শেয়ারবাজারে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অস্বাভাবিক বিক্রির চাপ সামাল দিতে ফ্লোর প্রাইস বা শেয়ারের সর্বনিম্ন দাম বেঁধে দেওয়া হয়েছে। কারণ, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত এ বিক্রির চাপ সামাল দেওয়া যাচ্ছিল না। যদিও ফ্লোর প্রাইস বসানো হয়েছে খুব সাময়িক ব্যবস্থা হিসেবে। এমনটাই জানিয়েছেন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম।
পুঁজিবাজার বিটের সাংবাদিকদের সংগঠন ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরাম (সিএমজেএফ) আয়োজিত ‘সিএমজেএফ টক’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রথমবারের মতো সিএমজেএফ টকের আয়োজন করে সংগঠনটি। প্রথম এ আয়োজনে অতিথি হিসেবে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন বিএসইসির চেয়ারম্যান।
নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধানকে সরাসরি প্রশ্নোত্তরের সুযোগ পেয়ে শেয়ারবাজারের কারসাজি, বাজারের সুশাসন, দরপতন, নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিভিন্ন পদক্ষেপ, ভালো কোম্পানি আনার উদ্যোগ, সরকারি কোম্পানির আরও শেয়ার ছাড়ার অগ্রগতিসহ নানা বিষয়ে জানতে চান সাংবাদিকেরা। বাজারের সুশাসনসংশ্লিষ্ট এক প্রশ্নের জবাবে বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, সবাইকে গণহারে শাস্তি দিয়ে কখনো সুশাসন নিশ্চিত করা যায় না। নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাজ কখনো বাজারে আতঙ্ক বা ভয়ের পরিবেশ তৈরি করা নয়। উদীয়মান অর্থনীতির একটি দেশ হিসেবে সমাজ বাস্তবতার নিরিখে আমাদের নানা সিদ্ধান্ত নিতে হয়। কারও ওপর রাগ-ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আবার কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে গেলে একটি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। চাইলেও কাউকে হুটহাট শাস্তি দিয়ে ফেলা যায় না। এ সময় তিনি বলেন, সুশাসন কখনো কারও একার পক্ষে নিশ্চিত করা সম্ভব না। বাজারব্যবস্থা, বাজারের অংশগ্রহণকারী, সমাজ সবাই মিলে যদি ঠিক হয় তবেই সুশাসন আসবে।
কারসাজির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা মুনাফার করার পর নামমাত্র জরিমানা করা হয় কারসাজিকারকদের। এমন অভিযোগ তুলে এ বিষয়ে বিএসইসির চেয়ারম্যানের বক্তব্য জানতে চান এক সাংবাদিক। জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের অনেক কিছু বিবেচনা করে ব্যবস্থা নিতে হয়। কারও কাছে তা কম-বেশি মনে হতে পারে। কিন্তু আমাদের বাস্তবতার নিরিখে কাজ করতে হয়।’
অনুষ্ঠানে তিনি জানান, শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ হিসাব শেয়ারের বাজারমূল্যে গণনা করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসি এ বিষয়ে একমত। এখন এ সিদ্ধান্ত বা ঘোষণা আসা সময়ের ব্যাপারমাত্র। প্রক্রিয়াগত কারণে এ সিদ্ধান্ত আসতে বিলম্ব হচ্ছে বলেও তিনি সাংবাদিকদের জানান।
শেয়ারবাজারে ভালো কোম্পানি আসছে না কেন? এ ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা কী—এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা মাইন্ডসেটের। আমাদের দেশে অনেক ভালো ভালো কোম্পানি আছে, যেগুলো প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে পারিবারিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে। এসব পরিবার তাদের বাইরে কোম্পানির মালিকানার সঙ্গে আর কাউকে যুক্ত করতে চান না। তবে আশা করছি, ধীরে ধীরে এ অবস্থার পরিবর্তন হবে। আশা করি, আগামী সেপ্টেম্বর থেকে কিছু ভালো কোম্পানি বাজারে আসবে।’
সরকারি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ছাড়ার অগ্রগতি বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, সরকারি লাভজনক একটি গ্যাস কোম্পানি ও একটি বিদ্যুৎ কোম্পানি বাজারে আসার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এ ছাড়া রূপালী ব্যাংকের আরও কিছু শেয়ার বাজারে ছাড়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপিতে শেয়ারবাজারের অবদান কম থাকা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম বলেন, ‘এত দিন আমাদের শেয়ারবাজার ছিল শুধু ইক্যুইটিনির্ভর। শুধু ইক্যুইটিনির্ভর বাজার দিয়ে জিডিপিতে শেয়ারবাজারের অবদান বাড়ানো যাবে না। এ জন্য বন্ডের বাজার বড় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকারি ট্রেজারি বন্ড, বিভিন্ন কোম্পানির পারপিচুয়াল বন্ডগুলোর লেনদেন শুরু হলে জিডিপিতে শেয়ারবাজারে অবদান অনেক বাড়বে।’