বেসরকারি খাতের জন্য ‘উৎসাহব্যঞ্জক’ বাজেট করা হবে: অর্থমন্ত্রী

রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে ‘প্রাক্‌-বাজেট আলোচনা: বেসরকারি খাতের প্রত্যাশা’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। আজ রোববারছবি: প্রথম আলো

আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বেসরকারি খাতের জন্য একটি উৎসাহব্যঞ্জক বাজেট করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। তিনি বলেন, বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতের মতামত ও প্রত্যাশাকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে।

আজ রোববার রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে ‘প্রাক্‌-বাজেট আলোচনা: বেসরকারি খাতের প্রত্যাশা’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী এ কথা বলেন। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), দৈনিক সমকাল এবং চ্যানেল টোয়েন্টিফোর যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে।

ডিসিসিআইয়ের সভাপতি আশরাফ আহমেদের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সদস্য মো. আবুল কালাম আজাদ, সংসদ সদস্য ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ, এবং সম্মানিত অতিথি ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর হাবিবুর রহমান।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কাজ শুরু করেছি মাসখানেক হলো। বেশ বাধার সম্মুখীন হচ্ছিলাম। এরই মধ্যে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছি। রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক। যদিও ২০২৩ পর্যন্ত চলতি হিসাবের ঘাটতি রয়েছে। তবে রাজস্ব বৃদ্ধি, সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, দেশের আর্থিক খাতের সুশাসন প্রতিষ্ঠা, আমদানির বিকল্প শিল্প প্রতিষ্ঠাসহ অন্য উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডগুলোকে আগামী অর্থবছরের বাজেটে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে।’

আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমানও স্থিতিশীল রয়েছে এবং সর্বশেষ ৬ মার্চ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার।

বেসরকারি খাতকে সরকার অর্থনীতির চালিকা শক্তি হিসেবে বিবেচনা করে বলেই এ খাতের প্রবৃদ্ধি এবং উন্নয়নের জন্য সরকার বরাবরই সহায়ক ভূমিকা পালন করে আসছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও টেকসই স্মার্ট দেশ হিসেবে গড়ে তোলা হবে। এ লক্ষ্য অর্জনে বেসরকারি খাতের অংশীদারত্ব অপরিহার্য এবং এ খাতের উন্নয়নের মাধ্যমেই তা সম্ভব হবে।

বেসরকারি খাতের উন্নয়নে আয়কর, মূসক ও শুল্কসংক্রান্ত আইন প্রণয়ন এবং সংস্কারের মাধ্যমে করকাঠামোর সক্ষমতা বৃদ্ধি, স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা চালু করা, কর দেওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করা, ঋণের সুদহার যৌক্তিক করা, অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং ব্যবসায়ীদের জন্য নানা ধরনের প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী।

আবুল হাসান মাহমুদ আলী মনে করেন, অর্থনীতিতে বেসরকারি খাতের অবদান বাড়লেও কিছু কাঠামোগত সংস্কার করা প্রয়োজন। বাজেটে সে বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হচ্ছে। এ জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, রাজস্ব আহরণ বাড়াতে ৫০ লাখ টাকার পরিবর্তে ১০ লাখ বা তার বেশি মূসক পরিশোধে ই-পেমেন্ট, ই-চালান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ ছাড়া মূসক জাল সম্প্রসারণে ঢাকা ও চট্টগ্রামে প্রাথমিক পর্যায়ে সাত হাজার এবং ক্রমান্বয়ে তিন লাখ ইলেকট্রনিক ফিসকাল ডিভাইস (ইএফডি) মেশিন স্থাপনের জন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে।

প্রধান রপ্তানি গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ এবং বাণিজ্য সহযোগী অন্য দেশগুলোতে ভবিষ্যতে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক থাকবে—এমন মন্তব্য করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের জন্য এটা একটা ভালো সংবাদ। বিশ্বব্যাপী এবং প্রতিবেশী দেশগুলোতে ২০২৩ সালে মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও ২০২৪ সালে তা ৫ দশমিক ৮ শতাংশে নামবে বলে আশা করা যাচ্ছে।’

অর্থমন্ত্রী বলেন, অর্থনীতির গতিধারা একটা চলমান প্রক্রিয়া। এখন ভালো আছে। পূর্বাভাসটা ভালো আছে। আমাদের কাজে এটা সাহায্য করবে। যেমন ২০২৪ সালের প্রথমার্ধে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও বর্তমানে ৮২ দশমিক ৫ ডলারে নেমে এসেছে।

২০০৯-১০ থেকে ২০২২-২৩ পর্যন্ত জিডিপির প্রবৃদ্ধির গড় হার ৬ দশমিক ৬০ শতাংশের ওপর রাখতে পারাকে সরকারের সাফল্য আখ্যা দিয়ে অর্থমন্ত্রী তাঁর মতো করে আরও কিছু সাফল্যের কথা তুলে ধরেন। এগুলো হচ্ছে বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৫ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা, মূল্যস্ফীতি ধীরে ধীরে কমিয়ে আনা, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখা, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি ইত্যাদি।

তবে আগামী বাজেট সামনে রেখে আয়কর ও মূসক, আর্থিক খাত, শিল্প ও বাণিজ্য এবং অবকাঠামো উন্নয়ন—এ খাতের আলাদা সমস্যা চিহ্নিত করে যেসব প্রস্তাব ডিসিসিআই দিয়েছে, সেসব বিষয় নিয়ে অর্থমন্ত্রী কোনো মন্তব্য করেননি।

ঢাকা চেম্বারের সাবেক চার সভাপতি আফতাবুল ইসলাম, রিজওয়ান রহমান, সামীর সাত্তার ও শামস মাহমুদ, বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, গবেষণা সংস্থা পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান এম মাশরুর রিয়াজ, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সাবেক কমিশনার আরিফ খান, এনবিআরের সাবেক সদস্য ফরিদ উদ্দিন, ইউনিলিভার বাংলাদেশের কর বিভাগের প্রধান সাঈদ আহমেদ খান, সোনালী আঁশ ইন্ডাস্ট্রিজের এমডি মাহবুবুর রহমান পাটওয়ারি, ইফাদ গ্রুপের পরিচালক তাসকিন আহমেদ, কনফিডেন্স গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান ইমরান করিম, সামিট অ্যালায়েন্স পোর্টের এমডি সৈয়দ আলী জওহর রিজভী নানা বিষয়ে কথা বললেও অর্থমন্ত্রী লিখিত বক্তব্যের বাইরে কোনো কিছুরই জবাব দেননি।

অর্থমন্ত্রী যে বক্তব্য লিখে নিয়ে আসেন তাতে উল্লেখ রয়েছে, ‘ঢাকা চেম্বার আয়োজিত গুরুত্বপূর্ণ বাজেট প্রস্তাবগুলো বিশ্লেষণ করে যৌক্তিক প্রস্তাবগুলো বিবেচনা করব।’