বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদের অস্থায়ীভাবে বসানোর ব্যবস্থা হচ্ছে

বঙ্গবাজারে এখন ধ্বংসস্তূপ। সব হারানোর পরও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা। সড়কের পাশে দোকান সাজিয়ে বসতে বিভিন্ন জায়গা থেকে মালামাল আনছেন তাঁরা। গতকাল দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবাজার এলাকায়
ছবি: আশরাফুল আলম

ধ্বংসস্তূপ না সরানোর ফলে বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরা আশপাশের ফুটপাতে দোকান নিয়ে বসেছেন। তবে একটু বিলম্ব হলেও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের মঙ্গল থেকে বুধবারের মধ্যে চৌকি বসিয়ে পোড়া মার্কেটের স্থানে ব্যবসা শুরুর ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। সে ক্ষেত্রে আজ সোমবারের মধ্যে বেশির ভাগ ধ্বংসাবশেষ সরানোর ব্যাপারে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ শেষ হলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের তালিকা চূড়ান্ত করে বসানোর ব্যবস্থা করা হবে।

গতকাল রোববার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ভবনের নিজ কার্যালয়ে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি ও বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠক শেষে মেয়র এসব কথা জানান। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের অনুদানের তহবিলে সামর্থ্যবান সবাইকে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকেও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের তহবিলে অর্থসহায়তা করা হবে বলে জানান তিনি।

শেখ ফজলে নূর তাপস গণমাধ্যমকে বলেন, আগামীকাল (সোমবার) থেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভিযান আরও জোরেশোরে চলবে। তাতে আশা করা যাচ্ছে সোমবারের মধ্যেই অধিকাংশ জিনিসপত্র সরানো সম্ভব হবে।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের তালিকার কাজ ৭০ শতাংশের মতো হয়েছে। এসব কাজ শেষ হলে আগামী মঙ্গল কিংবা বুধবারের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা যাতে চৌকিতে বসে ব্যবসা শুরু করতে পারেন, তেমন পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব হবে বলে মন্তব্য করেন ঢাকা দক্ষিণের মেয়র।

বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় তলায় যাদের দোকান ছিল, তাঁরা কোথায় বসবেন, এমন এক প্রশ্নের উত্তরে শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, প্রত্যেক ব্যবসায়ীকে ৫ ফুট বাই সাড়ে ৩ ফুট হিসাবে সাড়ে ১৭ বর্গফুট জায়গা দেওয়া হবে। সেখানেই ব্যবসায়ীরা বসবেন এবং ব্যবসা করতে পারবেন। ঈদের আগে তাঁদের ক্ষতি যাতে কিছুটা পোষাতে পারেন, সেই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে অর্থ অনুদান দেওয়া হবে বলে জানান মেয়র।

মেয়রের পাশে থাকা বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, তাঁরা দোতলার ব্যবসায়ীদেরও নিচের চৌকিতে বসার সুযোগ করে দেবেন। অনেকের দু-তিনটি দোকান ছিল। তবে আপাতত তাঁদের একটা জায়গা দেওয়ার হবে। তাতে সব ব্যবসায়ীর জন্য স্থান সংকুলান হবে বলে জানান তাঁরা। আপৎকালে সবাই যেন টিকে থাকতে পারেন, সেই বিবেচনায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বৈঠকে স্থানীয় সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন বলেন, ঢাকা শহরের সব মার্কেটের কমিটিকে দুর্ঘটনা এড়াতে দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের তহবিলে সামর্থ্যবান সবাইকে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

এফবিসিসিআইয়ের ১ কোটি ও হিজড়াদের ২০ লাখ টাকা অনুদান

বঙ্গবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের জন্য ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) ১ কোটি টাকার অনুদান দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে এই ঘোষণা দেন।

বঙ্গবাজার পরিদর্শনকালে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখানকার ব্যবসায়ীদের বসার জায়গাজনিত সমস্যার স্থায়ী সমাধানের এটাই সবচেয়ে ভালো সময়। এখনই সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, কীভাবে এই ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন নিশ্চিত করা যায়। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন হিসেবে আমরা সব সময় ব্যবসায়ীদের পাশে থাকব।’

এর আগে বাংলাদেশের হিজড়া জনগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে বঙ্গবাজারের আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ২০ লাখ ও রাজধানীর উত্তরার হিজড়াদের পক্ষ থেকে ২ লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কুমিল্লা থেকে ২৬ লাখ, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মীদের এক দিনের বেতন ২ লাখ টাকাসহ অর্ধকোটি টাকার মতো অনুদান গতকাল তহবিলে যোগ হয়েছে। ঢাকা সিটি করপোরেশনের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, গতকাল বিকেল পর্যন্ত সব মিলিয়ে ২ কোটি টাকার মতো অনুদান পাওয়া গেছে।

তবে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন নগদ অর্থ দেওয়াকে নিরুৎসাহিত করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সবাইকে বলব, যাঁরা সহযোগিতা করবেন, নগদ টাকা না দিয়ে ব্যাংকে টাকা দিন। তাতে বিষয়টি সবার জন্য সহজ হবে, স্বচ্ছতা থাকবে। আমরা চাই পুরো প্রক্রিয়া নিয়ে কেউ প্রশ্ন না তুলুক এবং অনুদানের পুরো অর্থ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের কল্যাণে ব্যয় হোক।’

পোড়া দোকানে রং ও নামফলক লেগেছে

তীব্র ইচ্ছাশক্তির জোরে ভয়াবহ আগুনে পুড়ে নিঃস্ব হয়েও সপ্তাহ না পেরোতেই ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছেন বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরা। দোকান পুড়ে যাঁরা নিঃস্ব হয়েছেন, তাঁদের অনেকে ইতিমধ্যে ফুটপাতে ব্যবসা শুরু করেছেন। আগুনে পুরোটা পুড়ে যাওয়া আশপাশের পাকা দোকানে এবার রঙের আঁচড় লাগতে শুরু করেছে। কেউ কেউ নতুন সাজগোজ করে দোকানে মালামালও তুলে ফেলেছেন।

বঙ্গ হোমিও মার্কেটের নিচতলার পাশের তাফসির তানিম ফ্যাশনের মালিক শফিকুল ইসলাম ইতিমধ্যে রঙের কাজ শেষ করে নতুন করে মালামাল উঠিয়েছেন।

তবে শুধু রং লাগানো নয়, অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নতুন করে সাইনবোর্ড বা নামফলক টানিয়ে অস্তিত্বের জানান দেওয়ারও চেষ্টা করছে। স্টাইল লাইফ নামের একটি প্রতিষ্ঠানে দেখা গেল নতুন সাইনবোর্ড। বঙ্গ হোমিও মার্কেটের দোতলায় থাকা প্রতিষ্ঠানটি আগুনে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।

তবে এসব দোকানে বেচাকেনা এখনো সেভাবে শুরু হয়নি। ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের সামনের ফুটপাতে অস্থায়ীভাবে বসা নূর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সকাল থেকে বিকেল হয়ে এলেও মাত্র ৪০০ টাকার জামা-প্যান্ট বেচতে পেরেছি।’