পটুয়াখালী জেলা সদরের আউলিয়াপুর ইউনিয়নের পচাকোড়ালিয়া মৌজায় ৪১৮ একর জায়গার ওপর গড়ে তোলা হবে নতুন ইপিজেড।
ছবি: বেপজার সৌজন্যে

পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর দেশের দক্ষিণের জেলা পটুয়াখালীতে এবার গড়ে তোলা হচ্ছে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা (ইপিজেড)। এটি বরিশাল বিভাগের প্রথম ইপিজেড। সম্পূর্ণ দেশীয় অর্থায়নে নির্মিত এ ইপিজেডে ৩০৬টি শিল্প প্লট থাকবে। এতে ১৫৩ কোটি ডলার বা ১৬ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার বেশি বিদেশি বিনিয়োগ আসতে পারে। 

ইপিজেডটি গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা)। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় গত ২৯ আগস্ট পটুয়াখালী ইপিজেড প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে বরিশালে এখনো গ্যাস–সংযোগ না থাকায় এই ইপিজেডে কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ পাওয়া যাবে কি না, সেটি নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। 

আয়তনে পটুয়াখালী ইপিজেড দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইপিজেড। গত জুলাইয়ে এ প্রকল্পের মেয়াদ শুরু হয়। কাজ শেষ হবে ২০২৬ সালের জুন। 

বেপজা কর্মকর্তারা জানান, পটুয়াখালী ইপিজেডে হালকা প্রকৌশল, আসবাব, খাদ্য ও কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ, মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতের শিল্প স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের। এটি চালু হলে প্রত্যক্ষভাবে প্রায় এক লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে।

২০১৯ সালের নভেম্বরে বেপজার গভর্নিং বোর্ডের সভায় এই ইপিজেড স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়। জেলা সদরের আউলিয়াপুর ইউনিয়নে ৪১৮ একর জায়গায় এ ইপিজেড গড়ে তোলা হচ্ছে।   

পটুয়াখালীতে কেন ইপিজেড 

পদ্মা সেতু কেন্দ্র করে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে প্রথমবারের মতো একটি ইপিজেড করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। পদ্মা সেতুসহ কয়েকটি নতুন সেতু চালুর কারণে রাজধানীর সঙ্গে পটুয়াখালীর সরাসরি সড়ক যোগাযোগ তৈরি হয়েছে। আবার পটুয়াখালীতে গড়ে তোলা হয়েছে পায়রা সমুদ্রবন্দর। ভবিষ্যতে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে পায়রা সমুদ্রবন্দর পর্যন্ত রেল যোগাযোগ স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া পটুয়াখালী থেকে মোংলা সমুদ্রবন্দরের দূরত্ব ২৫০ কিলোমিটার। 

পায়রাতে ইতিমধ্যে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হয়েছে। পটুয়াখালীর কাছাকাছি এলাকা বাগেরহাটের রামপালেও তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হয়েছে। এসব বিবেচনায় পটুয়াখালীতে ইপিজেড স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান বেপজার কর্মকর্তারা।

পটুয়াখালী জেলা সদরের আউলিয়াপুর ইউনিয়নের পচাকোড়ালিয়া মৌজায় ৪১৮ একর জায়গার ওপর গড়ে তোলা হবে নতুন ইপিজেড
ছবি: প্রথম আলো

নির্মাণব্যয় ১৪৪২ কোটি টাকা

সম্পূর্ণ দেশীয় অর্থায়নে নির্মাণ করা হবে পটুয়াখালী ইপিজেড। এটির উন্নয়নে ১ হাজার ৪৪২ কোটি ৭৮ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ১০৫ কোটি টাকা দেবে সরকার, যার মধ্যে ৪০ শতাংশ মূলধনি (ইকুইটি) বিনিয়োগ। আর বাকি প্রায় ৩৩৮ কোটি টাকা বেপজা তার নিজস্ব তহবিল থেকে দেবে। 

প্রকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী, নতুন এ ইপিজেডে ৩০৬টি শিল্প প্লট থাকবে। এতে চারটি ৬ তলা কারখানা ভবন; তিনটি ১০ তলা ও চারটি ৬ তলা আবাসিক ভবন এবং একটি ৬ তলা ও দুটি ৪ তলা অফিস ভবন নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া থাকবে বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র, হেলিপ্যাড–সুবিধা, কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার (সিইটিপি), সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (এসটিপি), বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জলাধার প্রভৃতি। এ ছাড়া কুয়াকাটায় প্রায় সোয়া দুই একর জমির ওপর তৈরি করা হবে একটি ইনভেস্টরস ক্লাব।

বিনিয়োগ কত আসবে 

পটুয়াখালী ইপিজেডে মোট ১৫৩ কোটি ডলার বা ১৬ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার বেশি বিদেশি বিনিয়োগ আসবে বলে আশা করছে বেপজা। আর ইপিজেডটিতে উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হলে সেখান থেকে বছরে ১৮৩ কোটি ডলার বা ২০ হাজার কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি হবে। প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য ১০৯ দশমিক ৫০ টাকা ধরে এ হিসাব করা হয়েছে। 

পটুয়াখালী জেলা সদরের আউলিয়াপুর ইউনিয়নের পচাকোড়ালিয়া মৌজায় ৪১৮ একর জায়গার ওপর গড়ে তোলা হবে নতুন ইপিজেড।
ছবি: বেপজার সৌজন্যে

চ্যালেঞ্জ কী

বরিশালে এখনো গ্যাসের সরবরাহ নেই। তাই সেখানে গ্যাসভিত্তিক শিল্প স্থাপন ও বিনিয়োগের আপাতত সম্ভাবনা নেই। দক্ষ মানবসম্পদ পাওয়াও একটি চ্যালেঞ্জ।

বেপজার নির্বাহী পরিচালক (জনসংযোগ) নাজমা বিনতে আলমগীর বলেন, ইপিজেড এলাকায় গ্যাস থাকলে তা বিনিয়োগের জন্য একটি বাড়তি সুবিধা। গ্যাস ছাড়াও শিল্প স্থাপন সম্ভব। এর উদাহরণ  উত্তরা ও মোংলা ইপিজেড।  

ভোলা থেকে বরিশালে গ্যাস আনার সরকারের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে এই বেপজা কর্মকর্তা বলেন, সেটি বাস্তবায়িত হলে পটুয়াখালী ইপিজেডও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাস–সংযোগ পাবে।