বেক্সিমকোর ৯০ টাকা দামের সুকুক কিনতে খরচ সাড়ে ৫২ টাকা

খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি—এ প্রবাদ কমবেশি সবার জানা। অনেকে হয়তো এ ধরনের ঘটনার ভুক্তভোগীও। শেয়ারবাজারে সম্প্রতি তালিকাভুক্ত বেক্সিমকো গ্রিন সুকুক বন্ড কিনতে গিয়ে বিনিয়োগকারীরাও প্রবাদটির সত্যতা টের পাচ্ছেন। কারণ, বাজারমূল্যে ৯০ টাকার এ বন্ড কিনতে একজন বিনিয়োগকারীকে মাশুল গুনতে হচ্ছে সাড়ে ৫২ টাকা। স্টক এক্সচেঞ্জের লেনদেন মাশুল ও সরকারের অগ্রিম আয়কর বাবদ তাঁদের এ মাশুল দিতে হচ্ছে। এর সঙ্গে ব্রোকারেজ হাউসের কমিশন যোগ করলে সেই খরচ বেড়ে ৬৫ থেকে ৭৫ টাকায় গিয়ে ঠেকছে। বেশ কয়েকজন বিনিয়োগকারী এমন অভিযোগ করেছেন। একাধিক ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেও বিনিয়োগকারীদের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বিনিয়োগকারী প্রথম আলোকে জানান, গত ১৬ জানুয়ারি তিনি বেশ আগ্রহ নিয়ে বাজার থেকে বেক্সিমকো গ্রিন সুকুক বন্ডের ১০টি ইউনিট কেনেন। ওই দিন প্রতিটি ইউনিটের বাজারমূল্য ছিল ১০০ টাকা। তাতে ১০০ টাকায় বন্ডটির ১০টি ইউনিট কিনতে তাঁর খরচ পড়ে ১ হাজার টাকা। আর এই ১০টি ইউনিট কিনতে তাঁকে মাশুল গুনতে হয়েছে ৭৫ টাকা। এর মধ্যে ৫০ টাকা স্টক এক্সচেঞ্জ নির্ধারিত লেনদেন মাশুল, আড়াই টাকা অগ্রিম কর ও বাকি সাড়ে ২২ টাকা ব্রোকারেজ হাউসের কমিশন।

ব্রোকারেজ হাউসের কমিশন যদি বাদও দেওয়া হয়, তাহলেও বন্ডটির একটি ইউনিট কিনতে সাড়ে ৫২ টাকা মাশুল গুনতে হবে। একইভাবে বিক্রির ক্ষেত্রেও একই মাশুল গুনতে হবে। কারণ, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) নিয়ম অনুযায়ী, কোনো বন্ড কেনার ক্ষেত্রে একটি লেনদেনের জন্য ৫০ টাকা মাশুল দিতে হয় বিনিয়োগকারীদের। এক লেনদেনে ১টি বা ১ লাখ যত ইউনিটই কেনা হোক না কেন, মাশুল ওই ৫০ টাকাই।

বেক্সিমকো গ্রিন সুকুকের অভিহিত মূল্য বা ফেসভ্যালু ১০০ টাকা। আজ বুধবার ডিএসইতে এটির বাজারমূল্য ছিল ৯০ টাকা ৫০ পয়সা। এ বাজার মূল্যে কেউ বন্ডটির একটি ইউনিট কিনলে মাশুলসহ তাঁর ন্যূনতম খরচ পড়বে ১৪৩ টাকা। কিন্তু একই দামে ওই ইউনিট বিক্রি করলে কমপক্ষে সাড়ে ৫২ টাকা খরচ করতে হবে। সেক্ষেত্রে বিনিয়োগকারী পাবেন মাত্র ৩৮ টাকা (শেয়ারের দাম ৯০.৫০ টাকা–মাশুল ৫২.৫ টাকা)। আর ব্রোকারেজ হাউসের কমিশন ধরলে তো টাকা আরও কমবে।

জানতে চাইলে ডিএসইর প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) সাইফুর রহমান মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, 'বন্ডের লেনদেন উৎসাহিত করতে খরচ যাতে কম হয়, সে জন্য ন্যূনতম মাশুল নির্ধারণ করা হয়েছিল। আমাদের বেশির ভাগ বন্ডেরই অভিহিত মূল্য ৫ হাজার টাকার বেশি। এ কারণে এত দিন এ মাশুল নিয়ে কোনো সমস্যা হয়নি।

আমরা যখন এ মাশুল ঠিক করি, তখন পরিকল্পনায় ছিল, যাঁরা বন্ডে বিনিয়োগ করবেন, তাঁরা অন্তত লাখ টাকার ওপরে বিনিয়োগ করবেন। সেটি হলে মাশুল অনেক কম পড়ত। বেক্সিমকোর সুকুক বন্ডটি তালিকাভুক্ত হওয়ার পর দেখা যাচ্ছে, অনেকে শেয়ারের মতো এ বন্ডে কয়েক হাজার টাকাও বিনিয়োগ করছে। এ কারণে মাশুল বাবদ খরচ বেশি পড়ছে। বিষয়টি সমাধানে আমরা কাজ করছি।