টিসিবি

সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ভর্তুকি মূল্যের পণ্য হোম ডেলিভারিতে পাওয়া যাচ্ছে বলে একটি বিজ্ঞাপন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। টিসিবি বলছে, এই প্রচারণা ‘ভুয়া’ এবং একটা চক্র বাড়িতে টিসিবির পণ্য পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে প্রতারণার মাধ্যমে অবৈধভাবে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

টিসিবি জানিয়েছে, বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া বা হোম ডেলিভারি করার মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করে না এই প্রতিষ্ঠান।

কারা এই প্রতারণার সঙ্গে জড়িত এবং কীভাবে কাজটি করা হচ্ছে, তা জানতে ফেসবুকে দেওয়া বিজ্ঞাপনে উল্লেখ করা মুঠোফোন নম্বরে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে ক্রেতা সেজে যোগাযোগ করা হয়। প্রথম কয়েক দফায় কল না ধরলেও, পরে নম্বরটি থেকে ফিরতি কল আসে প্রতিবেদকের কাছে।

তখন পণ্য পাওয়ার পদ্ধতি ও পরিচয় জানতে চাইলে নিজের নাম প্রেমকান্তি উল্লেখ করে একজন ব্যক্তি প্রথম আলোকে বলেন, পণ্য পেতে গেলে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান নগদ ও রকেটের মাধ্যমে ৭ হাজার ৯০ টাকা পরিশোধ করতে হবে। পরদিন ঠিকানামতো ৯ ধরনের পণ্য পৌঁছে যাবে।

প্রতিবদেক তখন বলেন যে তিনি সশরীরে তাদের ঠিকানায় এসে হাতে হাতে পণ্য নিতে চান। কিন্তু কথিত প্রেমকান্তি জানান, কোনো পণ্য সরাসরি গ্রাহকের কাছে সরবরাহ করা হবে না। একই সঙ্গে তিনি এও বলেন, এই পণ্য শুধু হোম ডেলিভারিতেই দেওয়া হয়, এমনকি ক্যাশ অন ডেলিভারিতে (মালামাল হাতে পাওয়ার পর টাকা পরিশোধ ব্যবস্থা) পণ্য দেওয়ার মতো ব্যবস্থাও নেই। ‘শুধু আগে টাকা পাঠালে কারওয়ান বাজার থেকে এই পণ্য সরবরাহ করা হবে’ বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য, সরকারি প্রতিষ্ঠান টিসিবির প্রধান কার্যালয় রাজধানীর ঢাকার কারওয়ান বাজারেই অবস্থিত। তবে সংস্থাটির পক্ষ থেকে বাড়ি বাড়ি পণ্য পৌঁছে দেওয়ার কোনো উদ্যোগ নেই বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এই চক্রটি মানুষের কাছ থেকে অবৈধভাবে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে টিসিবির পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়েছে।

এ ব্যাপারে টিসিবির মুখপাত্র হ‌ুমায়ূন কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভুয়া বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়টি আমাদের নজরে আসার পর আমরা সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানিয়েছি। এখন এই সমস্যা সমাধানে কাজ চলছে।’

এ কাজে যাঁরা জড়িত, তাঁদের চিহ্নিত করে সবার সচেতনতা বাড়ানোর জন্যও তিনি গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানান হ‌ুমায়ূন কবির।

হুমায়ূন কবির জানান, প্রতারণা এবং টিসিবির নাম ভাঙিয়ে পণ্য বিক্রির বিজ্ঞাপন দেওয়ার বিষয়টি জানিয়ে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ঢাকা মহানগর পুলিশকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, টিসিবির অংশীজনকেও এ ব্যাপারে অবগত এবং সতর্ক করা হয়েছে।
তবে শুধু হোম ডেলিভারিতে পণ্য দেওয়ার কথা বলে টাকা নেওয়া হচ্ছে, বিষয়টি সেখানেই সীমাবদ্ধ থাকছে না। ভুয়া বিজ্ঞাপন অনুযায়ী, টিসিবির নতুন কার্ড করে দেওয়ার কথা বলেও টাকা নেওয়া হচ্ছে। বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ৫৫০ টাকার বিনিময়ে তারা নতুন কার্ড দিচ্ছে।

প্রতি সপ্তাহের সোম, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার পণ্য ডেলিভারি দেওয়া হয় বলে বিজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে। মোট ৯ ধরনের পণ্যের দুটি প্যাকেজ একসঙ্গে নিলে একটি স্মার্টফোন ও ২৫টি প্যাকেজ নিলে একটি মোটরসাইকেল উপহারের ঘোষণাও দিয়েছে এই চক্রটি।

টিসিবি সাধারণত যেসব পণ্য ভর্তুকি মূল্যে দিয়ে থাকে তার মধ্যে থাকে—ডাল, চিনি, সয়াবিন ও পেঁয়াজ। আর রোজার মাস এলে ছোলা ও খেজুর বিক্রি করে সংস্থাটি। প্রতি কার্ডের বিপরীতে প্রতিবার এক কেজি চিনি, দুই কেজি মসুর ডাল, দুই লিটার সয়াবিন তেল ও দুই কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করে। প্রতি কেজি ডাল ৭০ ও চিনি ৬০ টাকা এবং প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১১০ টাকায় বিক্রি করে টিসিবি।

গত কয়েক মাস ধরে টিসিবি পেঁয়াজ বিক্রি করছে না। সেই হিসাবে টিসিবি যে এক কোটি পরিবারকে কার্ডের মাধ্যমে নিত্যপণ্য দিয়ে থাকে, তারা মাসে এখন একবার ডাল, চিনি ও সয়াবিন নিতে পারে। সেটা নিতে হয় নির্দিষ্ট পরিবেশকের দোকান থেকে। এর বাইরে টিসিবি ট্রাকে করে পণ্য বিক্রি করলেও এখন তা বন্ধ রয়েছে।

সুতরাং, টিসিবির পণ্য হোম ডেলিভারিতে (বাড়িতে বসে) পাওয়ার সুযোগ তো নেই, বরং টিসিবির পণ্য ট্রাকে করে খোলাবাজারেও বিক্রি হচ্ছে না। টিসিবির পণ্য পাচ্ছে শুধু পরিবার কার্ডধারীরা। অর্থাৎ যে চক্রটি বিভিন্ন পণ্য টিসিবির পণ্য হিসেবে বিক্রি করার কথা বলছে, সেই পুরো কাজটি তারা করছে অবৈধভাবে।

ডিলারের মাধ্যমে টিসিবি যে সব পণ্য দেয়, তার বাইরেও এই চক্রটি আরও কয়েকটি কিছু পণ্য দিচ্ছে বলে বিজ্ঞাপনে উল্লেখ করেছে। কিন্তু সেই পণ্য দাম পরিশোধ করা গ্রাহকেরা আদৌ পাচ্ছেন কি না, সে ব্যাপারে কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছে না; কারণ, পুরো বিষয়টি ঘটছে কর্তৃপক্ষের চোখের আড়ালে।