রোজার আগে চিনির দাম বাড়াল টিসিবি, ব্যবসায়ীরাও বাড়াচ্ছেন

টিসিবি চিনির দাম কেজিতে ৩০ টাকা বাড়িয়েছে। চট্টগ্রামভিত্তিক একটি চিনি কারখানার গুদামে আগুন লাগায় ব্যবসায়ীরাও দাম বাড়াচ্ছেন।

চিনি

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) কার্ডধারী এক কোটি পরিবারের মধ্যে যে চিনি বিক্রি করে থাকে, তার দাম কেজিতে ৩০ টাকা বাড়িয়েছে। এদিকে চট্টগ্রামভিত্তিক একটি চিনি কারখানার গুদামে আগুন লাগার ঘটনাকে অজুহাত হিসেবে দেখিয়ে ব্যবসায়ীরাও বাজারে দাম বাড়াচ্ছেন পণ্যটির। যদিও দেশের বাজারে চিনির বড় কোনো সংকট এখনো হয়নি। সরকারের নানা উদ্যোগের ফলে সাম্প্রতিক সময়ে চিনির দাম কিছুটা কমেও এসেছিল।

আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপটই এমন, যখন একটা দুর্ঘটনা ঘটে, তখন সুযোগ নিতে চায়। বাকি কারখানাগুলোর হাতে পর্যাপ্ত চিনি আছে। আমদানিও চলমান। সুতরাং বাজারে চিনির সংকট হবে না।
গোলাম রহমান, মহাসচিব, বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন

টিসিবি গতকাল বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, চলতি মাসে এক কোটি পরিবারের কাছে এক কেজি করে চিনি বিক্রি করা হবে। প্রতি কেজি চিনির দাম হবে ১০০ টাকা। আগে প্রতি কেজি ৭০ টাকায় বিক্রি করত টিসিবি। সেই হিসাবে টিসিবি চিনির দাম কেজিতে ৩০ টাকা বাড়াল।

দাম বাড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে টিসিবির মুখপাত্র হ‌ুমায়ূন কবির প্রথম আলোকে বলেন, ভর্তুকি কমাতে চিনির দাম সমন্বয় করতে হয়েছে। এরপরও সরকারকে আগের চেয়ে বেশি পরিমাণ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে।

মার্কিন ডলারের বাড়তি মূল্যের কারণে আমদানি খরচ বেশি পড়ায় দেশের বাজারে বেশ কয়েক মাস ধরে চিনির দাম বেশ চড়া। দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। অভিযান পরিচালনা করেছে। কয়েক দফা দাম বেঁধে দিয়েও তা কার্যকর করতে পারেনি। সর্বশেষ গত মাসে চিনি আমদানির ওপর শুল্ক কমিয়েছে সরকার। তাতে সাম্প্রতিক সময়ে চিনির দাম কিছুটা কমেছে।

কিন্তু চট্টগ্রামভিত্তিক একটি চিনি কারখানার গুদামে অগ্নিকাণ্ডের পর দাম বাড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। গত দুই দিনে চট্টগ্রামের বাজারে পাইকারি পর্যায়ে চিনির দাম কেজিতে ১ থেকে ২ টাকা বেড়েছে। অন্যদিকে খুচরায় দাম বেড়েছে ৫ টাকা পর্যন্ত। খুচরায় এখন প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৪২ থেকে ১৫০ টাকা। চট্টগ্রামের এই ঘটনার প্রভাব পড়েছে ঢাকার বাজারেও। ঢাকার পাইকারি বাজারে গতকাল প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) চিনির দাম ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে। তাতে প্রতি বস্তা ৬ হাজার ৬০০ থেকে বেড়ে ৬ হাজার ৭০০ টাকা হয়েছে। ঢাকার খুচরা বাজারে অবশ্য এখনো সেভাবে প্রভাব পড়েনি।

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, একটি কারখানায় আগুন লাগলেও তাতে বাজারে চিনির বড় কোনো সংকট তৈরি হয়নি। এ ছাড়া বাজার কমতির দিকে ছিল। এখন পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী চিনির দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করছেন। রোজায় চিনির চাহিদা বাড়ে। এই সুযোগই নিতে চাইছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ও দেশবন্ধু গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) গোলাম রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপটই এমন, যখন একটা দুর্ঘটনা ঘটে, তখন সুযোগ নিতে চায়। বাকি কারখানাগুলোর হাতে পর্যাপ্ত চিনি আছে। আমদানিও চলমান। সুতরাং বাজারে চিনির সংকট হবে না।’

আরও পড়ুন

চট্টগ্রামের বাজার যেমন

গত সোমবার বিকেলে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার এস আলম সুপার রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজের একটি গুদামে আগুন লাগে। এই কারখানা বড় সরবরাহকারী। গতকাল চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত তিন দিনে সরবরাহ আদেশে (এসও) কেজিতে ৫০ পয়সার মতো বেড়েছে চিনির দাম। সোমবার এসওতে প্রতি কেজি চিনি ১৩৩ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা গতকাল ১৩৩ টাকা ৫০ পয়সায় উঠেছে।

দু-এক দিনের মধ্যে আগুনে পোড়া কারখানাটি উৎপাদনে ফিরবে জানিয়ে এস আলম সুপার রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজের মহাব্যবস্থাপক মো. আকতার হোসেন বলেন, একটি গুদামে আগুন লাগলেও আরও চারটি গুদাম আছে। তাতে চিনির বাজারে প্রভাব পড়বে না।

জানা গেছে, এস আলম সুপার রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজের কারখানার পাঁচটি গুদাম রয়েছে। প্রতিটি গুদামের ধারণক্ষমতা ৬০ হাজার টন। এর মধ্যে কারখানার ১ নম্বর গুদামে আগুন লাগে। এই গুদামে কী পরিমাণ চিনি নষ্ট হয়েছে, তা নিয়ে গতকাল ঢাকায় বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, সেখানে ২০ থেকে ৩০ হাজার টন চিনি ছিল। এতে বাজারে সংকট হবে না বলে মনে করেন তিনি।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, গত তিন মাসে (ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি) দেশে চিনি আমদানি হয়েছে ৩ লাখ ২৪ হাজার টন। গত বছর রোজার আগে আমদানি হয়েছিল সাড়ে ৪ লাখ টন।