৩৭ মাসের মধ্যে সর্বনিম্নে ডিএসইর সূচক

শেয়ারবাজারগ্রাফিকস: প্রথম আলো

টানা দরপতনে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচকটি আরও তলানিতে নেমেছে। আজ সোমবার ডিএসইএক্স সূচকটি আরও ৩৮ পয়েন্ট কমে নেমে গেছে ৫ হাজার ৩৯৩ পয়েন্টে। গত ৩৭ মাসে এটিই ডিএসইএক্সের সর্বনিম্ন অবস্থান। এর আগে সর্বশেষ ২০২১ সালের ১৯ এপ্রিল এ সূচক ৫ হাজার ৩৫০ পয়েন্টের সর্বনিম্ন অবস্থানে ছিল।

ঢাকার বাজারের পাশাপাশি সূচক কমেছে চট্টগ্রামের বাজারেও। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচকটি এদিন ১৩২ পয়েন্ট বা প্রায় ১ শতাংশ কমেছে। দুই বাজারে সূচক কমলেও লেনদেনের উন্নতি হয়েছে। ঢাকার বাজারে আজ দিন শেষে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৫৬১ কোটি টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ১৫২ কোটি টাকা বা ৩৭ শতাংশ বেশি। চট্টগ্রামের বাজারে এদিন লেনদেন হয় ৭০ কোটি টাকার, যা আগের দিনের চেয়ে ৬২ কোটি টাকা বা পৌনে ৮০০ শতাংশ বেশি।

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দরপতনের বাজারে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে। এ কারণে আজ লেনদেনের প্রথম ৩০ মিনিটেই ডিএসইএক্স সূচকটি আগের দিনের চেয়ে প্রায় ৮০ পয়েন্ট কমে যায়। দিনের শুরুর বড় ধরনের এ দরপতন ঠেকাতে সক্রিয় হয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। পতন ঠেকাতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। ভালো ভালো কিছু শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক নিচে নেমে যাওয়ায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কেউ কেউ সেসব শেয়ারে বিনিয়োগ করে। তাতে দিন শেষে সূচকটি বড় পতনের হাত থেকে রক্ষা পায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শীর্ষস্থানীয় একটি ব্রোকারেজ হাউসের প্রধান নির্বাহী প্রথম আলোকে বলেন, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোসহ ভালো মৌল ভিত্তির কিছু শেয়ারের দাম এতটাই কমেছে যে কয়েক বছরের জন্য এসব শেয়ারে বিনিয়োগ করলে ভালো মুনাফার সম্ভাবনা রয়েছে। এ কারণে আমরা বাজারে বিনিয়োগ বাড়িয়েছি।

ব্রোকারেজ হাউস লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকার বাজারে সোমবার সূচকের পতনে যেসব কোম্পানির বড় ভূমিকা ছিল তার মধ্যে অন্যতম ছিল ব্র্যাক ব্যাংক, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, বেক্সিমকো ফার্মা, বিকন ফার্মা, পাওয়ার গ্রিড, প্রাইম ব্যাংক, সিটি ব্যাংক। এ সাত কোম্পানির শেয়ারের দরপতনে আজ ডিএসইএক্স সূচকটি কমেছে প্রায় সাড়ে ২৬ পয়েন্ট। এর মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ারের বড় দরপতনে সূচক কমেছে প্রায় সাড়ে ১০ পয়েন্ট।

গত বছরের জন্য ঘোষিত লভ্যাংশের মালিকানা নির্ধারণের জন্য গত রোববার ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ারের লেনদেন বন্ধ ছিল। রেকর্ড তারিখের পর আজ থেকে আবারও লেনদেনে ফিরেছে কোম্পানিটি। তাতে এদিন ব্যাংকটির শেয়ারের দাম প্রায় সোয়া ৭ শতাংশ বা ২ টাকা ৮০ পয়সা কমে দাঁড়ায় ৩৫ টাকা ৬০ পয়সায়। গত বছরের জন্য ব্যাংকটি ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশের পাশাপাশি ১০ শতাংশ বোনাস বা স্টক লভ্যাংশ ঘোষণা করে। বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণার কারণে নিয়ম অনুযায়ী, রেকর্ড তারিখের পর প্রথম লেনদেনের দিনেই বোনাস শেয়ারের সঙ্গে মিলিয়ে এটির শেয়ারের দাম সমন্বয় করা হয়। এ কারণে সোমবার ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ারের দাম ৭ শতাংশের বেশি কমেছে।

বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের দাম এক দিনে ৩ শতাংশের বেশি কমতে পারে না। বাজারের পতন ঠেকাতে গত ২৫ এপ্রিল থেকে শেয়ারের দাম কমার এ সীমা বেঁধে দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। এই সীমা বেঁধে দেওয়ার পর দেখা যাচ্ছে, দরপতনের বাজারে অল্প কিছু শেয়ারের হাতবদলে দিনের শুরুতেই বেশির ভাগ শেয়ারের দাম ৩ শতাংশ কমে যাচ্ছে। বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, যাঁরাই এখন শেয়ার বিক্রি করতে চাচ্ছেন, তাঁরা দিনের শুরুতেই ৩ শতাংশ কমে হাতে থাকা শেয়ার বিক্রির জন্য বিক্রয়াদেশ দিচ্ছেন। এতে সূচকের বড় পতন ঘটছে। আর বাজারে দেখা দিচ্ছে ক্রেতাসংকট।

ঢাকার বাজারে সোমবার লেনদেন হওয়া ৩৮৯ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৭৮টি বা ৭১ শতাংশেরই দাম কমেছে, বেড়েছে ২১ শতাংশ বা ৮১টির দাম আর অপরিবর্তিত ছিল ৩০টির বা ৮ শতাংশের দাম। ডিএসইতে আজ মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষে ছিল ওরিয়ন ফার্মা, শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, সোনালী আঁশ, ক্রিস্টাল ইনস্যুরেন্স, মুন্নু সিরামিক, ফার্মা এইডস, বসুন্ধরা পেপার মিলস, ইউনিলিভার কনজ্যুমার ও রংপুর ফাউন্ড্রি। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কিছুদিন ধরে বাজারে কারসাজির ঘটনা ঘটছে।