ভরা মৌসুমে বেচাকেনায় মন্দা 

গরম কাপড়ের দোকানগুলো প্রায় ক্রেতাশূন্য। তাই কোনো কোনো ব্যবসায়ী বিশ্বকাপের জার্সি বানিয়ে গরম কাপড়ের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।

বাজারে এসেছে শীতের কম্বল। কিন্তু এবার বিক্রি কম। তাই ক্রেতার অপেক্ষায় আছেন বিক্রেতারা। সম্প্রতি রাজধানীর ফুলবাড়িয়া এলাকার একটি মার্কেটে
ছবি প্রথম আলো

‘সাধারণত ডিসেম্বরে পাইকারি ব্যবসায়ীরা কম্বল কেনাবেচা শেষ করে হিসাব-কিতাব মেলান। অথচ এবার তাঁরা এখনো বেচাকেনা শুরুই করতে পারেননি। কারণ, শীতের প্রকোপ কম, তাই কম্বলের চাহিদা নেই বললেই চলে। ঢাকার বাইরের ব্যবসায়ীরাও তেমন আসছেন না।’ ঠিক এভাবেই ভরা মৌসুমে গরম কাপড়ের পাইকারি ব্যবসার হালচাল জানান নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকার পারিজাত সিটি শপিং কমপ্লেক্সের ব্যবসায়ী মো. শাহ আলম খান।

এই পাইকারি বাজারে গরম কাপড় বিক্রির দুই শতাধিক প্রতিষ্ঠান আছে। থান কেটে কম্বল তৈরির বেশ কিছু কারখানাও এখানে রয়েছে। সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, সেখানকার অধিকাংশ দোকানই ক্রেতাশূন্য। যে দু-চারজন ব্যবসায়ী ক্রেতা আসেন, তাঁরাও কিনছেন কম। অনেক বিক্রেতা জানান, তাঁরা সারা দিনে একজন ক্রেতাও পাননি।

ব্যবসার জন্য এ সময় সবচেয়ে ভালো। কিন্তু এবার পাইকারি ক্রেতা নেই। একজনের কাছে দুইটা হুডি বিক্রি করতে পেরেছি। বলতে পারেন সারা দিন বসে থেকে দুপুরের খাবারের খরচটাও ওঠেনি। ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা আছে। ব্যাংকঋণও রয়েছে। তাই উদ্বেগে আছি।
মো. ইউসুফ মালিক, ইউসুফ গার্মেন্টস, মিতালি মার্কেট 

মারুফ এন্টারপ্রাইজ নামের প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী মো. জাহাঙ্গীর তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘২৫ হাজারের মতো কম্বল তৈরি করেছি। তার মধ্যে এখন পর্যন্ত দুই হাজারও বিক্রি হয়নি। ত্রাণের জন্য অনেকে কম্বল নিয়ে থাকেন। এবার তা-ও নিচ্ছেন না। তবে এ রকম বড় আকারের কয়েকটা বেচাকেনা করতে পারলে সারা বছরের লোকসান উঠে আসবে বলে মনে করেন তিনি।

সাইনবোর্ড এলাকার মিতালি মার্কেটের ১৪টি ভবনে প্রায় দেড় হাজার কাপড়ের দোকান ও ছোট পোশাক কারখানা আছে। সেখানে একটু কম দামি কম্বল ও ছোট-বড় সবার গায়ের জ্যাকেট ও হুডির মতো পণ্য তৈরি হয়। এ মার্কেটও প্রায় ক্রেতাশূন্য দেখা গেছে। সেখানকার ব্যবসায়ীরা জানান, লাভ তো দূরের কথা, লগ্নির টাকা তোলা নিয়েই চিন্তায় আছেন তাঁরা।

মিতালি মার্কেটের ইউসুফ গার্মেন্টসের মালিক মো. ইউসুফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যবসার জন্য এ সময় সবচেয়ে ভালো। কিন্তু এবার পাইকারি ক্রেতা নেই। একজনের কাছে দুইটা হুডি বিক্রি করতে পেরেছি। বলতে পারেন সারা দিন বসে থেকে দুপুরের খাবারের খরচটাও ওঠেনি। ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা আছে। ব্যাংকঋণও রয়েছে। তাই উদ্বেগে আছি।’ এই পাইকারি বাজারে ১০০-৬০০ টাকায় জ্যাকেট-হুডি বিক্রি হয় বলে জানান তিনি।

এই দুই পাইকারি বাজারের অন্তত ২৫ ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। তাঁরা জানান, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে এবার প্রতি কেজি থান কাপড়ের দাম ১৫-২০ টাকা বেড়েছে। এতে কম্বল তৈরির খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিবছর দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় যে পরিমাণ কেনাবেচা হয়, এবার নাকি সেটাও হয়নি।

পণ্যের দাম বাড়তি বলে ক্রেতাদের আগ্রহ কম বলে জানান অনেক ব্যবসায়ী। বিক্রি না থাকায় অনেকটা বসে বসেই সময় কাটছে তাঁদের। এর মধ্যে অনেক ব্যবসায়ী অবশ্য বিশ্বকাপের জার্সি বানিয়ে গরম কাপড়ের ব্যবসায়ে যে মন্দাভাব চলছে, সেটি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন। কারণ, এবার জার্সির ব্যবসা ভালো।

পারিজাত মার্কেটের পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতবারের তুলনায় এবার দেশি কম দামের কম্বলের দাম বেড়েছে ২০ থেকে ৫০ টাকা। আর মাঝারি মানের কম্বলে বেড়েছে ১০০ টাকার মতো। ডলারের দাম বেশি হওয়ায় আমদানি করা কম্বলের দামও বাড়তি। তবে আমদানিকারকেরা জানান, আপাতত ঋণপত্র (এলসি) খুলতে না পারায় আমদানি বন্ধ রয়েছে। এ সুযোগে অনেক খুচরা বিক্রেতা আমদানি করা কম্বলের দাম বাড়িয়ে রাখছেন।

এদিকে তুলা ও কাপড়ের দাম বাড়তি থাকায় লেপ তৈরির খরচ বেশি পড়ছে বলে জানান শনির আখড়ার আদি বেড কর্নারের কারিগর মো. জামান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মানভেদে তুলার দাম কেজিতে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। গজ কাপড়ের দামও বেশি। এতে লেপের দাম বেশি পড়ছে। তাই অনেকে নতুন লেপ তৈরি না করে পুরোনো লেপ মেরামত করছেন।

খুচরায় কম্বলের দরদাম

এদিকে ঢাকার বঙ্গবাজারের এনেক্সকো টাওয়ার ও গুলিস্তানের ঢাকা ট্রেড সেন্টার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরায় দেশি সাধারণ মানের সিঙ্গেল কম্বল বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। ডাবল পার্টের কম্বলের দাম ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। প্রিন্টের সিঙ্গেল ও ডাবল কম্বলের দাম ৫০০ থেকে হাজার টাকা। আর আমদানি করা কম্বলের মানভেদে দাম ২ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা।

এনেক্সকো টাওয়ারের শান্তা এন্টারপ্রাইজের বিক্রেতা সাগর হোসেন বলেন, ভালো মানের কম্বলের দাম ১ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি। সাধারণ কম্বলের দামও ৫০ টাকার মতো বেড়েছে। শীত কম পড়ায় খুচরা বিক্রি এখনো জমেনি।