২৩৮ কোটি টাকায় মালিকানা বিক্রি

  • এবিজি লিমিটেড সিএসইর প্রতিটি শেয়ার কিনছে ১৫ টাকায়। প্রতিষ্ঠানটি সিএসইর মোট ১৫ কোটি ৮৬ লাখ ৫৩ হাজার ৩৩৩টি বা ২৫ শতাংশ শেয়ার কিনছে।

শেয়ারবাজার
গ্রাফিকস: প্রথম আলো

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রায় ২৩৮ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতিষ্ঠান এবিজি লিমিটেড। সিএসইর মালিকানা কিনতে এ অর্থ বিনিয়োগ করছে প্রতিষ্ঠানটি। বিপুল এ বিনিয়োগের বিপরীতে এবিজি লিমিটেড পাবে সিএসইর ২৫ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা। শেয়ার কেনার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হওয়ার পর সিএসইর অংশীদার হবে এবিজি লিমিটেড।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) গতকাল বুধবার এবিজি লিমিটেডকে সিএসইর অংশীদার করার প্রস্তাব কয়েকটি শর্ত সাপেক্ষে অনুমোদন করেছে। গতকাল বিএসইসির কমিশন সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়। সভা শেষে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে বিএসইসি।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি গতকাল সিএসইর ২৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রির প্রস্তাব অনুমোদন করেছে।

জানা গেছে, এবিজি লিমিটেড সিএসইর প্রতিটি শেয়ার কিনছে ১৫ টাকায়। প্রতিষ্ঠানটি সিএসইর মোট ১৫ কোটি ৮৬ লাখ ৫৩ হাজার ৩৩৩টি বা ২৫ শতাংশ শেয়ার কিনছে। এর জন্য বিনিয়োগ করছে প্রায় ২৩৮ কোটি টাকা। এবিজি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান।

২০১০ সালের শেয়ারবাজার ধসের পর দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জের মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনাকে আলাদা করার (ডিমিউচুয়ালাইজেশন) বিষয়টি সামনে আসে। ওই ধসের পর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বে সরকার গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে দুই স্টক এক্সচেঞ্জের ডিমিউচুয়ালাইজেশনের সুপারিশ করা হয়। সেই সুপারিশ অনুযায়ী, সরকার স্টক এক্সচেঞ্জের ডিমিউচুয়ালাইজেশনের উদ্যোগ নেয়। ২০১৩

সালে দুই স্টক এক্সচেঞ্জের ডিমিউচুয়ালাইজেশন সম্পন্ন হয়।

ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন অনুযায়ী, ১৯৯৫ সালে দেশের দ্বিতীয় স্টক এক্সচেঞ্জ হিসেবে যাত্রা শুরু করা সিএসইর শেয়ারের ৪০ শতাংশ এরই মধ্যে সংস্থাটির ১৪৮ সদস্যের মধ্যে বণ্টন করা হয়। বাকি ৬০ শতাংশ শেয়ারের মধ্যে ২৫ শতাংশ কৌশলগত বিনিয়োগকারী ও ৩৫ শতাংশ শেয়ার সাধারণ ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য সংরক্ষিত ছিল। ৯ বছর ধরে সিএসইর হাতে ৬০ শতাংশ শেয়ার বিক্রির জন্য পড়ে ছিল। এই শেয়ারের মধ্যে কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের জন্য সংরক্ষিত ২৫ শতাংশ কিনবে এবিজি। কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে এবিজির কাছে শেয়ার বিক্রির পর বাকি ৩৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হবে। সাধারণ ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য সংরক্ষিত ৩৫ শতাংশ শেয়ার প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওর মাধ্যমে বিক্রির বিধান রয়েছে।

নিয়ম অনুযায়ী, কৌশলগত বিনিয়োগকারীর কাছে শেয়ার বিক্রি করে সিএসই যে অর্থ পাবে, তা ১৪৮ সদস্যের মধ্যে শেয়ারসংখ্যার ভিত্তিতে বণ্টন করা হবে। এতে গড়ে প্রত্যেক সদস্য ১ কোটি ৬১ লাখ টাকা পাবেন। তবে শেয়ারের কমবেশির কারণে অর্থের পরিমাণেরও কিছুটা হেরফের হতে পারে। সিএসইর ১৪৮ সদস্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বর্তমানে ২টি প্রতিষ্ঠানের মালিকানা বাজেয়াপ্ত অবস্থায় রয়েছে।

এর আগে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ২৫ শতাংশ শেয়ার কিনে সংস্থাটির অংশীদার হয় চীনের শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের সমন্বয়ে গঠিত জোট। কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে ডিএসইর শেয়ার কিনতে প্রায় ৯৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে চীনের দুই স্টক এক্সচেঞ্জের জোট। ২০১৮ সালে ডিএসইর অংশীদার হয় চীনের জোটটি।

জানা গেছে, ২০১৬ সাল থেকে দুই স্টক এক্সচেঞ্জ কৌশলগত বিনিয়োগকারীর কাছে শেয়ার বিক্রির জন্য দেশি-বিদেশি ক্রেতা খুঁজতে থাকে। তারই একপর্যায়ে ২০১৮ সালে এসে ডিএসই বিদেশি ক্রেতা খুঁজে পেলেও সিএসই আগ্রহী তেমন ক্রেতা পায়নি। ফলে কৌশলগত বিনিয়োগকারীর কাছে শেয়ার বিক্রির জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছ থেকে বারবার সময় নেয় সিএসই।

জানা গেছে, সিএসই শুরুতে বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠানকে তাদের মালিকানা অংশীদার করতে চেয়েছিল। এ জন্য তারা চীনের সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ, ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জসহ দুবাইভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করে। আবার দেশীয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশও (আইসিবি) শুরুতে সিএসইর অংশীদার হতে আগ্রহ প্রকাশ করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শেয়ার বিক্রির বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি। পরে বর্তমান পর্ষদ দায়িত্ব নিয়ে শেয়ার বিক্রির জন্য নতুন করে উদ্যোগ নেয়। পাশাপাশি কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালুরও উদ্যোগ নেয় সিএসই।

জানতে চাইলে সিএসইর চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহীম প্রথম আলোকে বলেন, ‘দীর্ঘদিনের চেষ্টার পর আমরা দেশীয় একটি প্রতিষ্ঠানকে আমাদের অংশীদার হিসেবে পেয়েছি। নিয়ন্ত্রক সংস্থাও দ্রুততার সঙ্গে আমাদের প্রস্তাব অনুমোদন করেছেন। এখন আমরা মালিকানার অংশীদারত্ব হাতবদলের পরের ধাপগুলো বাস্তবায়নের প্রস্তুতি শুরু করেছি।’