শুল্ক কমালেই দ্রব্যমূল্য কমবে, এমন ধারণা ঠিক নয়

ডলার–সংকট এত বেশি মাত্রায় যায়নি যে এটা নিয়ে সাংঘাতিকভাবে আতঙ্কিত হয়ে সবকিছু আমদানি বন্ধ করে দিতে হবে।

রহমাতুল মুনিম

সব ক্ষেত্রে দ্রব্যমূল্য বা ব্যয় বৃদ্ধির কারণ হিসেবে কর, আমদানি শুল্ক ইত্যাদিকে দেখানো হয়। অথচ উৎপাদনে অপচয় বা সিন্ডিকেট করে পণ্য বিক্রির মতো কারণগুলোর কথা বলা হয় না। আর কর ও শুল্ক কমালেই যে দ্রব্যমূল্য কমে যাবে, এমন ধারণা ঠিক নয়।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম গতকাল বুধবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় রাজস্ব ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন। আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরীক্ষা করে দেখেছি, যে পরিমাণে বাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়, সে তুলনায় করের পরিমাণটা অত বেশি না।’ তাই রাজস্ব আদায় কমানোর এমন দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। 

আজ ২৬ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস পালন করবে এনবিআর। ওয়ার্ল্ড কাস্টমস অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউসিও) সদস্যভুক্ত ১৮৩টি দেশ প্রতিবছর দিবসটি পালন করে থাকে। 

সাংবাদিকেরা ডলার সাশ্রয়ে শুল্ক বাড়িয়ে আমদানি কমানোর প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ বিভিন্ন কারণে সারা বিশ্বেই ডলার নিয়ে একটা বিরূপ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ কারণে সবাই চেষ্টা করছে যেন ডলারের পর্যাপ্ত মজুত থাকে। 

আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, দেশে ডলার নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। দেশে ডলারের অনেক সংকট আছে বলে আতঙ্ক ছড়ানোর মতো কোনো বিষয়ও নেই। ডলার–সংকট এত বেশি মাত্রায় যায়নি যে এটা নিয়ে সাংঘাতিকভাবে আতঙ্কিত হয়ে সবকিছু আমদানি বন্ধ করে দিতে হবে। 

এনবিআর চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘আমরা কিছু কিছু অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসী ধরনের পণ্য বাছাই করে সেসবের আমদানিকে নিরুৎসাহিত করার জন্য শুল্ক বাড়িয়েছি। এ ছাড়া ডলার সাশ্রয়ে আমাদের তরফ থেকে করার কিছু নেই। আমরা আমদানি বন্ধ করতে পারব না। আমদানি কমিয়ে ডলার সাশ্রয় সব সময় ভালো ফল আনবে কি না, সেটাও ভেবে দেখতে হবে। কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি, নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য, জ্বালানি ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে আমদানি কমিয়ে ডলার সাশ্রয়ের কথা ভাবলে চলবে না।’ 

গত বছরের তুলনায় আমদানি শুল্ক আদায় বেড়েছে বলে জানান রহমাতুল মুনিম। তিনি জানান, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি শুল্ক বাবাদ ৮৯ হাজার ৪২৩ কোটি ৮০ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছিল। চলতি ২০২২–২৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে আমদানি শুল্ক আদায় হয়েছে ৪৪ হাজার ৯৫১ কোটি  টাকা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৯ দশমিক ২৫ শতাংশ বেশি।