১৪ কোম্পানির কার্যক্রম যাচাই করবে ডিএসই, লাভ কী তাতে

শেয়ারবাজার
গ্রাফিকস: প্রথম আলো

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ১৪ কোম্পানির কারখানা পরিদর্শনের অনুমোদন পেয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এ অনুমোদন দিয়েছে।

বিএসইসি সূত্রে জানা যায়, ডিএসইর পক্ষ থেকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৪২টি কোম্পানির কার্যক্রম ও কারখানা সরেজমিনে পরিদর্শনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।

নিয়ম অনুযায়ী, এ জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদনের জন্য আবেদন করা হয়। তবে বিএসইসির পক্ষ থেকে ১৪টি কোম্পানির কার্যক্রম পরিদর্শনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। যে ১৪টি কোম্পানি পরিদর্শনের অনুমোদন ডিএসইকে দেওয়া হয়েছে সেগুলো হলো ফরচুন শুজ, ন্যাশনাল ফিড মিলস, সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস, সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল রিফাইনারি, দুলামিয়া কটন স্পিনিং মিলস, ফ্যামিলিটেক্স, কেয়া কসমেটিকস, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ, নর্দান জুট ম্যানুফ্যাকচারিং, রিজেন্ট টেক্সটাইল মিলস, ঢাকা ডায়িং অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি, উসমানিয়া গ্লাস শিট, জাহিন স্পিনিং ও জাহিনটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ। এর মধ্যে ‘বি’ শ্রেণিভুক্ত কোম্পানি ৮টি, ‘জেড’ শ্রেণিভুক্ত ৪টি ও ‘এ’ শ্রেণিভুক্ত ২টি।

ডিএসই সূত্রে জানা যায়, কোম্পানিগুলোর মধ্যে কয়েকটি দীর্ঘদিন ধরে সিকিউরিটিজ আইনের বিভিন্ন বিধিবিধান পরিপালন করছে না। কোনো কোনো কোম্পানি লভ্যাংশ ঘোষণার পরও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিতরণ করছে না। আবার কোনো কোনো কোম্পানির উৎপাদন দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। কোনো কোনো কোম্পানি নিয়মিত বার্ষিক সাধারণ সভা বা এজিএম করছে না। ফলে এসব শেয়ারে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীরা লাভবান হচ্ছেন না।

সার্বিক বিষয়ে ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুর রহমান মজুমদার বলেন, কোনোগুলো উৎপাদনে আছে কি না এবং আর্থিক প্রতিবেদনে এসব কোম্পানি আয়-ব্যয়সহ অন্যান্য যেসব তথ্য দিচ্ছে, সেগুলো যথাযথ কি না ইত্যাদি বিষয় খতিয়ে দেখা হবে পরিদর্শনে। এরপর নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ারের দাম ঢাকার বাজারে গত ছয় মাসে তিন গুণ হয়ে গেছে। অথচ ক্রয়াদেশ না থাকায় বেশ কিছুদিন ধরে কোম্পানিটির উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। ২০১৪ সালে তালিকাভুক্ত এ কোম্পানি বর্তমানে মাঝারি মানের কোম্পানি হিসেবে ‘বি’ শ্রেণিভুক্ত। ২০১৪ সালে শেয়ারবাজারে আসার পর প্রথম চার বছর কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশ করে বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছিল। এরপর থেকে কোম্পানিটি আর বিনিয়োগকারীদের ২ শতাংশের বেশি লভ্যাংশ দিতে পারেনি।

আবার ২০১৬ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ফরচুন শু ২০২২ সালের জন্য বোনাস ও নগদ মিলিয়ে ১৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করলেও এখনো তা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিতরণ করেনি। অন্যদিকে ফ্যামিলিটেক্স, উসমানিয়া গ্লাস ও জাহিনটেক্স ২০১৮ সালের পর বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি। এর মধ্যে ফ্যামিলিটেক্সের মূল উদ্যোক্তাদেরও কোনো হদিস মিলছে না। ডিএসইর কাছেও কোম্পানিটির হালনাগাদ কোনো তথ্য নেই।

যে ১৪টি কোম্পানির সার্বিক কার্যক্রম পরিদর্শনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তার একটি বড় অংশই ২০১০ সালের শেয়ারবাজার ধসের পর বাজারে তালিকাভুক্ত হয়।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেনের সময় এসব কোম্পানিকে বাজারে আনা হয়েছিল। ওই সময় মানহীন কোম্পানিকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওর মাধ্যমে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা ছিল। ওই সময় অনেক কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত না করতে ডিএসইর পক্ষ থেকেও আপত্তি জানানো হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রক সংস্থা কোম্পানিগুলোকে বাজারে আসার অনুমোদন দেয়। এখন এসে দেখা যাচ্ছে সেসব কোম্পানি একে একে খারাপ হতে শুরু করেছে। আর তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।

যে ১৪ কোম্পানিকে নিয়ে এখন ডিএসই উদ্বিগ্ন, তার মধ্যে খায়রুল হোসেনের আমলে তালিকাভুক্ত হয়েছিল ৮টি। কোম্পানিগুলো হলো- ফরচুন শু, ন্যাশনাল ফিড মিলস, সেন্ট্রাল ফার্মা, ফ্যামিলিটেক্স, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন, রিজেন্ট টেক্সটাইল, জাহিন স্পিনিং ও জাহিনটেক্স।

ডিএসইর এ উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, ‘যেসব কোম্পানি খারাপ হয়ে গেছে, সেগুলো পরিদর্শন করে খুব বেশি কিছু করা যাবে বলে আমার মনে হয় না। পরিদর্শনের পর যদি জানা যায়, কোনো কোম্পানি বন্ধ, তাহলে সেগুলোর বিষয়ে কী করবে ডিএসই বা বিএসইসি? বড়জোর এসব কোম্পানিকে তালিকাচ্যুত করা যাবে। তাই তালিকাভুক্তির অনুমোদন দেওয়ার আগেই যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই করেই কোম্পানি বাজারে আনা উচিত। অন্যথায় এ ধরনের ক্ষতির হাত থেকে বিনিয়োগকারীদের রক্ষা করা যাবে না।’