দেশে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, সংযোগ বৃদ্ধির তাগিদ
সংগঠনটির দুই দিনের আয়োজনের শেষ দিনে ছিল বিনিয়োগ পরিবেশ নিয়ে অধিবেশন ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান।
২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হতে দরকার তিনটি চালিকা শক্তি। এগুলো হচ্ছে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও সংযোগ বৃদ্ধি। এ জন্য দরকার হবে ব্যয় সাশ্রয়ী পদক্ষেপ এবং সব পর্যায়ে ডিজিটাল মাধ্যমের সর্বোচ্চ ব্যবহার। এ ছাড়া দরকার বিনিয়োগ নীতিকাঠামো সহজ ও আধুনিক করা। তবে আন্তর্জাতিক করব্যবস্থার সঙ্গে মিলিয়ে দেশীয় করব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোই হবে মূল চ্যালেঞ্জ।
ঢাকার একটি হোটেলে গতকাল সোমবার ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফআইসিসিআই) ৬০ বছর পূর্তি উদ্যাপন এবং দুই দিনব্যাপী বিনিয়োগ মেলার শেষ দিনে অনুষ্ঠিত ‘বিনিয়োগ পরিবেশ: চলমান পরিস্থিতি ও মিশন ২০৪১’ শীর্ষক অধিবেশনে মূল প্রবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে।
অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এম মাশরুর রিয়াজ। বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রূপালী চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত অধিবেশনে আলোচক ছিলেন বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ, মেট্রো চেম্বারের সভাপতি সাইফুল ইসলাম, জেট্রোর কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ ইউজি আন্দো এবং ঢাকা কোরিয়া ট্রেড সেন্টারের মহাপরিচালক স্যামসু কিম।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, ‘দেশের উন্নয়নের সূচনালগ্ন থেকে একটি প্রতিযোগিতামূলক দেশ হিসেবে নিজেদের গঠন করাই ছিল আমাদের মূল লক্ষ্য।’ এ ছাড়া ছিল বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের বাণিজ্যের সুযোগ তৈরি করে দেওয়া। এখন লক্ষ্য হচ্ছে ২০৪১ সালের মধ্যে নিজেদের উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলা।
এ ছাড়া ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের নবম বৃহত্তম ভোক্তা দেশ হিসেবে গড়ে উঠবে এবং এটিই দেশের অন্যতম শক্তি হবে বলে মনে করেন প্রবন্ধ উপস্থাপক মাশরুর রিয়াজ। তাই বেসরকারি খাতনির্ভর প্রবৃদ্ধির জন্য অনেক ধরনের বিনিয়োগ নীতি প্রণয়ন করতে হবে বলে তিনি জানান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, ‘গত দুই দশকে দেশে বড় ধরনের রূপান্তর হয়েছে। সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য সরকার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তবে দরকার এখন পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগ। কারণ, দেশটিকে আমাদের ছেলে-মেয়ে এবং নাতি-নাতনিদের উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। সব প্রকল্প এমনভাবে নিতে হবে, যাতে দীর্ঘ মেয়াদে তার সুবিধা ভোগ করা যায়।’
তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, ‘বর্তমান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে পুঁজির প্রবাহকে সহজতর করতে এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ গড়ে তুলতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির ক্ষেত্র হিসেবে বাংলাদেশকে একটি লাভজনক বিনিয়োগের গন্তব্য হিসেবে গড়ে তোলাই আমাদের মূল লক্ষ্য।’
বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছে এনবিআর, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রায় সব অঙ্গসংস্থা। বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ করতে এ-সংক্রান্ত নীতিগুলো সব সময় হালনাগাদ করা হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশের এমডি রূপালী চৌধুরী বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল চালিকা শক্তি তিনটি। সেগুলো হলো বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও সংযোগ স্থাপন। এগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। স্থানীয় বিনিয়োগের সঙ্গে বৈদেশিক বিনিয়োগও উন্নয়নের ধারায় বিশেষ অবদান রাখছে।
সরকারের নীতি পদক্ষেপের ধারাবাহিকতা না থাকা, করদাতাদের ওপরই আরও করারোপ এবং সব কোম্পানির জন্যই বিদ্যমান শুল্ক ব্যবস্থা বড় ধরনের সমস্যা বলে মন্তব্য করেন রূপালী চৌধুরী। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ-সংযোগ পেতেই দেশে অনেক সময় লেগে যায়। তবে অনেক সমস্যা থাকলেও ভবিষ্যতে সুযোগের হাতছানিও কম নয়।
মেট্রো চেম্বারের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ভারতের সেভেন সিস্টার খ্যাত সাত অঙ্গরাজ্য ও পশ্চিমবঙ্গসহ বাংলাদেশ—এটা একটা বড় বাজার এবং এ বাজারের কথা মাথায় রেখে বাংলাদেশ ভালো বিদেশি বিনিয়োগ পেতে পারে।
জেট্রোর কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ ইউজি আন্দো বলেন, বাংলাদেশে বৈদেশিক সহায়তায় চলমান প্রকল্পগুলোর প্রায় অর্ধেক জাপানি। আরও জাপানি কোম্পানি এ দেশে নতুন নতুন বিনিয়োগে আগ্রহী। বাংলাদেশের উন্নয়নের গৌরবময় যাত্রায় অংশীদার হতে জাপান সব সময় বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখছে।
ঢাকা কোরিয়া ট্রেড সেন্টারের স্যামসু কিম বলেন, বাংলাদেশের চতুর্থ বৃহত্তম সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের অংশীদার কোরিয়া। শ্রমবাজারকে সুগঠিত করে প্রণোদনা দেওয়ার সুযোগ তৈরি করলে এবং বৈদেশিক বিনিয়োগের নীতিকে আরও সংশোধিত করলে কোরিয়া ছাড়াও অন্যান্য বিশ্বের অন্যান্য দেশ এখানে আসবে।
ফরেন চেম্বারের দুই দিনের এ আয়োজন শেষ হয় কয়েকজন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা জানানোর মধ্য দিয়ে। রাতে সমাপনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এফআইসিসিআইয়ের সভাপতি নাসের এজাজ বিজয়, ইউনিলিভার বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও এমডি জাভেদ আখতার, গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী ইয়াসির আজমানসহ বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনাকারী বিদেশি কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তারা।