ব্যাংকের শেয়ারে মূল্যবৃদ্ধি, বড় উত্থান মূল্যসূচকের

শেয়ারবাজার

ব্যাংক খাতের শেয়ারের ওপর ভর করে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে গতকাল রোববার দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মূল্যসূচকে বড় উত্থান ঘটেছে। ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স এদিন ৭৪ পয়েন্ট বা প্রায় সোয়া ১ শতাংশ বেড়েছে। তাতে সূচকটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৪৪৭ পয়েন্টে, যা গত ১৬ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০২২ সালের ১৬ অক্টোবর এই সূচক ছিল ৬ হাজার ৪৭৮ পয়েন্ট।

এদিন ডিএসইতে সূচকের উত্থানের পাশাপাশি লেনদেনেও ছিল ভালো গতি। মোট লেনদেন হয় ১ হাজার ৮৫২ কোটি টাকার শেয়ার ও ইউনিট ফান্ড। গত বৃহস্পতিবার এ বাজারে লেনদেন হয় ১ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন সপ্তাহের শুরুতেও গত সপ্তাহের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ করা গেছে।

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গতকালের বাজারে সূচকের বড় উত্থানের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ব্যাংক খাত। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৫টি ব্যাংকের মধ্যে গতকাল ৩৪টিরই শেয়ারের দাম বেড়েছে। শুধু ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারের দাম অপরিবর্তিত ছিল। কারণ, কোম্পানিটির শেয়ারের ওপর এখনো নিয়ন্ত্রক সংস্থার বেঁধে দেওয়া ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন মূল্যস্তর আরোপিত রয়েছে। ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকায় কোম্পানিটির শেয়ার তেমন লেনদেন হচ্ছে না।

গতকাল ব্যাংকগুলোর মধ্যে মূল্যবৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমায় (১০ শতাংশ) লেনদেন হয় ৬টির শেয়ার। ব্যাংকগুলো হলো এবি ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (এসআইবিএল)। নিয়ম অনুযায়ী, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম এক দিনে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত ডিসেম্বরে ব্যাংকগুলোর আর্থিক বছর শেষ হয়েছে। সেই হিসাবে সামনে সব ব্যাংকের লভ্যাংশ ঘোষণা করার কথা। তাই লভ্যাংশ ঘোষণাকে সামনে রেখে এ খাতের প্রতি প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ছে। এ ছাড়া ফ্লোর প্রাইস ও দরপতনের কারণে গত কয়েক বছরে ব্যাংকের শেয়ারের দামের খুব বেশি হেরফের হয়নি। তাতে অনেক ব্যাংকের শেয়ারের দাম অবমূল্যায়িত অবস্থায় ছিল।

ব্রোকারেজ হাউস লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের গতকালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকার বাজারে মূল্যবৃদ্ধিতে ব্যাংক খাত এগিয়ে থাকলেও লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষে ছিল ওষুধ খাত। এ খাতের সম্মিলিত লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৩৩৪ কোটি টাকা। দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল ব্যাংক খাত, এ খাতের সম্মিলিত লেনদেন ছিল ২৬৮ কোটি টাকার। ব্যাংক খাতের লেনদেনের বড় অংশ ছিল আবার দুটি ব্যাংকের। ব্যাংক দুটি হলো গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও আইএফআইসি ব্যাংক। ব্যাংক খাতের মোট লেনদেনের মধ্যে ১০২ কোটি টাকা বা প্রায় ৩৮ শতাংশ হলো এ দুটি ব্যাংকের। গত সপ্তাহেও ব্যাংক খাতের লেনদেনে এ দুটি ব্যাংকের বড় ভূমিকা ছিল। গত সপ্তাহে ব্যাংক খাতের কোম্পানিগুলোর সম্মিলিত লেনদেন ছিল ৬৩৭ কোটি টাকা, যার মধ্যে ২৬৭ কোটি টাকা বা ৪২ শতাংশই ছিল গ্লোবাল ইসলামী ও আইএফআইসি ব্যাংকের।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার বাজারে গত ৩১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত সাত কার্যদিবসে আইএফআইসি ব্যাংকের শেয়ারের দাম ২১ শতাংশ বা ২ টাকা ৬০ পয়সা বেড়েছে। আর একই সময়ে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারের দাম বেড়েছে ২ টাকা বা ২৬ শতাংশ।

অনেক ব্যাংকের শেয়ারের দাম ফেসভ্যালুর (অভিহিত মূল্য) নিচে বা কাছাকাছি নেমে এসেছিল। এখন বাজারে কিছুটা গতি সঞ্চার হওয়ায় এ খাতের অবমূল্যায়িত শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের কিছুটা আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
মোহাম্মদ মুসা, ডিন, বাণিজ্য অনুষদ, ইউআইইউ।

ব্যাংকের শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধি সম্পর্কে বেসরকারি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইউআইইউ) বাণিজ্য অনুষদের ডিন মোহাম্মদ মুসা প্রথম আলোকে বলেন, নানা অনিয়ম ও নেতিবাচক খবরের কারণে দীর্ঘদিন ব্যাংক খাতের বেশির ভাগ শেয়ার অবমূল্যায়িত অবস্থায় ছিল। অনেক ব্যাংকের শেয়ারের দাম ফেসভ্যালু বা অভিহিত মূল্যের নিচে বা কাছাকাছি নেমে এসেছিল। তাই এখন বাজারে কিছুটা গতি সঞ্চার হওয়ায় এ খাতের অবমূল্যায়িত ও কম দামি শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের কিছুটা আগ্রহ তৈরি হয়েছে। সামনে ব্যাংকগুলোর লভ্যাংশ ঘোষণার ব্যাপার রয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ তৈরিতে সহায়তা করছে।