তিন ঘণ্টায় শেষ হয়ে গেল টিসিবির ট্রাকের পণ্য

রাজধানীর সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতে ট্রাকে করে পণ্য বিক্রির পুরোনো পদ্ধতিতে ফিরেছে সরকারি সংস্থা টিসিবি।

প্রায় দেড় বছর পর আবারও ট্রাকে করে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য বাজারমূল্যের চেয়ে কমে চার ধরনের নিত্যপণ্য বিক্রি শুরু করেছে টিসিবি। টিসিবির ট্রাক থেকে তেল, পেঁয়াজ, আলু ও ডাল কিনতে মানুষের ভিড়। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে
ছবি: প্রথম আলো

রাজধানীতে আবারও ট্রাকে পণ্য বিক্রি করতে শুরু করেছে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। স্বল্প আয়ের মানুষকে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য দিতে এই উদ্যোগ। প্রথম দিনে গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার ৩০টি স্থানে পণ্য বিক্রি করেছে টিসিবি। পণ্যগুলো পেতে মানুষের বেশ ভিড় ছিল। ফলে পণ্য বিক্রি হয়েছে দ্রুত। একেকটি ট্রাকে থাকা ৩০০ জনের পণ্য বিক্রিতে সর্বোচ্চ সময় লেগেছে ৩ ঘণ্টা।

গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট ও মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড ঘুরে এবং আরও ৭ জন ডিলারের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলে জানা গেছে, টিসিবির মালামাল নিয়ে ট্রাকগুলো সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বেলা ১১টার মধ্যে নির্ধারিত স্থানে পৌঁছায়। এরপর পণ্য বিক্রি শেষ হতে ঘণ্টা তিনেক লাগে। কোথাও কোথাও মাত্র দেড় ঘণ্টায় পণ্য বিক্রি শেষ হয়েছে।

মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। সে জন্য নিম্ন আয়ের মানুষকে সহায়তা করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, মহাপরিচালক, ভোক্তা অধিদপ্তর

টিসিবির ট্রাক থেকে একজন ক্রেতা দুই কেজি করে মসুর ডাল, আলু ও পেঁয়াজ এবং দুই লিটার সয়াবিন তেল কিনতে পারবেন। প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৫০ টাকা, আলু ৩০ টাকা ও মসুর ডাল ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি লিটার সয়াবিন তেল পাওয়া যাবে ১০০ টাকায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সময়মতো প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা না দেওয়ায় কয়েকজন ডিলার দুপুরের পরে টিসিবি থেকে পণ্য বুঝে পান। তাঁরা বিকেলের দিকে বিক্রি শুরু করলেও তাতে দুই ঘণ্টার বেশি লাগেনি। এবার টিসিবি পণ্য টোকেনের মাধ্যমে বিক্রি করার ফলে শৃঙ্খলা ফিরেছে। তাই খুব বেশি মানুষ সারির বাইরে অপেক্ষা করেননি। বেশি চাহিদা থাকলেও ডিলাররা ৩০০ টোকেনের বেশি দিতে পারেননি।

আজিমপুর ছাপরা মসজিদ এলাকার ডিলার ফরিদ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, সকাল সাড়ে ৯টায় বিক্রি শুরু হয় এবং দুপুর ১২টার মধ্যে শেষ।

টিসিবি চারটি পণ্য বিক্রির ঘোষণা দিলেও অধিকাংশ জায়গায় গতকাল আলু ও পেঁয়াজ পাওয়া যায়নি। কারওয়ান বাজারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অবশ্য ডাল, সয়াবিন, আলু ও পেঁয়াজ চারটি পণ্যই বিক্রি হয়েছে। সাধারণ মানুষের চাপ বেশি হলেও ডাল ও সয়াবিন তেল মোড়কজাত হওয়ায় বিক্রিটা সহজ হয়েছে।

শনির আখড়া এলাকার ডিলার জসিম উদ্দিন বলেন, প্রথমে অনেকে বুঝে উঠতে পারেননি। জানাজানি হওয়ার পর দ্রুত মালামাল শেষ হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে বিক্রিতে তিন ঘণ্টা সময় লেগেছে।

টিসিবির ডিলাররা জানান, অনেককেই আলু ও পেঁয়াজের সরবরাহ না থাকার কথা আগেই জানানো হয়েছিল। তবে দুটি পণ্য নিয়েও প্রথম দিন ক্রেতাদের ভালো সাড়া পেয়েছেন তাঁরা।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় টিসিবির ট্রাকের সামনে বছিলার বাসিন্দা নুর নাহার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছেলের বাবার খাবার দিতে এসেছিলাম টাউন হলে। ফিরতি পথে দেখি টোকেন দিচ্ছে। মাল পেতে একটু সময় লাগলেও বাজার থেকে অর্ধেকের মতো দামে কিনতে পেরেছি। অনেক সাশ্রয় হলো।’

টিসিবি ঢাকার ৩০টি স্থানে ট্রাকে করে এই পণ্য বিক্রি করবে। গতকাল সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে টিসিবির প্রধান কার্যালয়ের সামনে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, টিসিবির পরিবার কার্ডের বাইরে সাধারণ মানুষ যে কেউ ট্রাক থেকে পণ্য কিনতে পারবেন। তবে প্রতিদিন একই স্থানে টিসিবির ট্রাক থাকবে না। একেক দিন একেক জায়গায় বিক্রি করা হবে, যা টিসিবি আগেই জানিয়ে দেবে। এই কার্যক্রমের পাশাপাশি পরিবার কার্ডধারী এক কোটি মানুষ প্রতি মাসে যে পণ্য পান, সেই কার্যক্রমও অব্যাহত থাকবে।

টিসিবিতে পণ্যের সংকট আছে এবং আমদানি করতেও সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে বলে জানান বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ। তিনি বলেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। কিন্তু তারা পেঁয়াজ দেওয়া প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। ভারত থেকে চিনিও আসে, সেটাও প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। তারপরও টিসিবি আমদানি স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে। আজকেও (মঙ্গলবার) সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আসবে। এসব পণ্য এলে সংকট কিছুটা কাটবে। সব জায়গায় সব পণ্য পাওয়া যাবে।

আপাতত ঢাকায় এই কার্যক্রম চলবে জানিয়ে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। সে জন্য নিম্ন আয়ের মানুষকে সহায়তা করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এই কার্যক্রমের মাধ্যমে ঢাকার ১৩ লাখ পরিবার কার্ডধারী মানুষের পাশাপাশি আরও ২ লাখ মানুষ ভর্তুকি মূল্যের পণ্য পাবেন বলে উল্লেখ করেন টিসিবির চেয়ারম্যান আরিফুল হাসান।

ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনতে গত বছরের মাঝামাঝি ট্রাকে পণ্য বিক্রি বন্ধ করে দেয় টিসিবি। এরপর সারা দেশে পরিবার কার্ডের মাধ্যমে এক কোটি পরিবারকে পণ্য দিতে শুরু করে। দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি এখন প্রায় এক যুগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এ সময় রাজধানীর সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতে ট্রাকে পণ্য বিক্রি করছে সংস্থাটি।