তারকা হোটেলে এখন থাকে কম, খায় বেশি

রাজধানীর শাহবাগ এলাকায় অবস্থিত হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল
সংগৃহীত

করোনার মধ্যেও দেশের ৪টি তারকা হোটেল ১১১ কোটি টাকার খাবার বিক্রি করেছে। খাবার বিক্রি করেই করোনার বছরে নিজেদের ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছে তারকা হোটেলগুলো। এর বিপরীতে রুমভাড়া বাবদ এসব হোটেলের সম্মিলিত আয় ছিল মাত্র ৬৪ কোটি টাকা। সেই হিসাবে রুমভাড়া বাবদ হোটেলগুলো যে আয় করেছে, তার প্রায় পৌনে দুই গুণ আয় করেছে খাবার বেচে।

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত চারটি তারকা হোটেলের আর্থিক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য মিলেছে। হোটেল চারটি হলো রাজধানী ঢাকার সরকারি মালিকানাধীন বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেড (হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল), ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট (ওয়েস্টিন হোটেল), চট্টগ্রামের পেনিনসুলা ও কক্সবাজারের সি পার্ল বিচ রিসোর্ট (রয়্যাল টিউলিপ)। এর মধ্যে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, ওয়েস্টিন ও কক্সবাজারের রয়্যাল টিউলিপ পাঁচ তারকা মানের হোটেল। আর চট্টগ্রামের হোটেল পেনিনসুলা চার তারকা মানের হোটেল।

গত জুনে হোটেল চারটির ২০২০-২১ আর্থিক বছর শেষ হয়েছে। এরই মধ্যে এসব হোটেল কর্তৃপক্ষ তাদের ওই বছরের আয়-ব্যয়সহ আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে। ২০২০ সালের জুলাই থেকে শুরু হওয়া আর্থিক বছরে করোনার কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় হোটেল ও পর্যটন ব্যবসা। এ সময়ের মধ্যে করোনা কারণে বেশ কিছুদিন হোটেলগুলো বন্ধ ছিল। আবার যখন চালু ছিল, তখনো নানা বিধিনিষেধ মেনে হোটেল ব্যবসা চালাতে হয়েছে। এ সময় ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হোটেলগুলো খাবার বিক্রিতে বেশি মনোযোগী হয়। বেশ কয়েকটি হোটেল টেক অ্যাওয়ে বা হোম ডেলিভারি সেবাও চালু করেছিল।

রাজধানীর গুলশানে অবস্থিত ওয়েস্টিন হোটেল
সংগৃহীত
সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরে খাবার বিক্রি থেকে সবচেয়ে বেশি আয় করেছে ওয়েস্টিন হোটেল কর্তৃপক্ষ। হোটেলটি ৩৯ কোটি টাকার খাবার বিক্রি করেছে এই বছরটিতে।

তালিকাভুক্ত হোটেল চারটির সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এ সময়ে খাবার বিক্রি থেকে সবচেয়ে বেশি আয় করেছে ওয়েস্টিন হোটেল কর্তৃপক্ষ। হোটেলটি ৩৯ কোটি টাকার খাবার বিক্রি করেছে এই বছরটিতে। যদিও তা আগের বছরের তুলনায় প্রায় অর্ধেক। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ওয়েস্টিন হোটেল কর্তৃপক্ষ ৭৮ কোটি টাকার খাবার বিক্রি করেছিল। খাবার বিক্রি করে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আয় করেছে সরকারি মালিকানাধীন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল। এ হোটেল ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩৭ কোটি টাকার খাবার বিক্রি করেছে। আগের বছর হোটেলটির খাবার বিক্রি থেকে আয় ছিল প্রায় ৬১ কোটি টাকা।

কক্সবাজারের ইনানীতে অবস্থিত হোটেল র‌য়্যাল টিউলিপ
সংগৃহীত
কক্সবাজারের পাঁচ তারকা হোটেল রয়্যাল টিউলিপ উল্লেখিত অর্থবছরে খাবার বিক্রি করেছে ২১ কোটি ২২ লাখ টাকার, যা আগের বছরের চেয়ে ৪ কোটি টাকা বেশি।

এ ছাড়া কক্সবাজারের পাঁচ তারকা হোটেল রয়্যাল টিউলিপ উল্লেখিত অর্থবছরে খাবার বিক্রি করেছে ২১ কোটি ২২ লাখ টাকার, যা আগের বছরের চেয়ে ৪ কোটি টাকা বেশি। অর্থাৎ রয়্যাল টিউলিপ করোনার বছরেও আগের বছরের চেয়ে খাবার বিক্রিতে ভালো ব্যবসা করেছে। আর চট্টগ্রাম শহরের চার তারকা মানের হোটেল পেনিনসুলা সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৪ কোটি টাকা আয় করেছে খাবার বিক্রি করে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এ খাত থেকে তাদের আয় ছিল ১৫ কোটি টাকা। সেই হিসাবে করোনার মধ্যেও চট্টগ্রামের এ হোটেলও বলতে গেলে ভালো ব্যবসা করেছে।

চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ে অবস্থিত হোটেল পেনিনসুলা
সংগৃহীত

এ চার হোটেলের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, খাবার বিক্রির ব্যবসার ক্ষেত্রে সর্বশেষ অর্থবছরে হোটেলগুলো গড়ে তাদের প্রায় ৬৫ শতাংশ ব্যবসা পুনরুদ্ধার করেছে। চার হোটেল মিলে ২০২০-২১ অর্থবছরে ১১১ কোটি ৪২ লাখ টাকা আয় করলেও ২০১৯-২০ অর্থবছরের এ খাতে তাদের সম্মিলিত আয় ছিল ১৭১ কোটি টাকার বেশি। করোনার কারণে ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ তিন মাস এসব হোটেল পুরোপুরি বন্ধ ছিল। কারণ করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে ২০২০ সালের ২৬ মার্চ থেকে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছিল। বাকি ৯ মাস স্বাভাবিক ব্যবসা করেছিল হোটেলগুলো।

চার হোটেল মিলে ২০২০-২১ অর্থবছরে ১১১ কোটি ৪২ লাখ টাকা আয় করলেও ২০১৯-২০ অর্থবছরের এ খাতে তাদের সম্মিলিত আয় ছিল ১৭১ কোটি টাকার বেশি।

অন্যদিকে ২০২০-২১ অর্থবছরে করোনার কারণে একাধিক দফায় হোটেল ও পর্যটন ব্যবসায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সরকার। ফলে পুরো বছরজুড়ে একটানা ব্যবসা করতে পারেনি হোটেলগুলো। নিষেধাজ্ঞা শিথিলের ফাঁকে ফাঁকে ব্যবসা করতে হয়েছে এসব হোটেল কর্তৃপক্ষকে।