তলানির দিকে নেমেছে লেনদেন, করণীয় নির্ধারণে আজ সভা

ঢাকার বাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৬৩ শতাংশের দামই এখন সর্বনিম্ন মূল্যস্তরে আটকে আছে।

শেয়ারবাজারগ্রাফিকস: প্রথম আলো

শেয়ারবাজারের লেনদেন ও সূচক যেন তলানির দিকে ছুটছে। এতে বাজারে আতঙ্কে বিক্রি শুরু হয়েছে। ফলে লেনদেন হওয়া বেশির ভাগ শেয়ারের দরপতন ঘটছে। তাতে কমছে সূচক। দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গতকাল বুধবারও বড় দরপতন হয়েছে। এদিন ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৩৬ পয়েন্ট কমে চার মাস আগের অবস্থানে ফিরে গেছে। আর লেনদেন ফিরে গেছে সাড়ে চার মাস আগের অবস্থানে।

ডিএসইতে গতকাল লেনদেন কমে ৩৫২ কোটি টাকায় নেমেছে। এর আগে গত ২৮ মার্চ এ বাজারে সর্বনিম্ন ২৭২ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল। গত পাঁচ কার্যদিবস শেয়ারবাজারে টানা দরপতন ঘটেছে। এর মধ্যে গত দুই দিনে ডিএসইর প্রধান সূচকটি ৬৭ পয়েন্ট বা ১ শতাংশের বেশি কমে হয়েছে ৬ হাজার ২২১ পয়েন্ট। এর আগে ডিএসইএক্স সূচকটি চলতি বছরের ১৬ এপ্রিল ৬ হাজার ২১৬ পয়েন্ট ছিল।

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সাম্প্রতিক মন্দাভাব বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ও হতাশা ছড়িয়েছে। এ কারণে তাঁরা আরও বেশি লোকসানের ভয়ে শেয়ার ছেড়ে দিচ্ছেন। এভাবে বিক্রির চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় বাজারে ক্রেতাসংকট দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে নতুন করে কেউ বিনিয়োগে আসছেন না।

এদিকে সার্বিক বাজারের বর্তমান পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার উদ্বেগ বেড়েছে। এ কারণে বাজারসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আজ বৃহস্পতিবার আলাদা দুটি সভা ডেকেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, সকাল ১০টায় মিউচুয়াল ফান্ড ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত তহবিল ব্যবস্থাপকদের সঙ্গে প্রথম সভা হবে। আর বেলা ১১টায় অনুষ্ঠেয় সভায় অংশ নেবেন শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি ব্যাংক, মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। বর্তমান পরিস্থিতিতে কীভাবে বাজারে বিনিয়োগ এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা বাড়ানো যায়, তার কৌশল নির্ধারণে এ দুটি সভা আহ্বান করা হয়েছে।

বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত দুই দিন বাজার নিম্নমুখী ধারায় ছিল। একটি গোষ্ঠী নানা ধরনের গুজব ছড়িয়ে বাজারে দরপতন ঘটানোর চেষ্টা করছে। গুজব ছড়ানো কয়েকজন ব্যক্তিকে আমরা চিহ্নিত করেছি। তাদের বিরুদ্ধে শিগগিরই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এদিকে দরপতনের ধারাবাহিকতায় গতকাল নতুন করে আরও ১৫টি কোম্পানির শেয়ার সর্বনিম্ন মূল্যস্তর বা ফ্লোর প্রাইসে নেমে এসেছে। সব মিলিয়ে বর্তমানে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ২৪৮টি প্রতিষ্ঠান ফ্লোর প্রাইসে আটকে আছে, যা তালিকাভুক্ত মোট প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৬৩ শতাংশ।

শেয়ারবাজারের সবচেয়ে ভালো কোম্পানিগুলোর একটি স্কয়ার ফার্মার শেয়ার গতকাল আবারও ফ্লোর প্রাইসে (২০৯ টাকা ৮০ পয়সা) নেমে এসেছে। এদিন আরও যেসব কোম্পানির শেয়ারের দাম ফ্লোর প্রাইসে নেমে এসেছে তার মধ্যে রয়েছে– শাহ্‌জালাল ব্যাংক, এশিয়া ইনস্যুরেন্স, মীর আকতার, সন্ধানী ইনস্যুরেন্স, ইউনাইটেড ইনস্যুরেন্স, রহিমা ফুড, মুন্নু সিরামিক, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক ও অ্যাপেক্স ট্যানারি।

সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘অর্থনীতি যখন ভালো ছিল, তখনো নানা ভুল সিদ্ধান্তে শেয়ারবাজার ভুগেছে। আর এখন অর্থনীতি চাপে আছে। এই সময়ে শেয়ারবাজার ভালো হওয়ার কারণ দেখি না। দীর্ঘদিন ধরে ফ্লোর প্রাইস দিয়ে শেয়ারের দাম ধরে রাখার কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে দরপতনের আতঙ্ক আরও বেড়েছে। ফলে বাজারে যা হওয়ার কথা, তা-ই হচ্ছে।’