জামিনের পর বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুল আলমের পদত্যাগ
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুল আলম পদত্যাগ করেছেন। আজ সোমবার তিনি বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের কাছে তাঁর পদত্যাগপত্র জমা দেন।
বিএসইসির শীর্ষ পর্যায়ের একটি সূত্র তাঁর পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে এ বিষয়ে বিএসইসির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। বিএসইসির সূত্রটি জানায়, চাকরিতে ২৫ বছর পূর্ণ হওয়ায় তিনি চাকরিবিধি অনুযায়ী স্বেচ্ছায় অবসরের সুযোগটি গ্রহণ করেছেন।
গত বুধবার সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমানের বাধ্যতামূলক অবসরকে কেন্দ্র করে বিএসইসির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ ও তিন কমিশনারের কাছে চার দফা দাবি তুলে ধরেন। এই দাবি আদায়ে বিএসইসির কার্যালয়ের বিদ্যুৎ-সংযোগ, সিসিটিভি-সংযোগ বিচ্ছিন্ন, মূল ভবনের ফটক বন্ধ করে চেয়ারম্যান ও তিন কমিশনারকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। এরপর সেনাসদস্যরাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা চেয়ারম্যান ও তিন কমিশনারকে ‘অবরুদ্ধ’ অবস্থা থেকে উদ্ধার করেন। এই উদ্ধার অভিযানকালে বিএসইসির কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী আহত হন। এর প্রতিবাদে চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে গত বৃহস্পতিবার থেকে কর্মবিরতির ঘোষণা দেন বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
কর্মবিরতির কারণে বৃহস্পতিবার বিএসইসিতে অচলাবস্থা ছিল। এই অচলাবস্থার মধ্যে ওই দিন বেলা তিনটায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থার মধ্যে কার্যালয়ে আসেন চেয়ারম্যান ও কমিশনাররা।
গত বুধবারের ঘটনায় বিএসইসির ১৬ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আসামি করে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা হয়েছে। বিএসইসির চেয়ারম্যানের গানম্যান বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার এ মামলা করেন। এই মামলার অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ১ নম্বরে ছিলেন নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুল আলম। গত রোববার এই মামলায় তিনি জামিন নেন। গত রোববার ও সোমবার দুদিনে মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে মাহবুবুল আলমসহ মোট ১৩ জন অভিযুক্ত জামিন নিয়েছেন। জামিনপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা আজ সোমবার আগারগাঁওয়ে বিএসইসি কার্যালয়ে নিজ নিজ দপ্তরে কাজে যোগ দেন। তার আগে গত রোববার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে কাজে ফেরেন। তবে মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই ওই দিন কার্যালয়ে যাননি।
মাহবুবুল আলমের পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করে বিএসইসির শীর্ষ এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, যেহেতু তিনি মামলার অভিযুক্ত তাই তাঁর পদত্যাগপত্রটি তাৎক্ষণিকভাবে গ্রহণ করা হয়নি। আইনি মতামত নিয়ে এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
এদিকে আজ সোমবার বিএসইসির সব পর্যায়ের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান ও তিন কমিশনার। এই বৈঠকে কর্মীদের উদ্দেশে লিখিত বক্তব্য দেন চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। পরে এ বিষয়ে বিএসইসির পক্ষ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। তাতে গত বুধবার বিএসইসি সংঘটিত ঘটনাকে চরম অনভিপ্রেত ও কিছু উচ্ছৃঙ্খল কর্মচারীর প্ররোচনা এবং অংশগ্রহণে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে বলে উল্লেখ করা হয়। এ ঘটনা প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের পাশাপাশি গুরুতর ফৌজদারি অপরাধ।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বুধবারের ঘটনা পুঁজিবাজারের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এতে দেশে–বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে। সারা পৃথিবীতে নিয়ন্ত্রক সংস্থায় এ ধরনের ঘটনা এটাই প্রথম বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। বৈঠকে ভবিষ্যতে কর্মকর্তা–কর্মচারীদের পরিপূর্ণ দায়িত্বশীলতা ও শৃঙ্খলার সঙ্গে কাজ করার নির্দেশনা দেন বিএসইসির চেয়ারম্যান।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, পূর্বনির্ধারিত এই বৈঠক সব মিলিয়ে প্রায় ১০ মিনিটের মতো চলে। তাতে বক্তব্য দেন শুধু কমিশনের চেয়ারম্যান।