চীনকে ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রের বড় বিনিয়োগ

উচ্চ প্রযুক্তির পণ্য উদ্ভাবন ও বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ২৮০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হবে।

চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা
ফাইল ছবি রয়টার্স

তথ্যপ্রযুক্তিশিল্পে একসময় ছিল যুক্তরাষ্ট্রের একাধিপত্য। এখনো বিশ্বের সব সেরা প্রযুক্তি কোম্পানি মার্কিন মালিকানাধীন। কিন্তু ১৯৭৯ সালে বাজার খুলে দেওয়ার পর চীন ধীরে ধীরে বিশ্বের প্রযুক্তিজগতের বড় খেলোয়াড়ে পরিণত হয়েছে। ইলেকট্রনিক শিল্পের মৌলিক পণ্য সেমিকন্ডাক্টর ও মাইক্রোচিপ উৎপাদনে তারা সবার চেয়ে এগিয়ে। আর এখানেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শঙ্কা।

চীনের কাছে প্রযুক্তিশিল্পে যুক্তরাষ্ট্রের পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কার কথা অনেক দিন ধরেই শোনা যাচ্ছে। দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেন, তখন একপর্যায়ে তিনি প্রযুক্তিযুদ্ধও শুরু করেন।

এ বাস্তবতায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চীনের সঙ্গে প্রযুক্তি লড়াইয়ে টেক্কা দিতে নতুন আইনে সই করেছেন। মোট ২৮০ বিলিয়ন বা ২৮ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করা হবে। এ আইনের আওতায় উচ্চ প্রযুক্তির পণ্য উদ্ভাবন ও বৈজ্ঞানিক গবেষণায় এ অর্থ ব্যয় করা হবে। শুধু তা–ই নয়, যাঁরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কম্পিউটার চিপ তৈরির লক্ষ্যে কারখানা তৈরি করবেন, তাঁদের কর ছাড় দেওয়া হবে। বিশ্বজুড়ে মাইক্রোচিপ–স্বল্পতার বাস্তবতায় দেশটি এ পদক্ষেপ নিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেটিক দলের শীর্ষ সিনেটর চাক শুমার বিবিসিকে বলেছেন, এ আইন খেলার গতি-প্রকৃতি বদলে দেবে। এর মধ্য দিয়ে আগামী শতকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত হবে।

শুমার আরও বলেন, ‘কর্তৃত্ববাদীরা আমাদের জন্য উল্লাস করছিল। তাদের আশা ছিল, আমরা কিছু না করে চুপচাপ বসে থাকব। এই চিপস ও বিজ্ঞান আইন প্রণয়ন করে আমরা এটা পরিষ্কার করার চেষ্টা করছি যে আমরা বিশ্বাস করি, সামনে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আরেকটি মহান শতাব্দী অপেক্ষা করছে।’

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, এটা এ প্রজন্মের সেরা বিনিয়োগ। এর ফল ইতিমধ্যে পাওয়া যেতে শুরু করেছে। মাইক্রন যে ৪০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে, সেখানে ৪০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে।

বর্তমানে বৈশ্বিক সেমিকন্ডাক্টর চাহিদার ১০ শতাংশের মতো জোগান দেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, গাড়ি থেকে শুরু করে মুঠোফোন—সবকিছু তৈরিতেই এটি প্রয়োজন। অথচ ১৯৯০ সালে বৈশ্বিক সেমিকন্ডাক্টরের ৪০ শতাংশ জোগান দিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের মতো ইউরোপীয় ইউনিয়নও কম্পিউটার চিপ তৈরিতে ৪০ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগ করছে।

ওয়াশিংটনের চীনা দূতাবাস যুক্তরাষ্ট্রের এ সেমিকন্ডাক্টর আইনের সমালোচনা করেছে। তাদের ভাষ্য, এটা স্নায়ুযুদ্ধের আমলের মানসিকতা।

চীন-যুক্তরাষ্ট্র দ্বৈরথ

প্রযুক্তিবিশ্ব নিজেদের করতলে আনতে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিযোগিতা করছে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। ১৯৮০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্র যখন আইবিএম ও মাইক্রোসফটের মাধ্যমে সামনে এগোচ্ছিল, তখন চীন ব্যস্ত ছিল একক ইন্টারনেট ব্যবস্থা গড়ে তুলতে। বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে আলাদাভাবে সম্পূর্ণ নিজেদের একক ইন্টারনেট ব্যবস্থা গড়ে তোলে চীন। পরবর্তীকালে রাশিয়াও চীনের সহযোগিতায় সে পথে অগ্রসর হয়। ২০২৫ সালের মধ্যে সম্পূর্ণ নিজেদের প্রযুক্তিজগৎ তৈরিতে কাজ করছে চীন।

বাস্তবতা হলো চীন নিজেকে এমন জায়গায় নিয়ে গেছে যে এখন তাকে ছাড়া বিশ্বের অন্য কোনো দেশের পক্ষে চলা সম্ভব নয়। সীমান্ত সংঘাতের ফলে ভারত চীনা পণ্য বর্জনের ডাক দিলেও বাস্তবে তা করে উঠতে পারছে না।

এদিকে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পশ্চিমা দেশের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রযুক্তি চুরির চেষ্টা চালাচ্ছে চীন—সম্প্রতি লন্ডনে এক যৌথ বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার প্রধানেরা এ অভিযোগ করেছেন। খবর টেকটাইমস।

ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) পরিচালক ক্রিস রে পশ্চিমা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সতর্ক দিয়ে বলেন, প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজারে সুবিধা পেতে বেইজিং তাদের প্রযুক্তি চুরির জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। অন্যদিকে যুক্তরাজ্যের এমআই৫-এর পরিচালক কেন ম্যাককালাম দাবি করেন, চীন সরকার বিশ্বজুড়ে গোপনে যে চাপ তৈরি করছে, সেটা তাদের জন্য সবচেয়ে বড় পরীক্ষার বিষয়।

আল–জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে চীন নিরাপত্তা সংস্থা দুটির দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, এ অভিযোগ চীনের রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে খাটো করার প্রচেষ্টা।