লেনদেনে বস্ত্র খাতের শেয়ারের আধিপত্য

শেয়ারবাজার
গ্রাফিকস: প্রথম আলো

শেয়ারবাজারে বস্ত্র খাতের শেয়ারের দাপট চলছে। দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মোট লেনদেনের ১৭ শতাংশই ছিল এ খাতের দখলে। বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সামনে এ খাতের কোম্পানিগুলো আর্থিক বছর শেষের লভ্যাংশ ঘোষণা করবে।

এ কারণে বিনিয়োগকারীরা এ খাতের শেয়ারের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে কারসাজিকারকেরাও কিছু কিছু কোম্পানির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক বাড়াচ্ছেন। আর দাম বাড়তে দেখে ওই সব শেয়ারে প্রলুব্ধ হচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

‘বিমা খাতসহ বেশ কিছু খাতের তুলনায় বস্ত্র খাতের কিছু কোম্পানির শেয়ারের দাম কম ছিল। আবার এ খাতের অনেক কোম্পানি স্বল্প মূলধনি।
মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সমন্বিত পল্লী উন্নয়ন কেন্দ্র বা সিরডাপের পরিচালক (গবেষণা)

কারসাজিকারকেরা যে বস্ত্র খাতের শেয়ার নিয়ে কারসাজির ঘটনা ঘটাচ্ছেন, তার সাম্প্রতিক উদাহরণ সোনারগাঁও টেক্সটাইল। মাত্র তিন মাসে কোম্পানিটির ৩২ টাকার শেয়ারের দাম বেড়ে হয়েছে প্রায় ৬৮ টাকা। কোম্পানিটি ২০১৯ সালের পর শেয়ারধারীদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি।

এ বছর লভ্যাংশ দিতে না পারলে এটি ‘জেড’ শ্রেণিভুক্ত হবে। তা সত্ত্বেও কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। এমনকি এ মূল্যবৃদ্ধির কোনো কারণ দেখছে না কোম্পানিসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাও। তাঁরা বলছেন, অল্প সময়ের ব্যবধানে শেয়ারের দাম দ্বিগুণের বেশি বেড়ে যাওয়ার মতো কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য কোম্পানির হাতে নেই। কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, এখনো কোম্পানিটি তাদের উৎপাদন সক্ষমতার পুরোটা ব্যবহার করতে পারছে না।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সমন্বিত পল্লী উন্নয়ন কেন্দ্র বা সিরডাপের পরিচালক (গবেষণা) মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিমা খাতসহ বেশ কিছু খাতের তুলনায় বস্ত্র খাতের কিছু কোম্পানির শেয়ারের দাম কম ছিল। আবার এ খাতের অনেক কোম্পানি স্বল্প মূলধনি।

এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে এক গোষ্ঠী কিছু শেয়ারের দাম তাদের ইচ্ছামতো বাড়াচ্ছে। এ কারণে আমরা দেখছি লভ্যাংশ দিতে না পারা ও ন্যূনতম মুনাফা করা কোম্পানির শেয়ারের দামও হু হু করে বাড়ছে। স্বল্প মূলধনি কোম্পানিগুলোর দাম বাড়তে থাকায় এগুলোর লেনদেনও বাড়ছে। তাতে বাজারে লেনদেন বাড়ছে। এ কারণে এ নিয়ে কেউ কিছু বলছে না।’

এদিকে বস্ত্র খাতের ওপর ভর করে ঢাকার বাজারে গতকাল দিন শেষে লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকায়, যদিও তা আগের দিনের চেয়ে ৩৬০ কোটি টাকা কম। এ নিয়ে ৯ কার্যদিবস ঢাকার বাজারে লেনদেন হাজার কোটি টাকার ওপরে রয়েছে। এর মধ্যে পরপর গত তিন কার্যদিবস ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকার ওপরে রয়েছে।

ব্রোকারেজ হাউস লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকার বাজারে গতকাল বস্ত্র খাতের কোম্পানিগুলোর সম্মিলিত লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২৯৩ কোটি টাকা, যা ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৭ শতাংশ।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, গতকাল লেনদেন হওয়া ৫৪ কোম্পানির মধ্যে ৯টি কোম্পানিরই লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১৪৭ কোটি টাকা।

ঢাকার বাজারে গতকাল লেনদেন কমলেও প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৬ পয়েন্ট বেড়েছে।