লেনদেনে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সরকারি কোম্পানির দাপট

শেয়ারবাজারে লেনদেনে চালকের আসনে এখন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের কোম্পানি। দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গতকাল মঙ্গলবার লেনদেনের ১৭ শতাংশই ছিল এ খাতের দখলে। ডিএসইতে গতকাল এ খাতের ২৩ কোম্পানির সম্মিলিত লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৩৩৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে আবার ২৬৬ কোটি টাকা বা সাড়ে ৭৮ শতাংশই ছিল সরকারি মালিকানাধীন ৭ কোম্পানির।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের কোম্পানির ওপর ভর করে গতকাল ডিএসইর লেনদেন আবারও দুই হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি পৌঁছেছে। তিন মাস পর গতকাল এ বাজারে সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে। দিন শেষে ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা, যা গতকালের চেয়ে ৪৯০ কোটি টাকা বেশি। এর আগে সর্বশেষ গত ৭ অক্টোবর ডিএসইতে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৪৯৭ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল।

লেনদেনের পাশাপাশি ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স প্রায় এক মাসের ব্যবধানে আবারও ৭ হাজারের মাইলফলক ছাড়িয়েছে। ঢাকার বাজারের প্রধান সূচকটি গতকাল দিন শেষে ৫৫ পয়েন্ট বা প্রায় ১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৪৯ পয়েন্টে। এর আগে সর্বশেষ গত ৭ ডিসেম্বর সূচকটি একই অবস্থানে ছিল। এরপর সেটি কমতে কমতে গত ২৬ ডিসেম্বর নেমে এসেছিল ৬ হাজার ৬৩০ পয়েন্টে। এরপর ৩০ ডিসেম্বর থেকে সূচকটি বাড়তে শুরু করে। আগের দিনের উত্থানের ধারাবাহিকতায় গতকালও ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয় সূচকের বড় উত্থান দিয়ে। লেনদেন শেষ হওয়ার এক ঘণ্টা আগে ডিএসইএক্স সূচকটি ১০০ পয়েন্টের বেশি বেড়েছিল। পরে শেষ ঘণ্টায় এসে বিক্রির চাপে সূচক কমে যায়। তাতে দিন শেষে সূচকের বড় উত্থান ঘটেনি।

সূচকের বড় উত্থান না হলেও কিছু কিছু শেয়ারের দাম এদিন সর্বোচ্চ পর্যায়ে বেড়েছে। সেখানেও ছিল সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানির আধিপত্য। ডিএসইতে গতকাল মূল্যবৃদ্ধির দিক থেকেও শীর্ষ চার কোম্পানিই ছিল সরকারের মালিকানাধীন। এগুলো হলো ইস্টার্ন কেব্‌লস, তিতাস গ্যাস, ন্যাশনাল টিউবস ও বিএসসি। এই চার কোম্পানির প্রতিটির দাম গতকাল গড়ে ১০ শতাংশ করে বেড়েছে। এর মধ্যে ইস্টার্ন কেব্‌লস গত জুনে সমাপ্ত আর্থিক বছরে শেয়ারধারীদের কোনো লভ্যাংশ দিতে পারেনি। আবার শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএসও ঋণাত্মক। তারপরও গত দুই দিনেই কোম্পানিটির শেয়ারের বাজারমূল্য বেড়েছে ১৭ টাকা।

এ ছাড়া ন্যাশনাল টিউবস গত জুনে সমাপ্ত আর্থিক বছরের জন্য মাত্র ২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। বছর শেষে কোম্পানিটির ইপিএস ছিল ৬ পয়সা। তারপরও কোম্পানিটির শেয়ারের দাম গত দুই দিনে ১৪ টাকা বেড়েছে। সরকারি কোম্পানির শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের হঠাৎ আগ্রহের কারণেই মূলত বাছবিচার ছাড়া এ খাতের সব শেয়ারের দাম বাড়তে শুরু করেছে। তারই অংশ হিসেবে এ দুটি কোম্পানি গতকাল মূল্যবৃদ্ধির তালিকায় শীর্ষে উঠে আসে।

এদিকে গতকাল লেনদেনের কয়েক মিনিটের মধ্যেই সর্বোচ্চ মূল্যবৃদ্ধির পর বিক্রেতাশূন্য হয়ে পড়ে বিএসসির শেয়ার। কোম্পানিটির চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের ৬৫০ শতাংশ আয় বা ইপিএস বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে গত ২৬ ডিসেম্বর থেকে একটানা বাড়ছে এ কোম্পানির শেয়ারের দাম। তাতে মাত্র ১৩ কার্যদিবসে এটির ৪৯ টাকার শেয়ার দাম বেড়ে হয়েছে ১২৭ টাকা। মূলত বিএসসির শেয়ারের দামের অস্বাভাবিক উত্থানের পর থেকেই সরকারি অন্যান্য শেয়ারের দাম বাড়তে শুরু করে।