বড় দরপতনে ‘ফোর্সড সেল’ আতঙ্কে বিনিয়োগকারীরা

ইউক্রেনে রুশ হামলার জেরে বিধ্বস্ত দেশের শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা। রাশিয়ার বোমা হামলায় যেমন আতঙ্কিত ইউক্রেনের মানুষ, তেমনি সূচকের ফ্রি ফল বা বাধাহীন পতনে আতঙ্কিত এ দেশের বিনিয়োগকারীরাও।

সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে গতকাল রোববার লেনদেন শুরুর প্রথম ঘণ্টার মধ্যেই ১০০ পয়েন্টের বেশি কমে গেছে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স। আর দিন শেষে সূচকটি ১৬৩ পয়েন্ট বা প্রায় আড়াই শতাংশ কমে নেমে এসেছে ৬ হাজার ৬৭৬ পয়েন্টে। এটি গত দুই মাসের মধ্যে ডিএসইএক্স সূচকের সর্বনিম্ন অবস্থান।

এর আগে সর্বশেষ ২৭ ডিসেম্বর ডিএসইএক্স সূচকটি সর্বনিম্ন ৬ হাজার ৬৬৯ পয়েন্টে ছিল।

এদিকে পরপর দুই দিনের বড় ধরনের দরপতনের কারণে যেসব বিনিয়োগকারী ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করেছেন, তাঁরা বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন। ঋণদাতা বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ঋণ সমন্বয়ের তাগাদা দিয়ে ঋণগ্রহীতা বিনিয়োগকারীদের চিঠি দিয়েছে। শেয়ারবাজারের ভাষায় এটিকে ‘মার্জিন কল’ বলে। যখন শেয়ারের বাজারমূল্য একটা নির্ধারিত সীমার নিচে নেমে আসে, তখন ঋণ আদায়ে মার্জিন কল করে ঋণদাতা ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো। বিনিয়োগকারীরা ঋণ সমন্বয়ে অর্থাৎ নতুন করে অর্থ বিনিয়োগে ব্যর্থ হলে প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকের শেয়ার বিক্রি করে দেয় ঋণ আদায়ে। শেয়ারবাজারের ভাষায় এটিকে ফোর্সড সেল বা জোরপূর্বক বিক্রি বলা হয়।

জানা গেছে, শেয়ারের বড় দরপতনের ফলে এখন ঋণগ্রস্ত অনেক বিনিয়োগকারীর শেয়ার ফোর্সড সেলের আওতায় চলে এসেছে। এতে বাজার পতনের সঙ্গে সঙ্গে একশ্রেণির বিনিয়োগকারী ফোর্সড সেল আতঙ্কে ভুগছেন।

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ফোর্সড সেল শুরু হলে তাতে শেয়ারের দাম আরও তলানিতে নামতে পারে।

গত বৃহস্পতিবার ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর খবরে ওই দিন ডিএসইএক্স সূচকটি কমেছিল ১০৯ পয়েন্ট। বৃহস্পতিবার যুদ্ধের খবরে বিশ্বের বড় সব শেয়ারবাজারেও বড় ধরনের দরপতন ঘটে। তবে গত দুই দিনে বিশ্ব শেয়ারবাজার বড় ধরনের পতনের ধাক্কা কাটিয়ে উঠেছে। কিন্তু যুদ্ধের রেশে বড় পতনের সেই ধাক্কা কাটাতে পারেনি দেশের শেয়ারবাজার। ফলে দ্বিতীয় দিনের মতো আজও সূচকের বড় পতন দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। দুই দিনে ঢাকার বাজারের প্রধান সূচকটি কমেছে ২৭২ পয়েন্ট।

ঢাকার বাজারে গতকাল বাছবিচার ছাড়া সব ধরনের শেয়ারেরই বড় ধরনের দরপতন হয়েছে। ফলে দিন শেষে ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৭৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে মাত্র ১০টির। কমেছে ৩৬৫টির। আর অপরিবর্তিত ছিল ৪টির দাম।

দেশের শেয়ারবাজারে গত কয়েক মাসে এ ধরনের পতন হয়নি। ফলে সূচকের এ পতনে বিনিয়োগকারীদের শঙ্কিত করে তুলেছে। এদিকে বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের একটি পক্ষ বলছে, বিশ্ব শেয়ারবাজার যখন যুদ্ধের প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে উঠেছে, তখন দেশের শেয়ারবাজারে সূচকের এ ধরনের পতনের কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। এই পক্ষটির শঙ্কা সুযোগসন্ধানী গোষ্ঠী যুদ্ধের ভীতিকে কাজে লাগিয়ে বড় ধরনের পতন ঘটিয়ে কম দামে শেয়ার কিনে নিতে নানা গুজব ছড়াচ্ছে।