বিএসইসি জানায়, ২০১৭ সালে আইপিওতে আসার আগে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের জানিয়েছিল, এবি ব্যাংকের কাছে তাদের প্রায় ১০০ কোটি টাকার দায় বা ঋণ রয়েছে। পরে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও বিএসইসির তদন্তে বেরিয়ে আসে কোম্পানিটির ঋণের পরিমাণ ছিল প্রায় ৬০০ কোটি টাকা। ব্যাংকের বিপুল ঋণের তথ্য গোপন করে কোম্পানিটি আইপিওর মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ৪৩ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। আইপিওর মাধ্যমে সংগ্রহ করা টাকা কোম্পানিটি ব্যাংক ঋণ পরিশোধ ও ব্যবসা সম্প্রসারণে বিনিয়োগ করবে বলে জানিয়েছিল। কিন্তু সেটি না করে কোম্পানিটি জালিয়াতির করে সহযোগী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের অর্থ আত্মসাৎ করে।
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির চার বছর না পেরোতেই ২০২১ সালে এসে বন্ধ হয়ে যায় কোম্পানিটি। কারখানার উৎপাদন ও প্রধান কার্যালয় বন্ধ হয়ে গেলেও তা বিনিয়োগকারীদের জানায়নি কোম্পানিটি। গত বছর ডিএসইর একটি প্রতিনিধিদল নুরানী ডাইংয়ের কারখানা ও প্রধান কার্যালয় সরেজমিন পরিদর্শন করে বন্ধের এ ঘটনা জানতে পারে।
২০১৭ সালে কোম্পানিটিকে বাজারে আনতে ইস্যু ব্যবস্থাপকের দায়িত্বে ছিল ইম্পেরিয়াল ক্যাপিটাল, ইবিএল ইনভেস্টমেন্টস ও সিএপিএম অ্যাডভাইজরি লিমিটেড। এ তিন ইস্যু ব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধেও মামলা ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। বিএসইসি বলছে, কোম্পানিটি আইপিওতে আসার জন্য নানা ধরনের জালিয়াতির আশ্রয় নিলেও ইস্যু ব্যবস্থাপকেরা আইপিও বিবরণী বা প্রসপেক্টাসে উল্লেখিত তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন। এতে বিনিয়োগকারীরা প্রতারিত হয়েছেন। তবে ২০১৭ সালে কোম্পানিটির আইপিও অনুমোদনের সময়ই এটির মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল পুঁজিবাজার–সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষ। তৎকালীন কমিশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, মানহীন ও দুর্বল কোম্পানি তালিকাভুক্তির। এখন এসে তদন্তে প্রমাণ মিলছে প্রতারণার মাধ্যমে এসব কোম্পানির কোনো কোনোটি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে।
এ ছাড়া বিএসইসির তদন্তে আরও বেরিয়ে আসে কোম্পানিটির উদ্যোক্তা–পরিচালকদের হাতে সম্মিলিতভাবে যে শেয়ার ছিল (প্রায় ৩১ শতাংশ) তা যমুনা ব্যাংক ক্যাপিটালে জামানত রেখে ঋণ নেওয়া হয়। পরে ওই ঋণখেলাপিতে পরিণত হয়েছে। এসব কারণে কোম্পানিটির উদ্যোক্তা, ইস্যু ব্যবস্থাপক ও আর্থিক প্রতিবেদন নিরীক্ষার সঙ্গে জড়িত নিরীক্ষকদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা ও শাস্তিমূলকব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এদিকে গত বছরের মে মাসের পর থেকে কোম্পানি–সংক্রান্ত কোনো তথ্য নেই স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে। সর্বশেষ ২০২১ সালের ২ মে অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য প্রকাশ করেছিল কোম্পানিটি। ২০২০ সালের পর কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের জন্য কোনো লভ্যাংশও ঘোষণা করেনি। বর্তমানে ডিএসইতে কোম্পানিটির শেয়ার সাত টাকায় লেনদেন হচ্ছে।