বিমা ও খাদ্য খাতনির্ভর শেয়ারবাজার, চলতি সপ্তাহও কি তা–ই যাবে

শেয়ারবাজার
গ্রাফিকস: প্রথম আলো

গত সপ্তাহে দেশের শেয়ারবাজার ছিল বিমা ও খাদ্য খাতনির্ভর। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) গত সপ্তাহের মোট লেনদেনের প্রায় অর্ধেকই ছিল এ দুই খাতের। আজ রোববার নতুন আরেকটি সপ্তাহ শুরু হচ্ছে। গত সপ্তাহের লেনদেনের চিত্র পর্যালোচনায় বাজার–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মনে তাই প্রশ্ন, এ সপ্তাহেও কি শেয়ারবাজার বিমা ও খাদ্য খাতনির্ভর থাকবে?

ব্রোকারেজ হাউস লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের সাপ্তাহিক পর্যালোচনা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডিএসইর গত সপ্তাহের মোট লেনদেনের ৪৭ শতাংশই ছিল বিমা ও খাদ্য খাতের দখলে। এর মধ্যে এককভাবে বিমা খাতের অবস্থান ছিল শীর্ষে। সপ্তাহ শেষে ডিএসইর মোট লেনদেনের ২৭ শতাংশই ছিল বিমা খাতের, আর ২০ শতাংশ খাদ্য খাতের কোম্পানিগুলোর। আবার এসব খাতের মধ্যে লেনদেনের বড় অংশই কয়েকটি কোম্পানিনির্ভর।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, ব্যাংক, আর্থিক খাতের কোম্পানিসহ মৌল ভিত্তির বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বেঁধে দেওয়া সর্বনিম্ন মূল্যস্তর বা ফ্লোর প্রাইজে আটকে আছে। এর বাইরে যেসব কোম্পানি চলতি বছরের শুরু থেকে বাজারে দাপুটে অবস্থানে রয়েছে, তার বেশির ভাগই বিমা, খাদ্য ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের।

এসব খাতের বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান স্বল্প মূলধনী হওয়ায় এক বছরের বেশি সময় ধরে কারসাজিকারকেরা ঘুরেফিরে সেসব শেয়ারে ভর করেছেন। এতে কিছু কিছু কোম্পানির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাও সেগুলোর বিষয়ে নিশ্চুপ। এ কারণে উৎসাহিত হচ্ছেন কারসাজিকারকেরা। আর শেয়ারবাজার হয়ে পড়েছে কয়েকটি খাত ও কোম্পানিনির্ভর।

বাজার–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বর্তমানে বাজারে যে ধারা চলছে, তা সামগ্রিকভাবে বাজারের জন্য ক্ষতিকর। কারণ, এসব খাত ও কোম্পানির শেয়ারের মূল্য সংশোধন হলেই দেখা যাচ্ছে বাজারে লেনদেন ও সূচকের বড় পতন হচ্ছে। এমনিতে বাজারে নতুন বিনিয়োগকারীরা আসছেন না। এ অবস্থায় বাজার কয়েকটি খাত ও শেয়ারনির্ভর হয়ে পড়লে তাতে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান ও বিনিয়োগকারী নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন।

গত সপ্তাহ শেষেও দেখা যাচ্ছে, ঢাকার বাজারে ঘুরেফিরে লেনদেন ও মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষে রয়েছে কয়েকটি কোম্পানি। এর মধ্যে ডিএসইতে গত সপ্তাহে মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষে তিনে ছিল যথাক্রমে দেশবন্ধু পলিমার, সোনালী আঁশ ও এমারেল্ড অয়েল। আর লেনদেনের শীর্ষে তিনে ছিল যথাক্রমে সি পার্ল বিচ রিসোর্ট, ফু-ওয়াং ফুড ও লাফার্জহোলসিম সিমেন্ট। এসব কোম্পানি বেশ কয়েক মাস ধরে ঘুরেফিরে লেনদেন ও মূল্যবৃদ্ধিতে দাপুটে অবস্থানে রয়েছে।

ডিএসইতে গত সপ্তাহ শেষে মোট লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ১৫ কোটি টাকা, যা আগের সপ্তাহের চেয়ে ৩২১ কোটি টাকা বা প্রায় ১৪ শতাংশ কম। মোট লেনদেন কমে যাওয়ায় গত সপ্তাহে দৈনিক লেনদেনও কমেছে। সপ্তাহ শেষে ঢাকার বাজারে দৈনিক গড় লেনদেন কমে নেমে এসেছে ৪০৩ কোটি টাকায়, আগের সপ্তাহেও যা ৪৬৭ কোটি টাকা ছিল। গত সপ্তাহে ডিএসইর মোট লেনদেনের মধ্যে ৬৪২ কোটি টাকা বা প্রায় ৩১ শতাংশই ছিল ১০ কোম্পানির। অর্থাৎ ঢাকার বাজারের লেনদেনের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ দশ কোম্পানির।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ নির্বাহী বলেন, ‘অনেক দিন ধরে বাজারে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আমাদের অবস্থান একপ্রকার নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। কারণ, ভালো ভালো মৌল ভিত্তির শেয়ারে বিনিয়োগ করে আমরা আটকে গেছি। ফ্লোর প্রাইজে আটকে থাকায় ওই সব শেয়ারের কোনো লেনদেন করা যাচ্ছে না। আর এ সময়ে বাজার হয়ে গেছে হাতে গোনা কিছু বিনিয়োগকারী ও কোম্পানিনির্ভর। ওই কোম্পানিতে যাদের বিনিয়োগ রয়েছে, তারাই বাজারে লেনদেন করতে পারছে। এর ফলে বাজারের বিনিয়োগকারীদের বড় একটি অংশই নিষ্ক্রিয়।’