এক সপ্তাহের ব্যবধানে লেনদেন দ্বিগুণ শেয়ারবাজারে

ডিএসইতে গতকাল লেনদেন হয়েছে ১,৮৫৮ কোটি টাকার। আর ডিএসইএক্স সূচক বেড়ে ১৫ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠেছে।

শেয়ারবাজারগ্রাফিকস: প্রথম আলো

দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) এক সপ্তাহের ব্যবধানে লেনদেন প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এই সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসের প্রতিটিতেই দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে গতকাল বৃহস্পতিবার ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকার, যা প্রায় সাড়ে ১৬ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে সর্বশেষ ২০২২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ঢাকার বাজারে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৮৩২ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল।

লেনদেনের পাশাপাশি এদিন সূচকও বেড়েছে। ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৩৭৩ পয়েন্টে, যা গত ১৫ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০২২ সালের ৮ নভেম্বর ডিএসইএক্স সূচক ছিল ৬ হাজার ৩৮৪ পয়েন্ট। 

বাজারে মৌলভিত্তির অনেক শেয়ারের দাম এখনো অবমূল্যায়িত অবস্থায় রয়েছে। সেগুলোর দাম না বেড়ে উল্টো নিম্নমানের কোম্পানির দাম বাড়ছে। এ প্রবণতা চলতে থাকলে তা বাজারকে আবারও ঝুঁকির মুখে ফেলবে।
মোহাম্মদ মুসা, ডিন, বাণিজ্য অনুষদ, ইউআইইউ

ঢাকার বাজারে এই সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে মোট লেনদেন হয়েছে ৮ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকার। তাতে দৈনিক গড় লেনদেন দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকায়, যা আগের সপ্তাহের চেয়ে ৭৭৮ কোটি টাকা বা ৮৫ শতাংশ বেশি। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে গত রোববার ঢাকার বাজারে লেনদেন দেড় হাজার কোটি টাকা ছাড়ায়, যা পরের চার কার্যদিবসে আরও বেড়েছে।

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, সপ্তাহের শুরুতে বাজারে লেনদেন ও সূচকে গতি থাকায় নতুন করে অনেকে বিনিয়োগে এসেছেন। বাজার যখন ঊর্ধ্বমুখী থাকে তখন লেনদেনও বাড়ে। কারণ, ঋণ করে যাঁরা বিনিয়োগ করেন, শেয়ারের দাম বাড়লে তাঁদের বিনিয়োগ সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। আবার কেউ কেউ এক শেয়ার থেকে মুনাফা তুলে অন্য শেয়ারে বিনিয়োগ করেন। অর্থাৎ বিনিয়োগ এক শেয়ার থেকে অন্য শেয়ারে ঘুরতে থাকে। কিন্তু বাজার নিম্নমুখী থাকলে এমনটা হয় না।

ডিএসইতে সপ্তাহজুড়ে লেনদেনের শীর্ষে ছিল মাঝারি মানের তথা ‘বি’ শ্রেণিভুক্ত কোম্পানিগুলো। এই সপ্তাহে বি শ্রেণির কোম্পানিগুলোর সম্মিলিত লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা, যা আগের সপ্তাহের প্রায় দ্বিগুণ। গত সপ্তাহে ভালো মৌলভিত্তির ‘এ’ শ্রেণিভুক্ত কোম্পানিগুলোর সম্মিলিত লেনদেন ছিল ৪ হাজার ৭২ কোটি টাকার, যা আগের সপ্তাহে ছিল ২ হাজার ৩২৩ কোটি টাকা।

বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, শেয়ারবাজারে গতি ফেরা বিনিয়োগকারীসহ বাজারসংশ্লিষ্ট সব পক্ষের জন্যই ভালো। তবে এর আড়ালে বড় ধরনের শঙ্কাও থাকে। সেটি হলো মন্দ বা নিম্নমানের কোম্পানির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পায়।

জানতে চাইলে বেসরকারি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইউআইইউ) বাণিজ্য অনুষদের ডিন মোহাম্মদ মুসা বলেন, বাজারে মৌলভিত্তির অনেক শেয়ারের দাম এখনো অবমূল্যায়িত অবস্থায় রয়েছে। সেগুলোর দাম না বেড়ে উল্টো নিম্নমানের কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম বাড়ছে। এ প্রবণতা চলতে থাকলে তা বাজারকে আবারও ঝুঁকির মুখে ফেলবে।

ব্রোকারেজ হাউস লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজের দৈনিক প্রতিবেদন বলছে, গতকাল বাজারে সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে ওষুধ খাতের শেয়ারের। এই খাতের কোম্পানিগুলোর সম্মিলিত লেনদেন ছিল ৩১৮ কোটি টাকার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৬৫ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে প্রকৌশল খাতের। আর ২৩৫ কোটি টাকার শেয়ার বেচাকেনার সুবাদে তৃতীয় অবস্থান পায় বস্ত্র খাত।

ওষুধ খাতের কোম্পানিগুলোর মধ্যে এদিন সর্বোচ্চ লেনদেন হয় সেন্ট্রাল ফার্মার শেয়ার। টানা কয়েক বছর লভ্যাংশ দিতে না পারা এই লোকসানি কোম্পানির ৬৫ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। গত ১৪ জানুয়ারি থেকে পরবর্তী ১৮ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়ে দ্বিগুণ তথা ১৬ থেকে ৩২ টাকায় ওঠে।

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, কারসাজির মাধ্যমে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ানো হয়েছে। তাতে সাধারণ কিছু বিনিয়োগকারীও আকৃষ্ট হয়েছেন। যদিও গতকাল এই শেয়ারের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ দরপতন হয়েছে। এ ধরনের কোম্পানির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিকেই বাজারের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

মোহাম্মদ মুসা আরও বলেন, খারাপ শেয়ারের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধিতে বাজার কখনো দীর্ঘ মেয়াদে টেকসই হবে না। তাতে বরং বাজারের সম্ভাবনাটাই নষ্ট হবে।