রমজানের ২ মাস আগে ছোলার দাম কেজিতে ১০ টাকা বাড়ল

ছোলা
প্রতীকী ছবি

পবিত্র রমজানের বাকি আরও প্রায় দুই মাস। এর মধ্যে গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে ছোলার দাম কেজিপ্রতি ১০ টাকা বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে ছোলা ও মুগ ডালের দামও। মুগ ডালের দাম কেজিপ্রতি বেড়েছে ২০-৩০ টাকা। আর ছোলার ডালের দামও কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে। বাজারে চাল, আটা, ময়দা, সয়াবিন তেলের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আগে থেকেই বেড়ে আছে। মাছ-মাংসের সঙ্গে আলু, পেঁয়াজ ও সবজির দামও চড়া।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর পলাশী বাজার, নিউমার্কেট কাঁচাবাজার, কারওয়ান বাজার ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুই সপ্তাহ ধরে ছোলা ও ছোলার ডালের দাম ধীরে ধীরে বেড়েছে। ১০ টাকা বাড়ায় এখন প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০ টাকা, যা আগে ৮০-৯০ টাকা ছিল। বাজারে ১১০-১১৫ টাকা কেজির ছোলাও আছে। মানে ভালো এসব ছোলা সাম্প্রতিক সময়ে আমদানি হয়েছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডালজাতীয় অধিকাংশ পণ্য আমদানির ওপর নির্ভরশীল। ডলারের বিনিময় হার বেশি হওয়ায় আমদানিতে খরচ বেশি পড়ছে। তার প্রভাব পড়ছে ডালের বাজারে।

এদিকে ছোলার ডাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১০০-১১০ টাকা, দুই সপ্তাহ আগে যা ছিল ৯০-১০০ টাকা। ছোলার মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব ছোলার ডালের বাজারে পড়েছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। তবে বাজারে মুগ ডালের দাম বেড়েছে বেশি। ১১০-১২০ টাকা কেজির মুগ ডাল এখন খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ১৪০-১৫০ টাকা। মানভেদে মুগ ডালের দাম বাজারে প্রতি কেজি ১৬০-১৭০ টাকা পর্যন্ত দেখা গেছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডালজাতীয় অধিকাংশ পণ্য আমদানির ওপর নির্ভরশীল। ডলারের বিনিময় হার বেশি হওয়ায় আমদানিতে খরচ বেশি পড়ছে। তার প্রভাব পড়ছে ডালের বাজারে। গত ছয় মাসে মসুর ডালের দাম দফায় দফায় বেড়েছে। এখন ছোলাসহ কয়েক পদের ডাল নতুন করে বাড়ছে। রমজান আসতে আরও দুই মাসের কিছু সময় বাকি। দেশে ছোলার চাহিদার বড় অংশই থাকে রমজানে। চাহিদানুযায়ী উৎপাদন না হওয়ায় দেশে প্রতিবছর ১৩-১৪ লাখ টন ডাল ও ডালজাতীয় শস্য আমদানি করতে হয়।

বাংলাদেশ ডাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ডাল ও ছোলার দাম ডলারের বাড়তি দামের কারণেই বাড়ছে। সরকারকে ডলারের নির্ধারিত দর কার্যকরে উদ্যোগ নিতে হবে। এসব পণ্যের বড় আমদানিকারকদের পাশাপাশি ছোটদেরও এলসি (ঋণপত্র) নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে বাজারে প্রতিযোগিতা থাকবে। এ ছাড়া রমজান উপলক্ষে বিশেষভাবে শুল্কছাড় দেওয়া গেলে দাম কিছুটা কমবে।

ভারত বিশ্বের শীর্ষ ছোলা উৎপাদনকারী দেশ। তবে দেশটিতে চাহিদা বেশি থাকায় সাধারণত ছোলা রপ্তানি হয় কম। কিছু পরিমাণ কাবলি ছোলা রপ্তানি করে তারা। তাতে দেশে ছোলা আমদানির জন্য ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ক্ষুদ্র আকারে জায়গা করে নিয়েছে তানজানিয়া, মিয়ানমার ও কানাডা। দুই দশকের বেশি সময় ধরে অস্ট্রেলিয়ার পরে বাংলাদেশের ছোলা আমদানির বিকল্প দেশ ছিল পাকিস্তান, ইথিওপিয়া, রাশিয়া, ইউক্রেনের মতো দেশ। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ছোলা আমদানির মানচিত্র থেকে অস্ট্রেলিয়া বাদে বাকি দেশগুলো মুছে যেতে শুরু করেছে। বাজারে দাম স্থিতিশীল রাখতে আমদানি স্বাভাবিক রাখার বিকল্প নেই উল্লেখ করে মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. বশির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ডলার–সংকটের মধ্যে অগ্রাধিকার দিয়ে রমজানের পণ্য আমদানি করা গেলে ছোলা ও খেজুরের মতো পণ্যের দাম আর বাড়বে না।

ডাল ও ছোলার দাম ডলারের বাড়তি দামের কারণেই বাড়ছে। সরকারকে ডলারের নির্ধারিত দর কার্যকরে উদ্যোগ নিতে হবে। এসব পণ্যের বড় আমদানিকারকদের পাশাপাশি ছোটদেরও এলসি (ঋণপত্র) নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশ ডাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম

সবজির দাম এখনো চড়া

বাজারে চাল, আদা, ময়দা ও সয়াবিন তেলের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামে গত এক সপ্তাহে বড় কোনো পরিবর্তন আসেনি। সবজির দাম কিছুটা কমলেও শীত মৌসুম হিসেবে গতবারের চেয়ে সব ধরনের সবজির দাম এখনো বেশ চড়া। আলু ও পেঁয়াজ এখনো বাড়তি দামেই কিনতে হচ্ছে। খুচরায় প্রতি কেজি নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। আর দেশি নতুন পেঁয়াজের দাম পড়ছে প্রতি কেজি ৯০-১১০ টাকা।

আয় সেভাবে না বাড়লেও বাজার খরচ পাল্লা দিয়ে বাড়ছে।
পলাশী বাজারের ক্রেতা নিলাঞ্জনা সরকার

মাছ, মাংস ও ডিমের বাজারের অবস্থাও আগের মতোই। গত সপ্তাহের মতো প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৯০-২০০ টাকায়। সোনালি মুরগির দাম পড়ছে প্রতি কেজি ৩১০-৩৩০ টাকা। ফার্মের মুরগির বাদামি ডিমের দাম প্রতি ডজন ১২৫-১৩০ টাকা। চাষের রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৩০০-৪০০ টাকা। আকারভেদে চাষের পাঙাশ ও তেলাপিয়ার দাম পড়ছে ২০০-২৩০ টাকার মধ্যে।

পলাশী বাজারের ক্রেতা নিলাঞ্জনা সরকার প্রথম আলোকে বলেন, আয় সেভাবে না বাড়লেও বাজার খরচ পাল্লা দিয়ে বাড়ছে।