আর্থিক চাপে গ্রামীণফোন, বিনিয়োগকারীদের দিতে পারল না লভ্যাংশ

গ্রামীণফোন

টেলিকম খাতের শীর্ষ কোম্পানি গ্রামীণফোন বা জিপি প্রথমবারের মতো এবার শেয়ারধারীদের অন্তর্বর্তী কোনো লভ্যাংশ দিতে পারেনি। দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর কোম্পানিটি প্রতিবছরই অর্ধবার্ষিক (ছয় মাস) ভিত্তিতে লভ্যাংশ প্রদান করেছে। এ ছাড়া বছর শেষেও লভ্যাংশ দিয়েছে কোম্পানিটি। এবারই কেবল ব্যতিক্রম ঘটেছে।

গ্রামীণফোন বলছে, আদালতের রায়ে টু–জি লাইসেন্সের তরঙ্গ মাশুল, ভ্যাট ও আয়কর বাবদ গত ছয় মাসে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) ১ হাজার ৭৬৯ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে। তাতে নগদ অর্থের চাপ তৈরি হওয়ায় এ বছর তারা বিনিয়োগকারীদের কোনো অন্তর্বর্তীকালীন লভ্যাংশ দিতে পারেনি।

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য অনুযায়ী, গ্রামীণফোন ২০০৯ সালে এ দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর ২০১০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর বিনিয়োগকারীদের অন্তর্বর্তীকালীন লভ্যাংশ দিয়ে আসছে। লভ্যাংশের হার ছিল সর্বনিম্ন ৩৫ থেকে সর্বোচ্চ ১৪০ শতাংশ পর্যন্ত। সব লভ্যাংশই দিয়েছে নগদে। কিন্তু এ বছরই আর্থিক সংকটের কারণে ব্যত্যয় ঘটেছে বলে জানায় কোম্পানিটি।

এদিকে গতকাল মঙ্গলবার গ্রামীণফোনের অর্ধবার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে কোম্পানিটি ১ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা মুনাফা করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের ১ হাজার ৭৩০ কোটি টাকার চেয়ে ২৭০ কোটি টাকা বা প্রায় ১৬ শতাংশ বেশি। তাতে চলতি বছরের প্রথমার্ধ শেষে গ্রামীণফোনের শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ টাকা ৬২ পয়সা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ১২ টাকা ৮২ পয়সা। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে গ্রামীণফোন যে মুনাফা করেছে, তার বড় অংশই এসেছে এপ্রিল–জুন তিন মাসে। এ সময় প্রতিষ্ঠানটি ১ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা মুনাফা করেছে।

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত একটি কোম্পানি নির্দিষ্ট একটি সময়ে যে পরিমাণ আয় করে, তা থেকে সব ধরনের খরচ ও কর বাদ দেওয়ার পর যা অবশিষ্ট থাকে, সেটিই হলো মুনাফা। মুনাফা থেকেই বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেয় কোম্পানি।

গ্রামীণফোন গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, তাদের গত ছয় মাসের আয়ের বড় অংশই এসেছে ইন্টারনেট প্যাকেজ বিক্রি থেকে। প্রতিষ্ঠানটির মোট গ্রাহকের মধ্যে ৪ কোটি ৪১ লাখ বা প্রায় ৫৭ শতাংশই জিপির ইন্টারনেট সেবা নিয়ে থাকে। জুন শেষে গ্রামীণফোনের গ্রাহকসংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ১৩ লাখ।

চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে গ্রামীণফোন ৭ হাজার ৭৩৫ কোটি টাকা আয় করেছে। এর মধ্যে ৭ হাজার ৩০ কোটি টাকা কোম্পানিটি কর, ভ্যাট, শুল্ক, লাইসেন্স ও তরঙ্গ মাশুল বাবদ সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছে; যা কোম্পানিটির মোট আয়ের প্রায় ৯১ শতাংশ।