কমেছে বিক্রি, বেড়েছে খরচ, আয় ও মুনাফায় বড় ধাক্কা

শেয়ারবাজারগ্রাফিকস: প্রথম আলো

দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকটের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে শেয়ারবাজারের কোম্পানির আয়ে। গতকাল রোববার শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ওষুধ ও রসায়ন খাতের কোম্পানি ফার্মাএইড তাদের অর্ধবার্ষিক (জুলাই–ডিসেম্বর) আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে কোম্পানিটির বিক্রি ও মুনাফায় সংকটের বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফুটে উঠেছে।

আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ছয় মাসে কোম্পানিটির বিক্রি কমেছে প্রায় ১২ শতাংশ। আর উৎপাদন খরচ বেড়েছে প্রায় ১৩ শতাংশ। এর ফলে ২০২২ সালের শেষ ছয় মাসে কোম্পানিটির কর–পরবর্তী মুনাফা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় সাড়ে ৮৮ শতাংশ বা ৩ কোটি টাকা কমে গেছে। আর শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস কমেছে ৯ টাকা ৪৬ পয়সা বা সাড়ে ৮৮ শতাংশ।

কোম্পানিটি জানিয়েছে, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি কোম্পানির বিক্রি কমে গেছে। এ ছাড়া কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি ও জ্বালানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় কোম্পানির মুনাফায় বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

২০২২ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর সময়কালে কোম্পানিটি ১৪ কোটি ৭২ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করেছে। বিক্রি হওয়া এ পণ্য তৈরির পেছনে কোম্পানিটির খরচ হয়েছে প্রায় ১২ কোটি টাকা। অথচ ২০২১ সালের জুলাই–ডিসেম্বরে কোম্পানিটির বিক্রি হওয়া ১৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকার পণ্য তৈরিতে খরচ হয়েছিল সাড়ে ১০ কোটি টাকা।

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর বিশ্বজুড়ে সব ধরনের পণ্যের দাম হু হু করে বাড়তে থাকে। তার ধাক্কা এসে লাগে বাংলাদেশেও। সেই ধাক্কায় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর খরচও বেড়ে যায়। তার বিপরীতে বিক্রি বাড়েনি। ফলে বড় ধরনের ধাক্কা লাগে মুনাফায়।

ফার্মাএইড বলছে, লোডশেডিং ও গ্যাসের স্বল্পতার কারণে কোম্পানির উৎপাদন কমে যাওয়ায় বিক্রিও কমেছে। এ ছাড়া কাঁচামালের দামসহ উৎপাদন খরচ যতটা বেড়েছে, পণ্যের দাম ততটা বাড়েনি। কারণ, পণ্যের দাম বাড়ালে তাতে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে থাকতে হতো। তাই বাজারে টিকে থাকতে উৎপাদিত পণ্যের দাম বাড়ানো হয়নি।

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ফার্মাএইড ওষুধের অ্যাম্পুল তৈরি করে। এটি এক ধরনের কাচের পাত্র। এ ধরনের পাত্র বা অ্যাম্পুল বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানিতে সরবরাহ করা হয়। এ পাত্রে ওষুধ কোম্পানিগুলো ইনজেকশনের উপকরণ সংরক্ষণ করে।

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে কোম্পানিটির কারখানা। ১৯৮৪ সালে এ কারখানায় উৎপাদন শুরু হয়। বাংলাদেশে এটিই ছিল ওষুধের অ্যাম্পুল তৈরির প্রথম কারখানা। কোম্পানিটি সাত আকারের অ্যাম্পুল তৈরি করে।

কোম্পানিটি ১৯৮৭ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। বর্তমানে এটির শেয়ারের বাজারমূল্য ৭৯১ টাকা—এটিই কোম্পানিটির শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্যস্তর বা ফ্লোর প্রাইস। গত ৯ নভেম্বর থেকে কোম্পানিটির শেয়ার সর্বনিম্ন মূল্যস্তরে আটকে আছে। তাই মুনাফায় বড় ধরনের পতনের পরও গতকাল বাজারে কোম্পানিটির শেয়ারের দামে কোনো ধরনের প্রভাব পড়েনি।