কিছুই কমেনি, অস্বস্তি আরও বাড়ল

  • আলু কেজি ৩৬-৪০ টাকা

  • ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ১৩০-১৩৫ টাকা

  • পেঁয়াজ দেশি পেঁয়াজের কেজি ৬৫-৭০ টাকা

  • ভারতীয় কেজি ৫০-৫৫ টাকা

সবজির দাম দুই মাস ধরেই চড়া। এর মধ্যে ব্রয়লার মুরগির দাম অস্বস্তি আরও বাড়াল। ঈদুল আজহার পর থেকে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছিল ১১০ থেকে ১১৫ টাকায়। এখন বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়।

চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, চিনি, সবজি, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, আদা ও ডিমের দামে স্বস্তি নেই। করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের আয় কমে যাওয়া, নতুন করে অনেকের দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাওয়া, চাকরি হারানো ও ব্যবসায় বিক্রি কমে যাওয়ার মধ্যে বাজারের এই অস্বস্তি অনেক মানুষকে আরও সংকটে ফেলেছে। বিশেষ করে মোটা চাল, সবজি, আলু, পেঁয়াজ ও ডিম—এ পাঁচটি পণ্যের দাম বেশি হওয়ায় বিপাকে পড়েছে মানুষ। সীমিত আয়ের সংসারে ব্যয়ের বড় অংশ চলে যাচ্ছে এসব পণ্য কেনার পেছনে।

বাজারে আলুর কেজি এখন ৩৬ থেকে ৪০ টাকা। ঠিক এক মাস আগে প্রতি কেজি আলু ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। তখন এক সপ্তাহের মতো ওই দাম ছিল। পরে দাম কমে আবার কেজি ৩৫ টাকা হয়। এ সপ্তাহে দাম আবার বাড়ল।

শীতের শেষ দিকে মৌসুম শুরুর পর বাজারে আলু সাধারণত ২০ টাকা কেজির মধ্যে থাকে। আবার শীতের আগে হিমাগারে আলুর মজুত যখন কমে যায়, তখন আলুর দাম ৩০ টাকার আশপাশে থাকে। এবার অনেক আগেই আলুর দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গেল। সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, এক বছর আগের তুলনায় আলুর দাম বেড়েছে ৬৪ শতাংশ।

মোটা চাল, সবজি, আলু, পেঁয়াজ ও ডিম—এ পাঁচটি পণ্যের দাম বেশি হওয়ায় বিপাকে পড়েছে মানুষ।

ঢাকার কারওয়ান বাজারের আড়ত বিক্রমপুর ভান্ডারে প্রতি কেজি আলু ২৯ থেকে ৩২ টাকা দরে (পাইকারি) বিক্রি হচ্ছে। ছোট বাজার ও মহল্লার খুচরা দোকানে গিয়ে সেই আলু ৩৬ থেকে ৪০ টাকা হয়ে যাচ্ছে। এত দাম কেন, জানতে চাইলে বিক্রমপুর ভান্ডারের বিক্রেতা বাবুল মিয়া বলেন, এবার প্রচুর আলু ত্রাণ বিতরণে চলে গেছে। অন্যদিকে সবজির দাম বেশ চড়া। ফলে আলুর চাহিদা বেশি।

বাজারে এখন বেশির ভাগ সবজির প্রতি কেজির দাম ৫০ থেকে ৮০ টাকা। এ দরটি অনেক দিন ধরেই রয়েছে। কাঁচা মরিচের দামও কমছে না। আড়াই শ গ্রাম কাঁচা মরিচের দাম ৪০ থেকে ৫০ টাকা। মানভেদে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ২০০ টাকা।

পেঁয়াজের দাম বেড়েছিল গত সপ্তাহে। ভারতীয় পেঁয়াজের কেজি উঠেছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। আর দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। দুই দিন পরেই পাইকারি বাজারে দাম কমে যায়। খুচরায়ও কমেছিল। দেশি পেঁয়াজ ৬০ টাকা আর ভারতীয় ৫০ টাকায় নেমেছিল। দুদিন ধরে দাম আবার বাড়তি। খুচরা বাজারে এখন প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৬৫-৭০ এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ৫০-৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মসলাজাতীয় পণ্যের পাইকারি ব্যবসাকেন্দ্র পুরান ঢাকার শ্যামবাজারের আড়তমালিক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, পাইকারিতে কেজিপ্রতি দাম ৫ টাকার মতো বেড়ে ভারতীয় পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৪২ টাকা ও দেশি পেঁয়াজ ৫২ থেকে ৫৪ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, মিয়ানমার ও পাকিস্তান থেকে পেঁয়াজ আমদানির চেষ্টা চলছে। এক সপ্তাহ পর ওই পেঁয়াজ এলেই দাম কমতে পারে।

বাজারে দেশি রসুন ১২০ থেকে ১৪০ টাকা ও চীনা রসুন ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আদার দাম আগের মতোই চড়া। চীনা আদা প্রতি কেজি ২০০ থেকে ২৪০ টাকা এবং ভারতের কেরালার আদা ১৬০ টাকার আশপাশে চাইছেন বিক্রেতারা।

বাজারে ফার্মের মুরগির বাদামি ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১০৫ থেকে ১১০ টাকায়।

মোটা চালের কেজি ৪৪ থেকে ৪৮ টাকা, মাঝারি চাল ৫০ থেকে ৫৩ টাকা এবং সরু চাল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা চাইছেন খুচরা বিক্রেতারা।

গত মাসে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ৪ টাকা বাড়িয়েছিল কোম্পানিগুলো। নতুন দামের তেল বাজারে এসেছে। এতে পাঁচ লিটারের বোতলের মোড়কে লেখা হয়েছে ৫৩০ থেকে ৫৫০ টাকা।

বাজারে ইলিশ মাছের দামই তুলনামূলক কম। এক কেজি ওজনের একেকটি ইলিশ ৭৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে; যা সাধারণত হাজার টাকার ওপরে থাকে। তেজগাঁও কলমিলতা বাজারে গতকাল কেনাকাটা করতে গিয়েছিলেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী শামসুল হক। জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটু কম দামে কেনার মতো কিছুই নেই।