রাইট শেয়ার দেবে জেমিনি সি ফুড, বিনিয়োগকারীর জন্য লাভ না ক্ষতি

শেয়ারবাজারপ্রতীকী ছবি

ন্যূনতম মূলধনের শর্ত পূরণে অধিকারমূলক বা রাইট শেয়ার ছেড়ে ১২৮ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে হিমায়িত মৎস্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান জেমিনি সি ফুড। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত এ কোম্পানিটি তাদের বিদ্যমান একটি শেয়ারের বিপরীতে দুটি করে রাইট শেয়ার ইস্যু করবে। কোম্পানিটি গত রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের এ তথ্য জানিয়েছে।

কোম্পানিটি জানিয়েছে, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সভায় অধিকারমূলক শেয়ার ছাড়ার এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে বাজারে কোম্পানিটির শেয়ার রয়েছে ১ কোটি ৬ লাখ ৮৪ হাজার ১১১টি। এই শেয়ারের বিপরীতে কোম্পানিটি নতুন করে ইস্যু করবে ২ কোটি ১৩ লাখ ৬৮ হাজার ২২২টি শেয়ার। প্রতিটি অধিকারমূলক শেয়ার ইস্যু করা হবে ৬০ টাকায়, যার মধ্যে ১০ টাকা অভিহিত মূল্য ও ৫০ টাকা অধিমূল্য বা প্রিমিয়াম।

বর্তমানে কোম্পানিটির শেয়ারের বাজারমূল্য প্রায় ৪০৪ টাকা। বাজারমূল্যের চেয়ে প্রায় ৭ গুণ কম দামে প্রতিটি অধিকারমূলক শেয়ার ইস্যুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে কোম্পানিটি বাজার থেকে ১২৮ কোটি টাকা সংগ্রহ করলেও পরিশোধিত মূলধন হিসেবে যোগ হবে প্রায় ২১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। বাকি টাকা প্রিমিয়াম হিসেবে যুক্ত হবে।

জানা গেছে, ২০২১ সালে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) তালিকাভুক্ত কোম্পানির ন্যূনতম মূলধনসংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করেছিল। তাতে বলা হয়েছিল শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর সর্বনিম্ন পরিশোধিত মূলধন হতে হবে ৩০ কোটি টাকা। যেসব কোম্পানির মূলধন ৩০ কোটি টাকার কম সেগুলোর মূলধন বাড়াতে সময়সীমাও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল। বিএসইসির ওই নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে স্বল্প মূলধনি কোম্পানিগুলো তাদের মূলধন বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়।

এ জন্য প্রতিষ্ঠানগুলো মোটাদাগে দুটি পন্থা অবলম্বন করে। কোনো কোনো কোম্পানি লভ্যাংশ হিসেবে বোনাস শেয়ার দিয়ে আর কোনো কোনো কোম্পানি রাইট শেয়ার ছেড়ে ন্যূনতম মূলধনের শর্ত পূরণ করছে। আবার কোনো কোনো কোম্পানি বোনাস ও রাইট শেয়ার ছেড়ে মূলধন বাড়াচ্ছে। যেমনটি করছে জেমিনি সি ফুড।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিএসইসির নির্দেশনা মেনে মূলধন বাড়াতে গত ডিসেম্বরে সমাপ্ত আর্থিক বছরে ৭৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করেছিল জেমিনি সি ফুড। বোনাস শেয়ার ইস্যুর পরও কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন বেড়ে দাঁড়ায় ১০ কোটি ৬৮ লাখ টাকায়। এখন অধিকারমূলক শেয়ার ছাড়ার সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে এ মূলধন বেড়ে ৩০ কোটি টাকা ছাড়াবে। কোম্পানিটির শেয়ারধারী ও বিএসইসির অনুমোদনের পর এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে বলে কোম্পানিটি জানিয়েছে। এ জন্য ইজিএমের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭ এপ্রিল। কোম্পানিটি জানিয়েছে, অধিকারমূলক শেয়ার ছেড়ে কোম্পানিটি যে অর্থ সংগ্রহ করবে তা উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি ও ব্যাংকঋণ পরিশোধে খরচ করা হবে।

বিনিয়োগকারীদের জন্য লাভ না ক্ষতি
ধরা যাক, একজন বিনিয়োগকারী বর্তমান বাজারমূল্যে (৪০৪ টাকা) কোম্পানিটির ১০টি শেয়ার কিনল। তাতে তাঁর খরচ হলো ৪ হাজার ৪০ টাকা। এ শেয়ার তিনি অধিকারমূলক শেয়ারের রেকর্ড তারিখ পর্যন্ত ধরে রাখলেন। তাহলে ওই বিনিয়োগকারীর শেয়ার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ৩০টিতে। বাড়তি ২০টি অধিকারমূলক শেয়ারের জন্য জমা দিতে হবে ১ হাজার ২০০ টাকা। সব মিলিয়ে ৩০টি শেয়ারের জন্য ওই বিনিয়োগকারীকে বিনিয়োগ করতে হবে ৫ হাজার ২৪০ টাকা, তাতে প্রতিটি শেয়ারের ক্রয়মূল্য কমে দাঁড়াবে ১৭৫ টাকায়। যদি অধিকারমূলক শেয়ার ইস্যুর পরও কোম্পানিটির শেয়ারের বাজারমূল্য ৪০০ টাকা থাকে, তাহলে প্রতিটি শেয়ারে মূলধনি মুনাফা হবে ২২৫ টাকা।

উল্লেখ্য অধিকারমূলক শেয়ার ইস্যুর কারণে নিয়ম অনুযায়ী কোম্পানিটির শেয়ারে বাজারমূল্য নির্দিষ্ট অনুপাতে সমন্বয় হবে। তাতে সাময়িকভাবে শেয়ারের দাম কমে যেতে পারে। আবার নতুন করে শেয়ার ইস্যুর সঙ্গে সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে আয় না বাড়লে সে ক্ষেত্রে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস কমে যাবে। সব মিলিয়ে কোম্পানিটির রাইট শেয়ারে বিনিয়োগ কতটা লাভজনক হবে, তা নির্ভর করছে কোম্পানিটির শেয়ারের বাজারমূল্যের ওপর।