জেএমআই হসপিটালের শেয়ারের তিন দিনের নিলাম পাঁচ সেকেন্ডে শেষ

নিলামে মাত্র পাঁচ সেকেন্ডে বিক্রি হয়ে গেল ৮৮ লাখ শেয়ার। এটি ঘটেছে বুকবিল্ডিং পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত জেএমআই হসপিটাল রিকুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির শেয়ারের নিলামে। মাত্র পাঁচ সেকেন্ডে নিলামের জন্য নির্ধারিত শেয়ার বিক্রি হয়ে যাওয়ায় অধিকাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীই আবেদন করেও কোনো শেয়ার পাননি। তাই গতকাল সোমবার শেয়ারবাজারজুড়ে এ নিয়ে ছিল নানা আলোচনা–সমালোচনা।

নিলামে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রির জন্য ৮৮ লাখ ২৩ হাজার ৫২০টি শেয়ার বরাদ্দ ছিল। ৯ থেকে ১২ জানুয়ারি বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত টানা ৭২ ঘণ্টা এ নিলাম অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৯ জানুয়ারি বিকেল পাঁচটায় জেএমআই হসপিটালের শেয়ারের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশের নিলাম শুরু হয়। বুকবিল্ডিং পদ্ধতির নিয়ম অনুযায়ী, নিলামে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রির জন্য ৮৮ লাখ ২৩ হাজার ৫২০টি শেয়ার বরাদ্দ ছিল। ৯ থেকে ১২ জানুয়ারি বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত টানা ৭২ ঘণ্টা এ নিলাম অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। এতে অংশ নেওয়ার জন্য ৩৮৫টি প্রতিষ্ঠান নিলাম শুরুর আগেই অর্থ জমা দেয়। এমনকি নিলামে অংশ নিয়ে শেয়ারের ক্রয়াদেশও দেয়। কিন্তু বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানকেই শেষ পর্যন্ত হতাশ হতে হয়। কারণ সব প্রক্রিয়া অনুসরণের পরও শেয়ার পায়নি বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান। আগে এলে আগে পাবেন ভিত্তিতে মাত্র পাঁচ সেকেন্ডে ৮৮ লাখ ২৩ হাজার শেয়ার পেয়ে যায় ৬১টি প্রতিষ্ঠান।

নিলামে জেএমআই হসপিটালের শেয়ারের সর্বোচ্চ দাম নির্ধারিত হয় ২৫ টাকা। নিলামে অংশ নেওয়া ৩৮৫ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৭৯টি প্রতিষ্ঠানই সর্বোচ্চ দামে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি শেয়ারের জন্য দরপ্রস্তাব জমা দেয়।

বুকবিল্ডিং পদ্ধতিতে শেয়ারের দাম নির্ধারণে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে নতুন এক নিয়ম বেঁধে দেয় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এ নিয়মে শেয়ারের দাম নির্ধারণের তিনটি মডেল ঠিক করে দেওয়া হয়। মডেল তিনটি হলো সম্পদমূল্য, পাঁচ বছরের কর–পরবর্তী মুনাফা এবং সম্পদের মূল্য ও কর–পরবর্তী মুনাফার গড়। এ তিন মডেল ব্যবহার করে বুকবিল্ডিং পদ্ধতিতে নিলামে একটি কোম্পানির শেয়ারের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সর্বোচ্চ কত দাম প্রস্তাব করতে পারবেন, তা আগেই নির্ধারণ করা যায়। সে অনুযায়ী, নিলামে জেএমআই হসপিটালের শেয়ারের সর্বোচ্চ দাম নির্ধারিত হয় ২৫ টাকা। নিলামে অংশ নেওয়া ৩৮৫ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৭৯টি প্রতিষ্ঠানই সর্বোচ্চ দামে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি শেয়ারের জন্য দরপ্রস্তাব জমা দেয়।

বুকবিল্ডিং পদ্ধতির নিলামের নিয়মে বলা আছে, যখন কোনো কোম্পানির শেয়ারের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা একই দাম প্রস্তাব করবে, তখন যে আগে দরপ্রস্তাব করবে, সে–ই আগে শেয়ার পাবে। এ নিয়ম মানতে গিয়ে মাত্র পাঁচ সেকেন্ডের মধ্যে যেসব প্রতিষ্ঠান শেয়ারের ক্রয়াদেশ দিয়েছে, তারাই কেবল শেয়ার পেয়েছে।

বুকবিল্ডিং পদ্ধতির নিলামের নিয়মে বলা আছে, যখন কোনো কোম্পানির শেয়ারের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা একই দাম প্রস্তাব করবে, তখন যে আগে দরপ্রস্তাব করবে, সে–ই আগে শেয়ার পাবে। এ নিয়ম মানতে গিয়ে মাত্র পাঁচ সেকেন্ডের মধ্যে যেসব প্রতিষ্ঠান শেয়ারের ক্রয়াদেশ দিয়েছে, তারাই কেবল শেয়ার পেয়েছে। বাকিদের আবেদন বিফলে যায়। এ কারণে নির্ধারিত মডেলটির কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে নিলামে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো।
নিলামে অংশ নেওয়া একাধিক প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এ নিয়মের কারণে ভবিষ্যতে ভালো কোম্পানিগুলো শেয়ারবাজারে আসতে নিরুৎসাহিত হবে। তেমনি নিলামে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও আগ্রহ হারাবে।

অতীতে নিয়মকানুনের ঘাটতির কারণে অনেক কোম্পানি মিথ্যা তথ্য দিয়ে বাজার থেকে বিপুল অর্থ তুলে নিয়ে গেছে। পরে কোম্পানিগুলো অস্তিত্বের সংকটে পড়ে। এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে, সে জন্য শেয়ারের দাম নির্ধারণে আন্তর্জাতিক নিয়মনীতিগুলো দেশে চালু করা দরকার।
আনিস এ খান, নির্বাহী কমিটির সদস্য, বিএপিএলসি

জানতে চাইলে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজের (বিএপিএলসি) নির্বাহী কমিটির সদস্য আনিস এ খান প্রথম আলোকে বলেন, ভালো কোম্পানি শেয়ারবাজারে আনার ক্ষেত্রে শেয়ারের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অতীতে নিয়মকানুনের ঘাটতির কারণে অনেক কোম্পানি মিথ্যা তথ্য দিয়ে বাজার থেকে বিপুল অর্থ তুলে নিয়ে গেছে। পরে কোম্পানিগুলো অস্তিত্বের সংকটে পড়ে। এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে, সে জন্য শেয়ারের দাম নির্ধারণে আন্তর্জাতিক নিয়মনীতিগুলো দেশে চালু করা দরকার।

জেএমআই হসপিটাল বুকবিল্ডিং পদ্ধতিতে শেয়ারবাজার থেকে ৭৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে। এ জন্য কোম্পানিটি ৩ কোটি ৫২ লাখ ৯৪ হাজার শেয়ার ছাড়বে।

জেএমআই হসপিটাল বুকবিল্ডিং পদ্ধতিতে শেয়ারবাজার থেকে ৭৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে। এ জন্য কোম্পানিটি ৩ কোটি ৫২ লাখ ৯৪ হাজার শেয়ার ছাড়বে। এর মধ্যে ৮৮ লাখ ২৩ হাজার ৫২০টি শেয়ার প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য সংরক্ষিত ছিল। আর প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে বিক্রি করা হবে প্রায় ২ কোটি ৬৫ লাখ শেয়ার।

জেএমআই হসপিটালের নিলামে যে ৬১টি প্রতিষ্ঠান শেয়ার পেয়েছে, তার মধ্যে ২০টির বেশি বিভিন্ন প্রভিডেন্ট ও গ্র্যাচুইটি ফান্ডের নামে পরিচালিত প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী। এসব ফান্ডের বাস্তব অস্তিত্ব ও কার্যকারিতা নিয়েও অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।

এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে নামসর্বস্ব কিছু প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীই ঘুরেফিরে বুকবিল্ডিং পদ্ধতির নিলামে শেয়ার পাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান প্রশ্ন তুলেছে। তবে এ বিষয়ে নাম প্রকাশ করে কেউ কিছু বলতে রাজি হননি। জেএমআই হসপিটালের নিলামে যে ৬১টি প্রতিষ্ঠান শেয়ার পেয়েছে, তার মধ্যে ২০টির বেশি বিভিন্ন প্রভিডেন্ট ও গ্র্যাচুইটি ফান্ডের নামে পরিচালিত প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী। এসব ফান্ডের বাস্তব অস্তিত্ব ও কার্যকারিতা নিয়েও অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।

নিলামের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা স্টক এক্সচেঞ্জের দায়িত্ব। তবে নিলাম নিয়ে কারও কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে তাঁরা কমিশনে সেটি তা করতে পারেন। অভিযোগ পেলে কমিশন তা খতিয়ে দেখবে।
মোহাম্মদ রেজাউল করিম, মুখপাত্র, বিএসইসি

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, নিলামটি অনুষ্ঠিত হয় স্টক এক্সচেঞ্জের উদ্যোগে। তাই নিলামের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা স্টক এক্সচেঞ্জের দায়িত্ব। তবে নিলাম নিয়ে কারও কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে তাঁরা কমিশনে সেটি তা করতে পারেন। অভিযোগ পেলে কমিশন তা খতিয়ে দেখবে।

আরও পড়ুন