রেকর্ডে ২০১০ ছাড়াচ্ছে ২০২১

ডিএসইতে গতকাল লেনদেন শুরু হয়েছিল সূচকের বড় পতনে। দিন শেষে ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন ঢাকার বাজারে।

শেয়ারবাজারের রেকর্ড বইয়ে ২০১০ আউট, ২০২১ ইন। এত দিন শেয়ারবাজারের বেশির ভাগ নির্দেশক সূচকের রেকর্ড ছিল ২০১০ সালের। কিন্তু এখন সিংহভাগ রেকর্ড থেকে ২০১০ সালটি মুছে গিয়ে জায়গা করে নিয়েছে ২০২১ সালটি। দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সূচক, লেনদেন, বাজার মূলধনসহ ৮টি নির্দেশক সূচকের মধ্যে ৬টিতেই গতকাল সোমবার রেকর্ড হয়েছে। এ ৮টি নির্দেশক সূচকের বেশির ভাগই ২০১০ সালে রেকর্ড উচ্চতায় ছিল। কিন্তু চলতি বছর বাজারের টানা উত্থানে এসব সূচকের রেকর্ডের খাতায় ২০২১ সাল যুক্ত হয়।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, গতকাল প্রধান এই শেয়ারবাজারে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স, বাছাই করা ৩০ কোম্পানির সমন্বয়ে গঠিত সূচক ডিএস-৩০, শরিয়াভিত্তিক সূচক ডিএসইএস, বাজার মূলধন, ক্রয়াদেশের সংখ্যা বা হাওলা ও হাতবদল হওয়া শেয়ার সংখ্যায় রেকর্ড হয়েছে। এখন শুধু লেনদেনের পরিমাণ ও বিলুপ্ত হওয়া ডিএসই জেনারেল ইনডেক্স বা সাধারণ সূচকে ২০১০ সালের রেকর্ড রয়ে গেছে। এর মধ্যে ডিএসই সাধারণ সূচকটি বিলুপ্ত হওয়ায় সেই রেকর্ড ভঙ্গ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আর লেনদেনে ২০১০ সালের রেকর্ডটিও যেকোনো সময় ভেঙে যেতে পারে। কারণ, লেনদেনও এখন ৩ হাজার কোটি টাকা ছুঁই ছুঁই করছে।

ঢাকার বাজারের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স গতকাল ৩২ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৬২৮ পয়েন্টে। আর বাছাই করা কোম্পানির সমন্বয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচকটি ৭ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩৯৩ পয়েন্টে। ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি এ দুটি সূচক চালু হয়। চালু হওয়ার পর গতকাল দিন শেষে দুটি সূচকই সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠেছে। ডিএসইর অপর সূচক শরিয়াভিত্তিক ডিএসইএস গতকাল এক দিনে ১৩ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪৫২ পয়েন্টে। ২০১৪ সালের ২০ জানুয়ারি ডিএসইএস সূচকটি চালু হয়েছিল। চালু হওয়ার প্রায় সাড়ে ৭ বছর পর এসে সূচকটিও রেকর্ড উচ্চতায় অবস্থান করছে। সাম্প্রতিক সময়ে শেয়ারবাজারের টানা উত্থানে এ তিন সূচকই আগের রেকর্ড ছাড়িয়েছে আরও আগে। ফলে এখন প্রতিদিন এ তিন সূচক বৃদ্ধি মানেই আগের রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড।

একই ভাবে বাজার মূলধনও আগেই রেকর্ড উচ্চতায় উঠে গিয়েছিল। গতকাল সেটি আরও ১ হাজার ২১০ কোটি টাকা বেড়ে হয়েছে ৫ লাখ ৪৫ হাজার ৫৩৬ কোটি টাকা। বাজারে ভালো মৌলভিত্তি ও বেশির ভাগ শেয়ারের দাম বাড়লেই বাজার মূলধনেও প্রতিদিন রেকর্ড হচ্ছে।

তিন সূচক ও বাজার মূলধনের বাইরে গতকাল নতুন দুটি রেকর্ড হয়েছে হাতবদল হওয়া শেয়ার ও ক্রয়াদেশের সংখ্যায়। ঢাকার বাজারে গতকাল রেকর্ড ৯৭ কোটি ৭ লাখ ৭৫ হাজার ৫৪৯টি শেয়ারের হাতবদল হয়েছে। এর আগে সর্বশেষ চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি ৯৪ কোটি ৯ লাখ ৮ হাজার ৬৫২টি শেয়ারের হাতবদল হয়েছিল। এ ছাড়া গতকাল ডিএসইতে ৪ লাখ ২১ হাজার ৮০৩টি ক্রয় বা বিক্রয়াদেশ নিষ্পন্ন হয়েছে। এর আগে সর্বশেষ ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৩১০টি ক্রয় বা বিক্রয়াদেশ নিষ্পন্ন হয়েছিল। সাধারণভাবে ক্রয় বা বিক্রয়াদেশের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া মানে বাজারে বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ বেড়ে যাওয়া।

ঊর্ধ্বমুখী বাজারে প্রতিদিন রেকর্ড হলেও সার্বিকভাবে বাজার এখনো ঝুঁকিপূর্ণ নয় বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নানা কারণে শেয়ারবাজার এখন ঊর্ধ্বমুখী। ব্যাংকে এখন সুদহার তলানিতে। তাই সাধারণ মানুষের একটি অংশ বেশি মুনাফার আশায় ব্যাংকের বদলে শেয়ারবাজারে অর্থ বিনিয়োগ করছেন। আবার করোনার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যেও মন্দাভাব। তাই হয়তো কিছু কিছু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান তাদের হাতে থাকা অর্থ ব্যাংকের বদলে শেয়ারবাজারে খাটাচ্ছে। সব মিলিয়ে বাজারে বিনিয়োগ বেড়েছে। তাতে কয়েক দিন পরপর রেকর্ডও হচ্ছে।

মির্জ্জা আজিজ আরও বলেন, সার্বিকভাবে বাজার নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। তবে কিছু কিছু শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। এসব শেয়ারে বিনিয়োগের আগে বিনিয়োগকারীদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। আর ঊর্ধ্বমুখী বাজারে কারসাজি রোধে নজরদারি বাড়াতে হবে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে।

সাপ্তাহিক ও বিশেষ ছুটি মিলিয়ে তিন দিন বন্ধের পর গতকালই ছিল শেয়ারবাজারের প্রথম কার্যদিবস। দিনটি শুরু হয়েছিল সূচকের বড় পতন দিয়ে। প্রথম ৩০ মিনিটের মধ্যেই প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৭০ পয়েন্ট কমে যায়। সেখান থেকে সূচকটি ঘুরে দাঁড়ায়। দিন শেষ হয় উত্থান দিয়ে।

ডিএসইতে গতকাল লেনদেনেও ছিল বেশ ভালো গতি। ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বরের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে গতকাল। শেয়ারবাজারে সর্বোচ্চ লেনদেনের রেকর্ডটি এখনো ৩ হাজার ২৫০ কোটি টাকার, যেটি হয়েছিল ২০১০ সালে শেয়ারবাজারে ধসের আগে আগে।