এত বিনিয়োগকারী শেয়ারবাজার ছাড়ছেন কেন

শেয়ারবাজারগ্রাফিকস মো. মাহাফুজার রহমান

ঈদের আগের শেষ দুই কার্যদিবসে দেশের শেয়ারবাজার ঊর্ধ্বমুখী ছিল। এই দুই দিনে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বেশির ভাগ শেয়ারেরই দাম বেড়েছে। বদৌলতে এই বাজারের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স প্রায় ৬৮ পয়েন্ট বেড়েছে। তা সত্ত্বেও শেয়ারবাজার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সংকট যেন কাটছে না। দাম বাড়লেও বিনিয়োগকারীরা বাজার ছেড়ে যাচ্ছেন।

চলতি মাসে ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার আগে ছয় কার্যদিবসে শেয়ারবাজার ছেড়েছেন চার হাজারের বেশি বিনিয়োগকারী। এই ছয় দিনে এসব বিনিয়োগকারী তাঁদের বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাবে থাকা সব শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন। এতে বাজারে সার্বিকভাবে শেয়ারশূন্য বিও হিসাবের সংখ্যা আরও বেড়েছে।

শেয়ারবাজারে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে বিনিয়োগকারীদের শেয়ারধারণ–সংক্রান্ত তথ্য ও বিও হিসাবের সংখ্যা সংরক্ষণ করে সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল)। প্রতিষ্ঠানটির বিও হিসাব–সংক্রান্ত পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে বিনিয়োগকারীদের শেয়ারবাজার ছেড়ে যাওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।

সিডিবিএলের তথ্য অনুযায়ী, গত ৩১ মার্চ শেয়ারবাজারে শেয়ারশূন্য বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৫২ হাজার ৬২৯। ঈদের ছুটির আগের সর্বশেষ কার্যদিবস ৯ এপ্রিলে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৫৬ হাজার ৬৪৩–এ। সেই হিসাবে ১ থেকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত ছয় কার্যদিবসে শেয়ারশূন্য বিও হিসাবের সংখ্যা বেড়েছে ৪ হাজার ১৪। অর্থাৎ এসব হিসাবের সব শেয়ার বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, টানা দরপতনে শেয়ারবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতা চরমে পৌঁছেছে। এ কারণে আরও লোকসান হতে পারে, এমন ভয়ে বিনিয়োগকারীরা বাজার ছাড়ছেন। এ ছাড়া শেয়ারবাজারের চেয়ে এখন ব্যাংকে টাকা জমা রেখে বেশি মুনাফা পাওয়া যাচ্ছে। সেখানে টাকা খোয়ানোর ঝুঁকিও নেই। তাই অনেকে শেয়ারবাজার থেকে টাকা তুলে নিয়ে উচ্চ সুদে তা ব্যাংকে রাখছেন। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে শেয়ারবাজারে।

ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার আগের দুই দিন বাজার ইতিবাচক ধারায় থাকার পরও ৮৪২টি বিও হিসাবের সব শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। এর বিপরীতে দুই দিনে খোলা হয়েছে ৩৫৩টি বিও হিসাব। অর্থাৎ যে হারে বিনিয়োগকারীরা বাজার ছাড়ছেন, সে তুলনায় নতুন বিনিয়োগকারী আসছেন কম।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শীর্ষস্থানীয় একটি ব্রোকারেজ হাউসের প্রধান নির্বাহী প্রথম আলোকে বলেন, বাজারে এখন একধরনের অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। এ অবস্থায় ব্যক্তিশ্রেণি ও প্রাতিষ্ঠানিক সব বিনিয়োগকারীর মধ্যে বাজার নিয়ে আস্থার সংকট রয়েছে। ফলে নতুন করে কেউ বিনিয়োগের সাহস পাচ্ছেন না। অন্যদিকে ব্যাংকে আমানতের সুদহার এরই মধ্যে বেড়ে দুই অঙ্কের ঘর অতিক্রম করেছে। সে জন্য শেয়ার বেচে দিয়ে ব্যাংকে রাখছেন বিনিয়োগকারীরা। তাই শেয়ারবাজারে তারল্য–সংকট তৈরি হয়েছে।

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এ ধরনের পরিস্থিতিতে বাজার টানা কিছুদিন ঊর্ধ্বমুখী ধারায় থাকলে তাতে হয়তো কিছু বিনিয়োগকারী বাজারমুখী হতে পারেন। তবে বিনিয়োগ করে কারও অর্থ যেন বড় ধরনের ঝুঁকিতে না পড়ে, সে জন্য কারসাজির ঘটনা বন্ধসহ বাজারকে বিনিয়োগের জন্য আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে। বিনিয়োগকারীদেরও বুঝেশুনে শেয়ার কেনাবেচা করতে হবে।

সিডিবিএলের হিসাবে, শেয়ারবাজারে এখন সক্রিয় বিও হিসাবের সংখ্যা ১৭ লাখ ৮৭ হাজার ৮৪৩। এর মধ্যে শেয়ার আছে ১৩ লাখ ৫৫ হাজার ২৫৫টি হিসাবে। বাকি বিও হিসাবগুলো কাগজে-কলমে সক্রিয় দেখালেও বাস্তবে কোনো শেয়ার নেই।