সপ্তাহের শেষ দিনে বিক্রির চাপে সূচক ও লেনদেন কমেছে
বিক্রির চাপে শেয়ারবাজারে গতকাল বৃহস্পতিবার লেনদেন হওয়া অধিকাংশ শেয়ারেরই দরপতন হয়েছে। তাতে বাজারে সূচকের পাশাপাশি লেনদেনও কমে গেছে। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৬২ পয়েন্ট বা ১ শতাংশের বেশি কমে গেছে। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচকটি কমেছে ১২৯ পয়েন্ট বা প্রায় পৌনে ১ শতাংশ। সূচকের পাশাপাশি দুই বাজারে লেনদেনও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে।
ঢাকার বাজারে গতকাল দিন শেষে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৬৬৪ কোটি টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ৩০৩ কোটি টাকা বা ৩১ শতাংশ কম। চট্টগ্রামের বাজারে এদিন লেনদেন হয় ৯ কোটি টাকার, যা আগের দিনের চেয়ে ৩৪ কোটি টাকা বা ৭৯ শতাংশ কম।
বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত কয়েক দিনের সূচকের উত্থানের পর বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ মুনাফা তুলে নিতে শেয়ার বিক্রি করে। তাতে শেয়ারের দামের কিছুটা মূল্য সংশোধন শুরু হলে আতঙ্কে অন্য বিনিয়োগকারীরাও হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে দেন। এ কারণে দিন শেষে বড় দরপতন ঘটে। শেয়ারবাজারের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বাজারসংশ্লিষ্টরা বলেন, যখনই বাজারে সামান্য দরপতন দেখা দেয়, তখনই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কার আগে কে শেয়ার বিক্রি করবেন, তার প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এতে করে ক্রেতাসংকট দেখা দেয়।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বিধান অনুযায়ী, বর্তমানে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির শেয়ারের দাম এক দিনে ৩ শতাংশ বেশি কমতে পারে না। ফলে দরপতন শুরু হলে বেশির ভাগ বিনিয়োগকারীই সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ কম দামে শেয়ার বিক্রি করে দেন। তাতে অল্প কিছু শেয়ারের হাতবদল হয়ে লেনদেন কমে যায়। বেশির ভাগ কোম্পানির ক্ষেত্রে এ ধরনের ঘটনা ঘটায় তাতে দিন শেষে সূচকের বড় পতন হয়।
ঢাকার বাজারে গতকাল দরপতনের শীর্ষে থাকা ১০ কোম্পানির সব কটিরই সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ করে দরপতন হয়েছে। কোম্পানিগুলো হলো বিবিএস কেব্লস, লিনডে বাংলাদেশ, ডেলটা লাইফ ইনস্যুরেন্স, আমরা টেকনোলজিস, ইস্টার্ন হাউজিং, গ্রিন ডেলটা ইনস্যুরেন্স, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, ইউনিয়ন ইনস্যুরেন্স, বেক্সিমকো ফার্মা ও প্রাইম টেক্সটাইল। এই ১০ কোম্পানির বাইরেও গতকাল দরপতন হওয়া বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বা ইউনিটের দাম ৩ শতাংশের কাছাকাছি কমেছে।
ঢাকার বাজারে গতকাল সব মিলিয়ে ৩৯৭টি প্রতিষ্ঠানের লেনদেন হয়। তার মধ্যে ৩৪৩টি বা ৮৬ শতাংশেরই দাম কমেছে, দাম বেড়েছে ৩৬টির বা ৯ শতাংশের আর অপরিবর্তিত ছিল ১৮টির বা ৫ শতাংশের। চট্টগ্রামের বাজারে লেনদেন হওয়া ২৬৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২১৩টির বা ৮০ শতাংশেরই দাম কমেছে, বেড়েছে ৪৩টির বা ১৬ শতাংশের আর অপরিবর্তিত ছিল ১২টির বা ৪ শতাংশের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শীর্ষস্থানীয় একটি ব্রোকারেজ হাউসের প্রধান নির্বাহী প্রথম আলোকে বলেন, যখনই বাজারে শেয়ারের দাম কমতে শুরু করে, তখন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শেয়ার বিক্রির প্রবণতাও বেড়ে যায়। কারণ, বাজারের ওপর এখনো বিনিয়োগকারীদের ওপর পুরোপুরি আস্থা ফেরত আসেনি। তাই দরপতন শুরু হলে কার আগে কে শেয়ার বিক্রি করবেন, সেই প্রবণতা দেখা যায়।
ব্রোকারেজ হাউস লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকার বাজারে গতকাল সূচকের পতনের পেছনে যেসব কোম্পানির সবচেয়ে বেশি অবদান ছিল, তার মধ্যে শীর্ষ ৫টি হচ্ছে বেক্সিমকো ফার্মা, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, বিকন ফার্মা, অলিম্পিক ও ইস্টার্ন ব্যাংক। এই পাঁচ কোম্পানির দরপতনে ডিএসইএক্স সূচকটি সম্মিলিতভাবে কমেছে ১৪ পয়েন্ট।