নীতি সিদ্ধান্তে পাশে থাকার অঙ্গীকার দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার

নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে একে অপরের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক ও পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন(বিএসইসি)। শেয়ারবাজারের উন্নয়নে বিএসইসিকে সহায়তারও আশ্বাস দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গতকাল মঙ্গলবার দুই সংস্থার বৈঠকে এ আশ্বাস ও অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়। গতকাল বিকেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে দুই সংস্থার মধ্যে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

শেয়ারবাজার বিষয়ে বেশ কিছুদিন ধরে দুই সংস্থার মধ্যে কিছুটা পরস্পরবিরোধী অবস্থান দেখা যায়, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে শেয়ারবাজারে। এ কারণে দুই সংস্থার বৈঠক নিয়ে কয়েক দিন ধরে শেয়ারবাজারে বেশ আলোচনা চলছিল। যদিও বৈঠকের দিনে বড় পতন হয়েছে শেয়ারবাজারে।

সভা শেষে বিএসইসির কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘পারপিচুয়াল বন্ডকে ব্যাংকের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ হিসাবের বাইরে রাখার বিষয়ে আমাদের যুক্তির সঙ্গে একমত পোষণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ছাড়া আইসিবির দেওয়া ঋণ ফেরত চেয়ে যেসব ব্যাংক চিঠি দিয়েছিল, মেয়াদ পূর্তির আগে সেই ঋণ ফেরত না নেওয়ার বিষয়েও বাংলাদেশ ব্যাংক একমত পোষণ করেছে। সব মিলিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বৈঠকটি ছিল বেশ ফলপ্রসূ।

তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা বৈঠকের সিদ্ধান্তের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু জানাননি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দুই পক্ষের বৈঠক ছিল বেশ সৌহার্দ্যপূর্ণ।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যেকার বৈঠকটি বেশ সৌহার্দ্যপূর্ণ হয়েছে। দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিভিন্ন সিদ্ধান্তে একে অপরের পাশে থাকবে।
দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার গতকালের বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে নেতৃত্ব দেন ডেপুটি গভর্নর এ কে এম সাজেদুর রহমান খান। বিএসইসির পক্ষে নেতৃত্ব দেন সংস্থাটির কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ।

এদিকে দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার বৈঠকের দিনেও শেয়ারবাজারে বড় ধরনের দরপতন ঘটেছে। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স এদিন ৯২ পয়েন্ট বা প্রায় দেড় শতাংশ কমে নেমে এসেছে ৬ হাজার ৭০০ পয়েন্টে। সূচক কমলেও ডিএসইতে লেনদেন আগের দিনের চেয়ে ৪৩৯ কোটি টাকা বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, গতকালের সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে দুটি বিষয় উত্থাপন করা হয়। এর মধ্যে একটি ছিল শেয়ারবাজার স্থিতিশীলকরণ তহবিলে ব্যাংকগুলোর অবণ্টিত মুনাফা ফেরত দেওয়া বিষয়ে। এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়, যেসব অবণ্টিত মুনাফার দাবিদার নেই, সেসব অর্থ তহবিলে ফেরত দেওয়ার বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু যেসব মুনাফার বিষয়ে ব্যাংকের পক্ষ থেকে যেকোনো ধরনের ইন্সট্রুমেন্ট ইস্যু করা হয়েছে, সেগুলো তহবিলে ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে আইনি বাধা আছে। তাই বিএসইসির তহবিলসংক্রান্ত নির্দেশনায় কিছুটা সংশোধনী আনার প্রয়োজনীয় রয়েছে বলে সভায় জানানো হয়। বিএসইসি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে সভায় জানিয়েছে।

এ ছাড়া ব্যাংক পুঞ্জীভূত লোকসানে থাকলে নির্দিষ্ট একটি বছরে মুনাফা করলেও লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারবে না—বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন নির্দেশনা রয়েছে। এ বিষয়ে বিএসইসি পক্ষ থেকে আপত্তি জানানো হয়। পরে সিদ্ধান্ত হয়, এ নিয়ে এ মাসের মধ্যে দুই সংস্থা আবার বসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করবে।