বন্ধুদের কথা শুনব, কিন্তু ‘কারও মাতব্বরির প্রয়োজন নেই’: পরিকল্পনামন্ত্রী
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, ‘বিদেশি বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর পরামর্শ সরকার শুনবে। তবে কোনো বন্ধুদেশ আমাদের পরিচালনা করবে না। আমরা আমাদের পথ নিজেরাই ঠিক করব।’
আজ রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিনিয়োগ ভবনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিশ্ব যুব দক্ষতা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভাটির আয়োজন করে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এনএসডিএ)।
সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। সভাপতিত্ব করেন এনএসডিএর নির্বাহী চেয়ারম্যান নাসরীন আফরোজ।
অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘বন্ধুদেশ ও তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব ভালো বিষয়। বন্ধুদের সঙ্গে বসে আমরা চা খাব, তাদের কথা শুনব। এটা ঠিকই আছে। কিন্তু বন্ধুরা আমাদের পরিচালনা করবে না। বন্ধুদের এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা আমাদের পথ নিজেরাই ঠিক করব। আমরা আমাদের ভালো-মন্দ নিজেরাই বুঝি।’
এ সময় দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ‘কারও মাতব্বরির প্রয়োজন নেই’ বলে মন্তব্য করেন পরিকল্পনামন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা এমন কোনো কাজ করিনি যে মাথা নিচু করে বাঁচতে হবে। বিদেশি সাহেবরা আসবেন ব্যাগ হাতে নিয়ে। আপনারা ঘুরে বেড়ান, চা খান, সুন্দর গল্প করুন। কিন্তু আমাদেরকে আমাদের কাজটা করতে দিন।’
দেশের উন্নয়নের জন্য স্থিতিশীলতা ও ধারাবাহিকতা প্রয়োজন—এমন মন্তব্য করে এম এ মান্নান বলেন, ‘গত ১৪ থেকে ১৫ বছরে দৃঢ় নেতৃত্বের ফলে এবং ধারাবাহিকভাবে কাজ করার সুযোগ শেখ হাসিনা পেয়েছেন বলে আমরা অনেক সমস্যার সমাধান করতে পেরেছি। যাঁরা গবেষক, পণ্ডিত মানুষ আছেন, তাঁরা আমাদের কার্যক্রম নিয়ে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিচার-বিবেচনা করবেন। কিন্তু আমরা যারা মাঠে রয়েছি, তারা কাজটা করে যেতে চাই। এ জন্য প্রয়োজন শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল পরিবেশ।’
গতকাল শনিবার এফবিসিসিআই আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে আগামী মেয়াদেও শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চেয়েছেন দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা। এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘আজ পত্রিকায় পড়লাম, বেসরকারি খাতের লোকেরা বিশাল বক্তব্য রেখে দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিষয়ে স্পষ্ট কথা বলেছেন। দেশের অর্থনীতির ৮০ থেকে ৮২ শতাংশ ক্ষেত্রে বেসরকারি খাত ভূমিকা রাখে। সুতরাং তাদের বলার হক আছে। রাজনীতি ও অর্থনীতির অবস্থান খুব দূরে নয়। একটা আরেকটাকে প্রভাবিত করে। সুতরাং সত্য কথা বলতে ভয় পাওয়া বা লজ্জা পাওয়ার কোনো কারণ নেই।’
এম এ মান্নান আরও বলেন, ‘গতকাল ব্যবসায়ীরা যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা অত্যন্ত সময়োপযোগী। এটা শুধু রাজনৈতিক বক্তব্য নয়; আর্থরাজনৈতিক বক্তব্য। এ মুহূর্তে আমাদের দেশের প্রধান কাজ হলো উন্নয়ন। এর কোনো বিকল্প নেই।’
এ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘দেশের ব্যবসায়ীরা গতকাল প্রধানমন্ত্রীকে সমর্থন দিয়েছেন। এই সমর্থন দেওয়া হয়েছে দেশের স্থিতিশীলতার জন্য। বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমাদের অন্য কাউকে পরীক্ষা করার সময় নেই। যিনি পরীক্ষিত আছেন, তাঁকেই আমাদের প্রয়োজন।’
অনুষ্ঠানে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির ওপর জোর দিয়ে বক্তব্য দেন পরিকল্পনামন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘শুধু ইতিহাসের রাজা-বাদশাহদের নাম পড়ে ফায়দা নেই; আমাদের বিভিন্ন কারিগরি বিষয়ে আরও দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে।’
দক্ষতা বৃদ্ধির প্রসঙ্গে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, বিদেশে কোনো চাহিদা দেখলেই যেনতেনভাবে লোক পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাঁদের ন্যূনতম প্রশিক্ষণ দিয়ে পাঠালে প্রবাসী আয় আরও দু-তিন গুণ বৃদ্ধি পাবে। এমনকি দেশের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত খাতেও দক্ষ লোকের অভাব রয়েছে। এ কারণে সেসব খাতে বিদেশিরা কাজ করছেন।
জসিম উদ্দিন আরও বলেন, যুগ যুগ ধরে অনেক প্রতিষ্ঠান দক্ষতা উন্নয়নের বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু তাদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। এ জন্য এনএসডিএকে শক্তিশালী করার পরামর্শ দেন তিনি।