ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের প্রভাব, দুই কোম্পানিতে ধুঁকছে শেয়ারবাজার

শেয়ারবাজারপ্রতীকী ছবি

দুই কোম্পানির দরপতনে দেশের শেয়ারবাজার তিন দিন ধরে রীতিমতো ধুঁকছে। এই তিন দিনে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ১২৩ পয়েন্ট। আর বাজার মূলধন কমেছে সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকার বেশি। যে দুটি কোম্পানির কারণে বাজারে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সেগুলো হলো গ্রামীণফোন এবং ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ
বা বিএটিবি।

সম্প্রতি কোম্পানি দুটির শেয়ারের ওপর থেকে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বেঁধে দেওয়া ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন মূল্যস্তর প্রত্যাহার করা হয়। এর মধ্যে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববারে উঠে যায় গ্রামীণফোনের শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস। আর সোমবার থেকে প্রত্যাহার করা হয় বিএটিবির শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস। এর পর থেকে কোম্পানি দুটির শেয়ারের দরপতন হচ্ছে। তাতে ডিএসইএক্স সূচক নেমে এসেছে ৬ হাজার ১৩১ পয়েন্টে। আর বাজার মূলধন কমে দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৪৮ হাজার ২০৫ কোটি টাকা।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, গত রোববার থেকে গতকাল মঙ্গলবার—এই তিন কার্যদিবসে ডিএসইতে গ্রামীণফোনের শেয়ারের দাম ৩৪ টাকা বা প্রায় ১২ শতাংশ কমেছে। ফলে কোম্পানিটির ২৮৭ টাকা দামের শেয়ার নেমে এসেছে ২৫৩ টাকায়। একইভাবে মাত্র দুই কার্যদিবসে বিএটিবির শেয়ারের দাম কমেছে ৭৮ টাকা বা প্রায় ১৫ শতাংশ। কোম্পানিটির ৫১৯ টাকার শেয়ারের দাম কমে হয়েছে ৪৪১ টাকা। এ দুই কোম্পানির দরপতনের সামগ্রিক প্রভাব পড়েছে বাজারে।

শেয়ারবাজারের শীর্ষস্থানীয় ব্রোকারেজ হাউস লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, গতকাল বিএটিবির দরপতনের কারণে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ২৬ পয়েন্ট। আর গ্রামীণফোনের দরপতনের কারণে সূচকের পতন হয়েছে প্রায় ৩ পয়েন্ট। অর্থাৎ এ দুই কোম্পানির কারণেই ডিএসইতে গতকাল সূচক কমেছে ২৯ পয়েন্ট। ঢাকার বাজারের প্রধান সূচকটি গতকাল সব মিলিয়ে ৪৪ পয়েন্ট কমেছে। এই পতনে দুই কোম্পানির অবদান ৬৬ শতাংশ।

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে এ দুটি কোম্পানির শেয়ারের দাম ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকায় দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বড় অঙ্কের বিনিয়োগ আটকে ছিল। এখন স্বাভাবিক লেনদেনে ফিরে আসায় অনেকে শেয়ার বিক্রি করে তাঁদের বিনিয়োগ তুলে নিচ্ছেন। তবে বড় দরপতনের কারণে এসব শেয়ারের ক্রেতাও তৈরি হচ্ছে। ফলে কয়েক দিনের মধ্যেই কোম্পানি দুটির শেয়ারের এ অস্থিরতা থেমে যাবে বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

জানতে চাইলে বেসরকারি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বাণিজ্য অনুষদের ডিন মোহাম্মদ মুসা প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার পর কোম্পানি দুটির শেয়ারের দাম কমবে—এটা অনেকটা প্রত্যাশিতই ছিল। কারণ, দীর্ঘদিন ধরে এ দুটি শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের টাকা আটকে আছে। তাই গত কয়েক দিন আমরা এ দুটি শেয়ারের দরপতন দেখছি। তবে এ দরপতন খুব বেশি দীর্ঘস্থায়ী হবে বলে আমার মনে হয় না। কারণ, দুটি কোম্পানিই অত্যন্ত ভালো মানের। তাই কোম্পানি দুটির শেয়ারের দাম ঘুরে দাঁড়ালে এগুলোকে কেন্দ্র করে যে দরপতন চলছে, তা-ও থেমে যাবে।’

মোহাম্মদ মুসা আরও বলেন, সার্বিকভাবে বাজারের গতি কিছুটা শ্লথ হয়েছে। মূল্যস্ফীতিসহ অর্থনীতির নানামুখী চাপে বিনিয়োগ সক্ষমতা কমে যাওয়ায় বাজারে নতুন বিনিয়োগ কম আসছে।

ঢাকার শেয়ারবাজারে সূচক ও বাজার মূলধন কমলেও লেনদেন আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে। গতকাল ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৮৪৪ কোটি টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ৫০ কোটি টাকা বেশি।