ফরচুন শুজের শেয়ারের দাম ছয় মাসে ছয় গুণ

মাত্র ছয় মাসে ৫০০ শতাংশ বেড়েছে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ফরচুন শুজের। গত ২২ এপ্রিল কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ছিল মাত্র ১৮ টাকা। গত বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষে সেই দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৫ টাকায়। তাতে ছয় মাসে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়েছে প্রায় ছয় গুণ। বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এ মূল্যবৃদ্ধি অস্বাভাবিক। একমাত্র কারসাজি ছাড়া এ শেয়ারের এমন মূল্যবৃদ্ধির ঘটনা প্রায় অসম্ভব।

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে শেয়ারবাজারের বহুল আলোচিত এক বিনিয়োগকারী কোম্পানিটির শেয়ার নিয়ে নানা ধরনের কারসাজির ঘটনা ঘটাচ্ছেন। গত ছয় মাসে কোম্পানিটির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির পেছনে তিনি নানা ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বেশ কয়েকটি বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাব ব্যবহার করে এক বিও থেকে আরেক বিওতে শেয়ার স্থানান্তরের মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট তৈরির মাধ্যমে কোম্পানিটির দাম বাড়ানো হচ্ছে। যাতে টানা মূল্যবৃদ্ধির ঘটনা দেখে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা কোম্পানিটির শেয়ার কিনতে প্রলুব্ধ হন।

জানতে চাইলে বেসরকারি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের অধ্যাপক মোহাম্মদ মুসা বলেন, ব্যবসা বা আয়ের ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন ছাড়া এ ধরনের কোম্পানির এভাবে টানা মূল্যবৃদ্ধির যৌক্তিক কোনো কারণ নেই। কোম্পানিটির আর্থিক বিভিন্ন সূচক পর্যালোচনা করে ধারণা করা যায়, কৃত্রিমভাবে এ শেয়ারের দাম বাড়ানো হচ্ছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিত এ মূল্যবৃদ্ধির কারণ তদন্ত করে দেখা। আর বিনিয়োগকারীদের উচিত সতর্কতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেওয়া।

প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওতে শেয়ার ছেড়ে ২০১৬ সালে কোম্পানিটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। বরিশাল বিসিকে জুতা তৈরির এ কোম্পানি আইপিওতে প্রতিটি শেয়ার বিক্রি করে ১০ টাকা অভিহিত মূল্য বা ফেসভ্যালুতে। আইপিওর মাধ্যমে কোম্পানিটি ২২ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ২০১৯ সালের ২২ অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ২২ এপ্রিলের আগপর্যন্ত কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ৩০ টাকার মধ্যে ঘুরপাক খেয়েছে। ২২ এপ্রিলের পর তা টানা বাড়তে শুরু করে। সাম্প্রতিক সময়ে এ রকম উত্থান আর কোনো শেয়ারের হয়নি। অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি লেনদেনের দিক থেকেও ডিএসইর শীর্ষ ১০ কোম্পানির তালিকায় উঠে এসেছে।

এ বিষয়ে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদন বা ব্যবসার অবস্থা সম্পর্কে না জেনে এমন মূল্যবৃদ্ধি সম্পর্কে যথাযথ মন্তব্য করা সম্ভব নয়।

এদিকে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে জুতার বাজারে সুপরিচিত দেশি-বিদেশি ব্র্যান্ড বাটা ও অ্যাপেক্সকে বাজার মূলধনে পেছনে ফেলে দিয়েছে ফরচুন শুজ। গত বৃহস্পতিবার দিন শেষে ডিএসইতে ফরচুন শুজের বাজার মূলধন দাঁড়ায় ১ হাজার ৬০২ কোটি টাকায়। একই দিন শেষে বাটা শুর বাজার মূলধন ছিল ১ হাজার ২১৮ কোটি টাকা। আর অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের বাজার মূলধন ৩২৫ কোটি টাকা। বাটা ও অ্যাপেক্সের পরিশোধিত মূলধন কম। তাই কোম্পানি দুটির শেয়ারসংখ্যাও কম। এ কারণেই কোম্পানি দুটিকে বাজার মূলধনে পেছনে ফেলেছে ফরচুন শুজ। বাটা শুর পরিশোধিত মূলধন প্রায় ১৪ কোটি টাকা। আর অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের মূলধন ১১ কোটি টাকা। আর ফরচুন শুজের মূলধন ১৫৫ কোটি টাকা।

অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি পেলেও তার কারণ খতিয়ে দেখতে কোনো তদন্তের উদ্যোগ নেয়নি কোনো সংস্থা। শুধু একবার কোম্পানির কাছে ব্যাখ্যা তলব করে দায় সেরেছে ডিএসই। গত জুনে দেওয়া ডিএসইর সেই ব্যাখ্যা তলবের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে কোম্পানিটি জানিয়েছিল সেই গৎবাঁধা জবাব, ‘অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণ জানা নেই তাদের’।

জানতে চাইলে কোম্পানি সচিব রিয়াজ উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, ‘আমাদের কাছে যেসব মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ছিল, তা আমরা বিনিয়োগকারীদের জানিয়ে দিয়েছি। এর বাইরে শেয়ারবাজারে শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে আমাদের কিছু জানা নেই।’