অনলাইনে বিও হিসাব খুলতে বিনিয়োগকারীদের সাড়া কম

অনলাইনে শেয়ারবাজারে বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাব খোলায় আশানুরূপ সাড়া মিলছে না। নতুন এ ব্যবস্থা চালু হওয়ার প্রায় এক বছরে মাত্র ৬ হাজার ২১৭টি হিসাব খোলা হয়েছে। আর এ পর্যন্ত ৬৬টি ব্রোকারেজ হাউস অনলাইনে বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব খোলার নতুন ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ২০০-এর বেশি বিও হিসাব খুলতে পেরেছে মাত্র পাঁচটি ব্রোকারেজ হাউস।

বিভিন্ন বিনিয়োগকারী ও ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, অনলাইনে বিও হিসাব খোলার ব্যবস্থা চালু করা হলেও টাকা জমা বা উত্তোলনের সুবিধা এখনো অনলাইনে চালু হয়নি। এ কারণে বিনিয়োগকারীরা অনলাইনে বিও হিসাব খোলার ক্ষেত্রে যেমন খুব একটা উৎসাহী পাচ্ছেন না, তেমনি ব্রোকারেজ হাউসগুলোও এ সেবা দিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না।
একাধিক ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ নির্বাহীরা প্রথম আলোকে জানান, বাংলাদেশে অনেক ব্যাংক এখনো পুরোপুরি রিয়েল টাইম (তাৎক্ষণিকভাবে জমা) অনলাইন লেনদেন ব্যবস্থা চালু করতে পারেনি। যে কারণে কোনো গ্রাহক অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বিও হিসাবে টাকা জমা দিলে তা ব্রোকারেজ হাউস পর্যন্ত আসতে কয়েক দিন লেগে যায়। রিয়েল টাইম অনলাইন ব্যবস্থা চালু না হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা অনলাইনে বিও হিসাব খুলে শেয়ার কেনাবেচার সুবিধার সুফল পাচ্ছেন না।

গত বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি আনুষ্ঠানিকভাবে অনলাইনে বিও হিসাব খোলার সুবিধাটি চালু করে।

শীর্ষ নির্বাহীরা আরও বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশিদের বেলায়ও বিও হিসাব খোলা যত সহজ, তার বিপরীতে টাকা জমা বা উত্তোলন করা তত সাবলীল নয়। তাই প্রবাসীরাও আগ্রহী হচ্ছেন না। অথচ প্রবাসীদের বেশি করে শেয়ারবাজারে যুক্ত করতে অনলাইনে বিও হিসাব খোলার ব্যবস্থাটি চালু করেছিল বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
গত বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি আনুষ্ঠানিকভাবে অনলাইনে বিও হিসাব খোলার সুবিধাটি চালু করে। এর আগে গত বছরের জানুয়ারি থেকে পরীক্ষামূলকভাবে এ সুবিধা চালু করে শেয়ার ও বিও হিসাব সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ডিপজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল)।

এখন পর্যন্ত মাত্র ৬৬টি ব্রোকারেজ হাউস অনলাইনভিত্তিক এ সেবার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। অথচ দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জেরই (ডিএসই) একক সদস্য হচ্ছে ২৫০টি ব্রোকারেজ হাউস। আর চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) একক সদস্য ব্রোকারেজ হাউস ১০১টি।

এখন পর্যন্ত মাত্র ৬৬টি ব্রোকারেজ হাউস অনলাইনভিত্তিক এ সেবার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। অথচ দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জেরই (ডিএসই) একক সদস্য হচ্ছে ২৫০টি ব্রোকারেজ হাউস। আর চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) একক সদস্য ব্রোকারেজ হাউস ১০১টি। এ ছাড়া ৪৮টি ব্রোকারেজ হাউস ডিএসই ও সিএসই উভয় প্রতিষ্ঠানের সদস্য। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনলাইনে বিও হিসাব খোলায় বেশি আগ্রহ না থাকায় ব্রোকারেজ হাউসগুলোও এতে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে না।

এখন পর্যন্ত অনলাইনে বিও হিসাব খোলার শীর্ষে রয়েছে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইউসিবি স্টক ব্রোকারেজ। প্রতিষ্ঠানটি গত এক বছরে অনলাইনে ২ হাজার ৩৪৫টি বিও হিসাব খুলেছে।

সিডিবিএল সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত অনলাইনে বিও হিসাব খোলার শীর্ষে রয়েছে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইউসিবি স্টক ব্রোকারেজ। প্রতিষ্ঠানটি গত এক বছরে অনলাইনে ২ হাজার ৩৪৫টি বিও হিসাব খুলেছে। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজ। প্রতিষ্ঠানটি ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত ৯৮১টি বিও হিসাব খুলেছে অনলাইনে। তৃতীয় অবস্থানে থাকা ব্র্যাক ইপিএল স্টক ব্রোকারেজ খুলেছে ৬৫৬টি হিসাব। আর আইডিএলসি সিকিউরিটিজ ৫০৪টি ও ব্যাংক এশিয়া সিকিউরিটিজ ৪১২টি হিসাব খুলেছে।

অনলাইন ব্যবস্থাটি চালু হয়েছে খুব বেশি দিন হয়নি। আবার বেশির ভাগ ব্রোকারেজ হাউস এখনো এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত নয়। বর্তমানে যেসব ব্রোকারেজ হাউসের অনলাইন ব্যাংকিংয়ের সুবিধা রয়েছে, তারাই এগিয়ে আছে।
মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন, এমডি, আইডিএলসি সিকিউরিটিজ

জানতে চাইলে আইডিএলসি সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, অনলাইন ব্যবস্থাটি চালু হয়েছে খুব বেশি দিন হয়নি। আবার বেশির ভাগ ব্রোকারেজ হাউস এখনো এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত নয়। বর্তমানে যেসব ব্রোকারেজ হাউসের অনলাইন ব্যাংকিংয়ের সুবিধা রয়েছে, তারাই এগিয়ে আছে। এ নিয়ে প্রচার-প্রচারণাও কম। তাই সাড়াও কম। তবে রিয়েল টাইম ব্যাংকিং সুবিধা চালু করা গেলে তার সুফলও শেয়ারবাজারে মিলবে।
বর্তমানে একেক ব্রোকারেজ হাউস বিও হিসাব খোলার ক্ষেত্রে একেক রকম ফি বা মাশুল নেয়। ব্রোকারেজ হাউসভেদে এ মাশুল ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে অনলাইনে বিও হিসাব খোলার ক্ষেত্রে এ ফি হবে সর্বজনীন। মাত্র ৪৫০ টাকা। অর্থাৎ মাত্র ৪৫০ টাকা দিয়ে বিনিয়োগকারীরা ঘরে বসে তাঁদের পছন্দের ব্রোকারেজ হাউসে বিও হিসাব খোলার সুযোগ পাবেন।

আরও পড়ুন

অনলাইনে বিও হিসাব খোলার পদ্ধতি
সিডিবিএলের পক্ষে অনলাইনে বিও হিসাব খোলার এই ব্যবস্থাটির তত্ত্বাবধানে রয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস বিভাগের প্রধান রাকিবুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে বিও হিসাব খুলতে যেসব কাগজপত্র লাগে, তার সবই লাগবে অনলাইনের ক্ষেত্রেও। বিও হিসাব খোলার জন্য যে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটি জমা করা যাবে আর্থিক লেনদেনের যেকোনো গেটওয়ে ব্যবহার করে।
বিও হিসাব খোলার প্রথম ধাপে একজন বিনিয়োগকারীকে নির্ধারিত ওয়েবসাইটে গিয়ে নিজের মোবাইল নম্বর ও ই-মেইল দিয়ে লগ-ইন করতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে ওই বিনিয়োগকারীর মোবাইল ও ই-মেইলে একটি গোপন পাসওয়ার্ড চলে যাবে। সেটি একবারই ব্যবহার করা যাবে, এ কারণে সেটি ওটিপি বা ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড হিসেবে পরিচিত। ওই পাসওয়ার্ড দিয়ে পরবর্তী ধাপে যেতে হবে বিনিয়োগকারীকে। এভাবে কয়েকটি ধাপে বিনিয়োগকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র, ব্যাংক হিসাব নম্বর, ব্যাংক চেকের কপি, নিজের ছবি, স্বাক্ষরের স্ক্যান কপি আপলোড করতে হবে।

আরও পড়ুন

এরপর বিনিয়োগকারী তাঁর পছন্দের ব্রোকারেজ হাউস নির্বাচন করবেন। তখন তাঁর আবেদনটি পছন্দের ব্রোকারেজ হাউসে চলে যাবে। ব্রোকারেজ হাউসের পক্ষ থেকে যাচাই-বাছাইয়ের পর সব ঠিকঠাক থাকলে সেই আবেদন গ্রহণ করা হবে। তখন স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে একটি নোটিফিকেশন চলে যাবে বিনিয়োগকারীর মুঠোফোন ও ই-মেইলে। তখন বিনিয়োগকারীকে বিও হিসাব খোলার ফি জমা দিতে হবে। এরপর ব্রোকারেজ হাউস সিডিবিএলের সিস্টেমে বিও হিসাবটি আপলোড করে দেবে। আর বিনিয়োগকারী মুঠোফোন ও ই-মেইলে পেয়ে যাবেন ‘সাকসেসফুল’ বার্তা।
রাকিবুল ইসলাম চৌধুরী প্রথম আলোকে আরও জানান, শুধু দেশের বিনিয়োগকারীরাই নন, বিদেশে বসে প্রবাসী বাংলাদেশিরাও অনলাইনে বিও হিসাব খুলতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে তাঁদের পাসপোর্টের স্ক্যান কপি আপলোড করতে হবে। অনলাইনে বিও হিসাব খুললে তাতে বিনিয়োগকারীদের সময় ও খরচ বাঁচবে।