তিন মাসে চার গুণ বন্ধ কোম্পানি কেপিপিএলের শেয়ারের দাম

গত ৫ নভেম্বর কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ছিল ১২ টাকা ৮০ পয়সা, যা বেড়ে গত বৃহস্পতিবার ৫০ টাকায় উঠেছে।

শেয়ারবাজারগ্রাফিকস: প্রথম আলো

বন্ধ কোম্পানি খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের (কেপিপিএল) শেয়ারের দাম বেড়ে মাত্র তিন মাসে চার গুণ হয়ে গেছে। এ সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারদর ১৩ টাকা থেকে বেড়ে ৫০ টাকায় উঠেছে। তিন মাসে এটির দাম বেড়েছে ৩৭ টাকা ২০ পয়সা বা ২৯১ শতাংশ। এর মধ্যে গত সপ্তাহে পাঁচ কার্যদিবসেই কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েছে ১৯ টাকা। বদৌলতে এই সপ্তাহে মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষে উঠে যায় কোম্পানিটি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে কোম্পানিটির কার্যক্রম চলছে নামকাওয়াস্তে। নানা আর্থিক অনিয়মের দায়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নির্দেশে ২০২১ সাল থেকে কোম্পানিটির ব্যাংক হিসাব জব্দ রয়েছে। কিন্তু শেয়ারের দরবৃদ্ধিতে কোম্পানির কার্যক্রমের কোনো প্রভাবই নেই।

তাই কোম্পানিটির এমন মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট অনেকের মনে। তাঁরা বলছেন, বন্ধ একটি কোম্পানির শেয়ারের দাম প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়লেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছে না। ফলে কারসাজিকারকেরা ইচ্ছেমতো শেয়ারটির দাম বাড়ানোর সুযোগ পাচ্ছে।

কারসাজি ছাড়া বন্ধ এ কোম্পানির শেয়ারের দাম এভাবে বাড়ার আর কোনো কারণ নেই। এ ধরনের মূল্যবৃদ্ধি থামাতে হলে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
মোহাম্মদ মুসা, বেসরকারি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের ডিন

ইদানীং শেয়ারবাজারে অবশ্য বন্ধ কিছু কোম্পানিরই দাপট চলছে। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে এসব কোম্পানির শেয়ারের দাম। শেয়ারবাজারের সূচক গণনায়ও এই কোম্পানিগুলোকে হিসাবে ধরা হয়। ফলে কারসাজির মাধ্যমে কোম্পানিগুলোর শেয়ারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির ফলে সূচকেও ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

এর বিপরীতে ফ্লোর প্রাইসের কারণে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স থেকে বাদ পড়েছে ভালো ভালো বেশ কিছু কোম্পানি। বর্তমানে ডিএসইএক্স সূচক গণনায় ধরা হচ্ছে ২৫০টি কোম্পানি। আর এ সূচকে অন্তর্ভুক্ত নেই ১০৬টি কোম্পানি। ফলে ডিএসইর প্রধান সূচকটি বিনিয়োগকারীদের একধরনের ভুল বার্তা দিচ্ছে বলে মনে করেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষকেরা।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, গত ৫ নভেম্বর খুলনা প্রিন্টিংয়ের শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ১২ টাকা ৮০ পয়সা। ওই দিন কোম্পানিটির শেয়ারের বাজার মূলধন ছিল ১০০ কোটি টাকারও কম। কিন্তু তিন মাস ধরে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির ফলে ১ ফেব্রুয়ারি এটির বাজার মূলধন বেড়ে হয়েছে ৩৩২ কোটি টাকার বেশি। কারসাজির মাধ্যমে শেয়ারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির ফলে তিন মাসে এটির বাজার মূলধনও ২৩২ কোটি টাকার বেশি বেড়েছে, সূচক গণনায় বাড়তি এ বাজার মূলধন যুক্ত করা হচ্ছে।

এদিকে শেয়ারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণ জানতে চেয়ে কোম্পানিটিকে গত কয়েক মাসে কয়েক দফা চিঠি দেয় ডিএসই কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কোম্পানিটি কার্যক্রমে না থাকায় সেই চিঠিরও উত্তর মিলছে না। এ অবস্থায় কোম্পানিটির শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধানে দ্রুত তদন্তের উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বাজার বিশ্লেষকেরা।

এ বিষয়ে বেসরকারি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের ডিন মোহাম্মদ মুসা প্রথম আলোকে বলেন, কারসাজি ছাড়া বন্ধ এ কোম্পানির শেয়ারের দাম এভাবে বাড়ার আর কোনো কারণ নেই। এ ধরনের মূল্যবৃদ্ধি থামাতে হলে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা চুপচাপ থাকলে তাতে কারসাজিকারকেরা আরও বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে। এ কারণে এ ধরনের কোম্পানিতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকতে হবে।