প্রবাসী আয় বেড়েছে, কমেছে রপ্তানি আয় 

সদ্য সমাপ্ত মার্চ মাসে প্রবাসী আয় বেড়ে ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে, অন্যদিকে রপ্তানি আয় কমে ৪৬৪ কোটি ডলারে নেমে এসেছে।

পবিত্র রমজান মাস ও ঈদ উপলক্ষে প্রবাসীদের বৈধ পথে রেমিট্যান্স তথা প্রবাসী আয় পাঠানোর পরিমাণ বেড়েছে। সদ্য সমাপ্ত মার্চ মাসে তাঁরা ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে ২০১ কোটি ৭৬ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন। এই আয় আগের মাস ফেব্রুয়ারির তুলনায় ২৯ দশমিক ২৯ শতাংশ এবং গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ বেশি। 

এর আগে গত জুলাই ও আগস্ট মাসে প্রবাসী আয় ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বিবরণী অনুযায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাস জুলাই-মার্চে মোট প্রবাসী আয় এসেছে ১ হাজার ৬০৩ কোটি ডলার।

এদিকে চার মাস পর মার্চে দেশের রপ্তানি আয় আবারও কিছুটা নেতিবাচক ধারায় চলে গেছে। এ মাসে ৪৬৪ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২ দশমিক ৫ শতাংশ কম। তবে সার্বিকভাবে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) রপ্তানিতে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৮ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) গতকাল রোববার রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে রপ্তানির বড় খাতগুলোর মধ্যে তৈরি পোশাক, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, চামড়াবিহীন জুতা এবং প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। অন্যদিকে পাট ও পাটজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল, হিমায়িত খাদ্য, প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য, প্রকৌশল পণ্যের রপ্তানি কমেছে। আলোচ্য সময় মোট ৪ হাজার ১৭২ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। আগের বছরের একই সময় রপ্তানি হয়েছিল ৩ হাজার ৮৬১ কোটি ডলারের পণ্য। 

প্রবাসী আয়

ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, রমজান ও ঈদের কারণে আগের চেয়ে বেশি আয় পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা। আবার জাকাতের তহবিলও আসছে। এ ছাড়া ডলার-সংকটের কারণে অনেক ব্যাংক বেশি দামে প্রবাসী আয় নিয়ে আসছে। এর প্রভাব পড়েছে প্রবাসী আয় আসার চিত্রে। ব্যাংকগুলো এখন প্রবাসী আয় সর্বোচ্চ ১০৭ টাকা দাম দিতে পারে। 

গত ফেব্রুয়ারি মাসে ১৫৬ কোটি ১২ লাখ মার্কিন ডলারের প্রবাসী আয় দেশে এসেছিল। এই আয় জানুয়ারির তুলনায় ৩৯ কোটি ৭৬ লাখ ডলার বা প্রায় ২০ শতাংশ কম ছিল। জানুয়ারিতে প্রবাসী আয় এসেছিল প্রায় ১৯৬ কোটি ডলার। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারির চেয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে প্রবাসী আয় বেড়েছে ৬ কোটি ৬৮ লাখ ডলার। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এসেছিল ১৪৯ কোটি ৪৪ লাখ ডলারের প্রবাসী আয়। 

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, রমজান মাস এলেই প্রবাসী আয় বেড়ে যায়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ঈদের কারণেও প্রবাসী আয় বাড়বে। এর ফলে ডলারের সরবরাহ কিছুটা হলেও বাড়বে। পাশাপাশি ঘোষিত দামের চেয়ে বেশি দামে অনেকে প্রবাসী আয় আনছে, এমনটা শোনা গেছে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, মার্চ মাসে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে আসে ৪৫ কোটি ৬১ লাখ ডলার, দি সিটি ব্যাংকের মাধ্যমে আসে ১৫ কোটি ৬৩ লাখ ডলার ও পূবালী ব্যাংকের মাধ্যমে ১২ কোটি ২৩ লাখ ডলার। এরপরই সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে আসে ১০ কোটি ৭৫ লাখ ডলার, আল-আরাফাহ্‌ ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে ৯ কোটি ৮৭ লাখ ডলার ও অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে ৯ কোটি ৪০ লাখ ডলার। প্রবাসী আয় সংগ্রহে শীর্ষ তালিকায় হঠাৎ করে চলে এসেছে সোশ্যাল ইসলামী ও আল-আরাফাহ্‌ ইসলামী ব্যাংক। 

প্রবাসী আয়ে ব্যাংকের মাধ্যমে নিয়ে আসার জন্য সরকার প্রণোদনার হার ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে এখন আড়াই শতাংশ দিচ্ছে। এরপরও দেশে ডলার-সংকট শুরু হওয়ার পর থেকে প্রবাসী আয়ে গতি কম। সামনে অবশ্য বৈশাখ ও দুই ঈদের মতো উৎসব আছে। উৎসবে প্রবাসী আয় বেশি আসে। চলতি মাসেও ভালো পরিমাণ আয় আসার আশা করছেন ব্যাংকাররা। 

জানা গেছে, প্রবাসীরা বিভিন্ন এক্সচেঞ্জ ও রেমিট্যান্স হাউস এবং ব্যাংকে প্রবাসী আয় জমা দেন। যেসব প্রবাসী দেশের নির্দিষ্ট ব্যাংক হিসাবে অর্থ পাঠাতে চান, তা তাৎক্ষণিক জমা হয়ে যায়। যাঁদের হিসাব নেই, তাঁরা মোবাইল নম্বর দিয়ে ব্যাংক বা নির্দিষ্ট পয়েন্ট থেকে প্রবাসী আয় সংগ্রহ করতে পারেন। এসব মোবাইলে একটি কোড আসে, সেই কোড দিয়ে টাকা উত্তোলন করা যায়। সব প্রবাসী আয় বিভিন্ন ব্যাংক প্রতিযোগিতা করে কিনে নেয়। অন্য ব্যাংকের হিসাবে হলে তা তাৎক্ষণিক পাঠিয়ে দেয়।