার বাড়িয়ে করা হয় ২ দশমিক ৫ শতাংশ। গত ১ জুন চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপনের দিন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সংসদে জানান, ২০২২-২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে প্রবাসী আয় আনার জন্য প্রণোদনা বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা।

প্রবাসীদের নিয়ে কাজ করা বেসরকারি গবেষণা সংস্থা রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) চেয়ার তাসনিম সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশে কেউ প্রবাসী আয় পাঠালে যে প্রণোদনা পাবেন, আগেই বলা আছে। তা পেনশন স্কিমের চাঁদা হোক বা না হোক। প্রণোদনা বাড়বে কি না বা আরেকটু বাড়তি সুবিধা প্রবাসী বাংলাদেশিরা পাবেন কি না, সেটা হচ্ছে আসল প্রশ্ন।’

আরও পড়ুন