প্রথমবার বিএসইসিতে গভর্নর, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস

শেয়ারবাজার

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) গঠনের পর প্রথমবারের মতো সংস্থাটিতে অতিথি হিসেবে যাচ্ছেন বর্তমান গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। আগামীকাল সোমবার বিএসইসির উদ্যোগে আয়োজিত বিনিয়োগ সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন গভর্নর। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলিম উল্লাহ। বিএসইসির পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিএসইসির শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সোমবারের অনুষ্ঠানে গভর্নরের যোগদানের পর এটিই হবে বিএসইসি কার্যালয়ে কোনো গভর্নরের প্রথম উপস্থিতি। এর আগে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন গভর্নরের সঙ্গে বিএসইসির শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বৈঠক হলেও বেশির ভাগই হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকে। এর বাইরেও বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও মন্ত্রণালয়ে একসঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন গভর্নর ও বিএসইসির শীর্ষ ব্যক্তিরা। তবে এবারই প্রথম বিএসইসির কোনো অনুষ্ঠানে গভর্নর সশরীর বিএসইসি কার্যালয়ে উপস্থিত হতে যাচ্ছেন।

গভর্নর বিএসইসি কার্যালয়ে যাবেন এমন খবরে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও একধরনের উৎসাহ ও কৌতূহল তৈরি হয়েছে। কারণ, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ২০১০ সালের পর থেকে এমন ধারণা তৈরি হয়েছে, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যকার সম্পর্ক অত্যন্ত ‘বৈরিতার’। এ জন্য বিভিন্ন সময়ে শেয়ারবাজারের দরপতন ঘটলে বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশ ব্যাংকবিরোধী নানা স্লোগান ও সমাবেশও করেছে। এমনকি ২০১০ সালে শেয়ারবাজার ধসের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে বিক্ষোভও করেছেন বিনিয়োগকারীরা। এরপর থেকে দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার মতপার্থক্য নিয়ে বিনিয়োগকারীরা ছিলেন উদ্বেগ–উৎকণ্ঠায়। কিন্তু সেই সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করে বর্তমান গভর্নর হিসেবে আব্দুর রউফ তালুকদারের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে।

এ বিষয়ে বিএসইসির মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, নতুন গভর্নরের নেতৃত্বে বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে সমন্বয় আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেড়েছে। তিনি দায়িত্ব নিয়ে পুঁজিবাজারের দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত কিছু সমস্যার সমাধান করেছেন। যার ইতিবাচক প্রভাব বাজারে দেখা গেছে। একই ভাবে প্রথম বারের মতো বিনিয়োগকারী সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন। তাঁর এ উপস্থিতি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা বাড়ানোর পাশাপাশি পুঁজিবাজার–সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মধ্যে উদ্দীপনা বাড়বে বলে আমরা মনে করছি।

গত জুলাইয়ে গভর্নর হিসেবে যোগদানের পর আগস্টের শুরুতে আব্দুর রউফ তালুকদার শেয়ারবাজার–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ করেন। পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা বা এক্সপোজার লিমিটের হিসাব শেয়ারের ক্রয়মূল্যের ভিত্তিতে করার নির্দেশনা জারি করেন। ২০১০ সালে শেয়ারবাজার ধসের পর থেকে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ব্যাংকের বিনিয়োগসীমার হিসাব শেয়ারের ক্রয়মূল্যের ভিত্তিতে করার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু এক যুগেরও বেশি সময় সেই দাবি অপূর্ণ থেকে যায়। আব্দুর রউফ তালুকদার দায়িত্ব নিয়ে সেই দাবি পূরণ করেন। এরপর পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শেয়ারবাজার নিয়ে পুঞ্জীভূত আরও কিছু সমস্যার সমাধানে উদ্যোগ নেন। এর মধ্য দিয়ে বিএসইসি ও বাংলাদেশ ব্যাংক—এই দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার সম্পর্ক নতুন এক মাত্রা পেতে শুরু করে।

তারই অংশ হিসেবে গভর্নর প্রথম বারের মতো বিএসইসি কার্যালয়ে যাচ্ছেন বলে মনে করছেন বিনিয়োগকারী ও শেয়ারবাজার–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁরা বলছেন, গভর্নরের এ সফর বিনিয়োগকারীদের জন্য উৎসাহব্যঞ্জক। তাঁর এ উপস্থিতি বাজারে ইতিবাচক বার্তা দেবে। বিএসইসিও মনে করে, গভর্নরের উপস্থিতি শেয়ারবাজারের জন্য ইতিবাচক।

জানতে চাইলে ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি রিচার্ড ডি’রোজারিও প্রথম আলোকে বলেন, ‘বর্তমান গভর্নরের দায়িত্ব গ্রহণের পর আমরা দেখছি দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার পারস্পরিক সম্পর্কের বেশ উন্নতি হচ্ছে। এরই মধ্যে পুঁজিবাজার–সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু সমস্যার সমাধান করেছেন বর্তমান গভর্নর। আমরা মনে করি, পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতার স্বার্থে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেই হিসাবে দুই সংস্থার মধ্যে যত বেশি সমন্বয় ও সম্পর্কের উন্নতি হবে তা বাজারের জন্য ততই ইতিবাচক।’