উৎপাদন বন্ধ থাকা কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ছে লাফিয়ে

শেয়ারবাজার
গ্রাফিকস: প্রথম আলো

তিন মাসের ব্যবধানে শেয়ারবাজারে দ্বিগুণ হয়ে গেছে খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার। এর মধ্যে গত পাঁচ কার্যদিবসেই বেড়েছে সাড়ে ৪ টাকা বা ৩০ শতাংশ। তাতে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গত সপ্তাহে মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষে জায়গা করে নেয় কোম্পানিটি। সপ্তাহ শেষে কোম্পানিটির শেয়ারের বাজারমূল্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ টাকা ৫০ পয়সা।

মূল্যবৃদ্ধিতে শীর্ষে উঠে এলেও এক বছরের বেশি সময় ধরে কোম্পানিটি উৎপাদনেই নেই। রপ্তানিমুখী ব্যাগ তৈরির কারখানা বন্ধ করে ওই কারখানায় এখন ভাড়ায় অন্য কোম্পানির জন্য পণ্য উৎপাদনের কাজ করছে। কারখানা বন্ধ থাকলেও বাজারে শেয়ারের দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে।

গত এপ্রিলের মাঝামাঝিতেও কোম্পানিটির শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ফেসভ্যালু বা অভিহিত মূল্যের নিচে। গত ১৬ এপ্রিল এটির প্রতিটি শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ৯ টাকা ৯০ পয়সা। সেখান থেকে গত দুই মাসের ব্যবধানে এটির দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে। গত সপ্তাহ শেষে কোম্পানিটির শেয়ারের বাজারমূল্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ১৯ টাকা। গত দুই বছরের মধ্যে এটিই কোম্পানিটির শেয়ারের সর্বোচ্চ বাজারমূল্য।

জানতে চাইলে খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজের কোম্পানি সচিব তপন কুমার সরকার গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানটি ছিল রপ্তানিমুখী কারখানা। কিন্তু রপ্তানি বাজারে ক্রয়াদেশ না থাকায় এক বছরের বেশি সময় ধরে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এখন আমরা গ্রুপের অন্য কোম্পানির জন্য সাবকন্ট্রাক্টে পণ্য তৈরি করছি।’

কবে নাগাদ কোম্পানিটি চালু হতে পারে, জানতে চাইলে তপন কুমার সরকার বলেন, রপ্তানির ক্রয়াদেশ পেলে আবারও উৎপাদনে ফিরবে কোম্পানি।

এদিকে উৎপাদন বন্ধ থাকা এ কোম্পানির শেয়ার নিয়ে বাজারে গুজব ছড়িয়েছে শিগগিরই কোম্পানিটি ব্যবসা সম্প্রসারণে যাচ্ছে। এমন গুজবে শেয়ারের দাম বেড়েছে হু হু করে। বাজার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মূলত গুজব ছড়িয়েই কারসাজিকারকেরা কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়াচ্ছেন।

এ ছাড়া গত সপ্তাহে সর্বনিম্ন মূল্যস্তর বা ফ্লোর প্রাইস থেকে মুক্ত হয়েই মূল্যবৃদ্ধির দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে উঠে এসেছে অলিম্পিক এক্সেসরিজ। কোম্পানিটির শেয়ার দীর্ঘদিন ধরে ৯ টাকা ৯০ পয়সায় ফ্লোর প্রাইসে আটকে ছিল। ২০ জুন সেটি ফ্লোর প্রাইসমুক্ত হয়। এরপর ২ দিনে ১০ শতাংশ করে ২০ শতাংশ দাম বেড়েছে। তাতে সপ্তাহ শেষে এটির শেয়ারের দাম ২ টাকা ২০ পয়সা বা ২২ শতাংশ বেড়েছে।

ঢাকার বাজারে গত সপ্তাহে মূল্যবৃদ্ধিতে শীর্ষে ছিল বেশির ভাগই মাঝারি মানের বি শ্রেণিভুক্ত কোম্পানি। আর কয়েকটি কোম্পানি ছিল দুর্বল মৌল ভিত্তির জেড শ্রেণিভুক্ত কোম্পানি। মাঝারি ও দুর্বল মানের কোম্পানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে গত সপ্তাহে লেনদেনেরও পতন হয়েছে। বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কারসাজির মাধ্যমে মাঝারি ও দুর্বল মানের কোম্পানির শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধি ঘটানো সহজ। কিন্তু এসব কোম্পানির হাতবদল হওয়া শেয়ারের পরিমাণ থাকে কম। এ কারণে দ্রুত দাম বাড়লেও খুব বেশি লেনদেন হয় না।

ঢাকার বাজারে গত সপ্তাহ শেষে দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ প্রায় ২৪ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৫৯২ কোটি টাকা। আগের সপ্তাহে যার পরিমাণ ছিল ৭৭৪ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে দৈনিক গড় লেনদেন ১৮২ কোটি টাকা কমেছে। তাতে সপ্তাহ শেষে ডিএসইর মোট লেনদেন তিন হাজার কোটি টাকার নিচে নেমে গেছে। গত সপ্তাহ শেষে ডিএসইতে মোট লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৯৫৮ কোটি টাকা। আগের সপ্তাহে যার পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা।